নিরাপত্তার কারণে তড়িঘড়ি রুট বদলাল মার্কিন বিদেশসচিব হিলারি ক্নিন্টনের ২১টি গাড়ির কনভয়। তাঁর কনভয় উল্টোমুখী ওয়ান ওয়ে-তে পৌঁছনোর আগে ওই রাস্তা যানবাহন এবং লোকমুক্ত করতে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করতে হল পুলিশকে। কারণ কলকাতা সফর-শেষে সোমবার দুপুরে মহাকরণ ছাড়ার পরে যে দু’টি ওয়ান ওয়ে রাস্তা, লালবাজার স্ট্রিট এবং বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিট ধরে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে পড়ল হিলারির কনভয়, সেখানে ১৫ মিনিট আগেও পুলিশই ছিল না। তাই ঝড়ের গতিতে লালবাজার থেকে রিজার্ভড বাহিনী এবং ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অন্যান্য কর্মীকে এনে ওই রাস্তা ‘নিরাপদ’ করতে দৌড়োদৌড়ি করতে হয় পুলিশকর্মীদের।
কী কারণে এই রুট বদল?
কলকাতা পুলিশ জানায়, এ দিন সকাল সওয়া এগারোটা নাগাদ রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডে বেকার হস্টেলের সামনে একটি ছাত্র সংগঠনের কয়েকশো সমর্থক জড়ো হয়ে বিভিন্ন মার্কিন নীতির প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। পৌনে বারোটা নাগাদ পুলিশ ২৬ জন মহিলা-সহ মোট ১৪৮ জনকে গ্রেফতার করে। লালবাজার একটি সূত্রে খবর পায়, পুলিশ বিক্ষোভকারীদের উপরে লাঠিচার্জ করেছে বলে রটেছে এবং বিক্ষোভকারীদের একাংশ ধর্মতলায় জড়ো হওয়ার চেষ্টা করছে। হিলারি ক্লিন্টনের কনভয় যাওয়ার কথা ছিল ধমর্তলার ওই জায়গার সামনে দিয়েই। |
রাজপথে শহরের ‘ভিভিআইপি’ অতিথি। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র |
মহাকরণ চত্বরে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা লালবাজার কন্ট্রোল রুম মারফত প্রথম ওই ঘটনার কথা জানতে পারেন। সঙ্গে সঙ্গেই ওই চত্বর ছেড়ে রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডের উদ্দেশে রওনা হন ডিসি (সেন্ট্রাল)। পৌঁছন ডিসি (সাউথ)-ও। রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডের গোলমালের রেশ চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে হিলারির ‘লাইন অফ রুট’-এ এসে পড়তে পারে এই আশঙ্কায় বেলা পৌনে বারোটা নাগাদ কনভয়ের রুট-বদলের সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশ। বেলা বারোটা নাগাদ মহাকরণ ছেড়ে বেরোনোর কথা ছিল হিলারির।
বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিট ধরে রাত ন’টা থেকে সকাল ছ’টা পর্যন্ত সময়টুকু বাদ দিয়ে বাকি সময়ে পূর্ব থেকে পশ্চিমমুখী (ওয়ান ওয়ে) গাড়ি চলে। তড়িঘড়ি লালবাজার স্ট্রিট ও বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিট যান ও লোকমুক্ত করার বার্তা পৌঁছয়। আমহার্স্ট স্ট্রিট-বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিটের সংযোগস্থলে ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া থেকে লালবাজারের দিকে ‘নো এন্ট্রি’ জারি হয়। যে সব যানবাহন তখনও লালবাজার স্ট্রিট ও বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিটে দাঁড়িয়ে, সেগুলিকে আশপাশের রাস্তায় সরানো হয়। এমনকী রেকার দিয়ে তুলতে হয় বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট-বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিটের মোড় ও আশপাশে দাঁড়ানো পুলিশের গাড়িগুলিকেও। এই সব ব্যবস্থা করতে গিয়ে মার্কিন বিদেশ সচিবের মহাকরণ ছাড়ার সময় দশ মিনিট পিছিয়ে দিতে হয় পুলিশকে। এ দিন হিলারি মহাকরণ থেকে রওনা হন ১২টা ১০ মিনিটে।
নিরাপত্তার কারণে যে কোনও সময়ে যে কোনও ‘ভিভিআইপি’-র কনভয়ের রুটই বদলানো যায় বলে পুলিশের দাবি। শুধু তা-ই নয়, কয়েকটি আপৎকালীন রুটেরও বন্দোবস্ত করে রাখে পুলিশ।
কী রুট-বদল হল এ দিন? ট্রাফিক পুলিশ জানায়: কথা ছিল, বিবাদী বাগ (নর্থ) অর্থাৎ মহাকরণের সামনের রাস্তা ছেড়ে ডান দিকে ঘুরে বিবাদী বাগ (ইস্ট), ওল্ড কোর্ট হাউস স্ট্রিট, গভর্নমেন্ট প্লেস (ইস্ট), এসপ্ল্যানেড রো (ইস্ট) হয়ে বাঁ দিকে ঘুরে কনভয় চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে পড়বে। তার বদলে বিবাদী বাগ নর্থ (মহাকরণের সামনের রাস্তা) থেকে ডান দিকে না ঘুরে হিলারির কনভয় সোজা লালবাজার স্ট্রিট, বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিট হয়ে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে পড়ে। তার পরে গিরিশ পার্ক মোড় থেকে ডান দিকে বিবেকানন্দ রোড, মানিকতলা মেন রোড, সিআইটি রোড, বাইপাস, চিংড়িঘাটা মোড়, মেজর আর্টারিয়াল রোড হয়ে বিমানবন্দরে পৌঁছয়। |