চেখে দেখলেন কাঁচাগোল্লা-পারিজাত
রাজনৈতিক পরিচয়ের বাইরে যে তাঁর একটি ‘শিল্পী-সত্তা’ রয়েছে, তা বোঝাতেই নিজের আঁকা ছবি মার্কিন বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টনকে উপহার দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রত্যুত্তরে হিলারিও বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিলেন, মুখ্যমন্ত্রীকে তিনি দিলেন বন্ধুত্বের মার্কিন প্রতীক ‘ফিগ লিফ।’ ১৯টি পাপড়ি সংবলিত ব্রোঞ্জের স্মারকটি মোড়া ছিল নীল বাক্সে। উপরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতীক। ভিতরে স্মারকের সঙ্গে কার্ডে লেখা ‘হার এক্সেলেন্সি মমতা ব্যানার্জি, চিফ মিনিস্টার অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল।’
সোমবার বৈঠকের সূচনায় হিলারিকে কাঁথাস্টিচের উত্তরীয় পরিয়ে দিয়ে স্বাগত জানান মমতা। অন্য মার্কিন প্রতিনিধিদের উত্তরীয় পরান অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। আর মমতার হাতে হিলারি তুলে দেন রবীন্দ্রনাথের ছবি আঁকা একটি সিল্কের আসন, যার চার পাশে লেখা ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে।’ রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলি-গীতবিতানের ইংরেজি অনুবাদ এবং রামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দকে নিয়ে লেখা দু’টি বইও মমতা উপহার দিয়েছেন মার্কিন অতিথিকে।
বৈঠক শেষে, মহাকরণে। সোমবার অশোক মজুমদারের তোলা ছবি।
মুখ্যমন্ত্রী পরে বলেন, এ দিনের বৈঠকের ক্ষেত্র অনেক আগেই প্রস্তুত করে রেখেছিলেন হিলারি। মমতা জানান, বাংলা নববর্ষে তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়ে হিলারি মার্কিন মুলুক থেকে এসএমএস পাঠিয়েছিলেন। মমতাকে তিনি এ-ও বলেছেন, “ভেবেছিলাম, টাইম ম্যাগাজিনের অনুষ্ঠানে আসবেন। সেখানেই দেখা হবে।” মহাকরণ-সূত্রের খবর, এ দিনের বৈঠকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলার ফাঁকে ব্যক্তিগত আলোচনাও হয়েছে দু’জনে। “ওঁর মাধ্যমে আমি চেলসিকেও (বিল ও হিলারি ক্লিন্টনের মেয়ে) শুভেচ্ছা জানিয়েছি” বলেন মমতা।
কথাবার্তার ফাঁকে রসনাতৃপ্তির আয়োজনও বাদ যায়নি। বৈঠকে ছিল বঙ্গীয় ও পশ্চিমি মিশেলে বেশ কিছু হাল্কা খাবার। পানীয়ের মধ্যে দার্জিলিঙের চা ও কোক। আর বড় ট্রে’তে সাজানো দু’রকম মিষ্টি, চার রকম কুকিজ, রোস্টেড কাজু। মিষ্টির মধ্যে উত্তর কলকাতার এক প্রসিদ্ধ দোকানের কাঁচাগোল্লা ও পারিজাত সন্দেশ দেওয়া হয়েছিল কলাপাতায়। অন্য কিছু মিষ্টি ও নোনতা কুকিজ আনা হয়েছিল মধ্য কলকাতার এক হোটেল থেকে। মহাকরণ-সূত্রের খবর: কোক আর চা দু’টোই নিয়েছেন হিলারি। সঙ্গে দু’-চারটে কাজু। কাঁচাগোল্লা ও পারিজাত সন্দেশও চেখে দেখেছেন।
এ দিনের বৈঠকে রাজ্য প্রশাসনের তরফে মুখ্যমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী ছাড়া ছিলেন মুখ্যসচিব সমর ঘোষ, স্বরাষ্ট্র-সচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় ও মুখ্যমন্ত্রীর সচিব গৌতম সান্যাল। হিলারির সঙ্গে ছিলেন মার্কিন বিদেশ দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি রবার্ট ব্লেক, ভারতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি পাওয়েল, কলকাতায় মার্কিন কনসাল জেনারেল ডিন টমসন। আর ছিলেন বিদেশসচিবের মুখপাত্র ভিক্টোরিয়া নিউল্যান্ড, মার্কিন এনার্জি অফিসার জেসন ডোনোভান ও মার্কিন বিদেশ দফতরের পলিসি প্ল্যানিং অফিসের ডিরেক্টর জেক সুলিভান।
এ দিন ভোর থেকে মহাকরণ চত্বর ‘নিশ্ছিদ্র’ নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছিল। মহাকরণের সামনে-পিছনের রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয় সাতসকালেই। সওয়া ন’টার পরে রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা মহাকরণে পৌঁছতে থাকেন। একে একে আসেন অর্থমন্ত্রী, সমবায়মন্ত্রী হায়দার আজিজ সফি, আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক, পূর্তমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষদস্তিদার ও শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। হিলারি আসার ঠিক পরে ঢোকেন উদ্বাস্তু পুনর্বাসন দফতরের মন্ত্রী মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর। এঁদের সকলকে ঢুকতে হয়েছে পূর্ব নির্ধারিত ছ’নম্বর গেট দিয়ে।
সকাল ১০টা ১৬ মিনিটে মহাকরণে আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরনে নীলপাড় সুতির শাড়ি, পায়ে হাওয়াই চপ্পল। ১১টা ৩ মিনিটে ঢোকেন মার্কিন বিদেশসচিব, পরনে নীল ব্লেজার ও কালো ট্রাউজার্স। হেঁঁটেই তিনি দোতলায় ওঠেন। সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশের মুখে তাঁর জন্য অপেক্ষা করছিলেন মমতা। মার্কিন বিদেশসচিবকে সেখানেই অভ্যর্থনা জানান তিনি । বারান্দায় রবীন্দ্রনাথের ছবির সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দু’জনে ঢুকে পড়েন কনফারেন্স রুমে। প্রায় পঞ্চাশ মিনিটের বৈঠক শেষে অতিথিকে বিদায় জানাতে সেন্ট্রাল গেট পর্যন্ত নেমে আসেন মমতা।
হিলারিকে বিশেষ ভাবে আর কী বললেন?
মমতার জবাব, “হোয়্যার দ্য মাইন্ড ইজ উইদাউট ফিয়ার, অ্যান্ড দি হেড ইজ হেল্ড হাই...।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.