লোকসানে চলতে থাকা রায়গঞ্জের ‘স্পিনিং মিল’ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। মিলটি রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরের আওতায় রয়েছে। সোমবার রায়গঞ্জ সার্কিট হাউসে রাজ্যের রেশম শিল্প দফতরের অতিরিক্ত অধিকর্তা বিজয়কুমার মুখোপাধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে ওই মিলটি বন্ধ করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন।
বিজয়বাবু বলেন, “মিল কর্তৃপক্ষ তুলো সরবরাহকারী সংস্থার বকেয়া টাকা মেটাতে পারেননি। তাই তুলো সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। প্রায় এক বছর ধরে মিলে সুতো তৈরির কাজও বন্ধ। সরকার ভর্তুকি দেওয়ার পরেও মিলটি প্রচুর লোকসানে চলছে। মিলটি তাই বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” ওই মিলের জায়গায় কী হবে তা নিয়ে সরকার চিন্তাভাবনা করছে বলে তিনি জানান। বর্তমানে মিলে স্থায়ী কর্মী-অফিসারের সংখ্যা ৫২৪। অস্থায়ী চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক রয়েছেন ১৭৯ জন। তাঁদের কী হবে? রেশম শিল্প দফতরের অতিরিক্ত অধিকর্তা বলেন, “স্থায়ী কর্মী-অফিসারদের স্বেচ্ছাবসর প্রকল্পের সুবিধা দেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে আলোচনার পরে স্বেচ্ছাবসরের প্যাকেজ চূড়ান্ত হবে।” ১৯৮৫ সালে মিলটি চালু হয়। প্রথম দিকে লাভেই চলছিল। কিন্তু পরে বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ক্রমশ পিছিয়ে পড়ে সংস্থাটি। সম্প্রতি মিলের উৎপাদন ব্যবস্থা স্বাভাবিক করার দাবিতে আন্দোলনে নামে মিলের ডান-বাম ৬টি শ্রমিক সংগঠন ও এক অফিসারদের সংগঠনের সদস্যেরা। আন্দোলনকারীরা শ্রমিক-কর্মচারী ইউনাইটেড ফোরাম গঠন করে আন্দোলন শুরু করেন।
ফোরামের মুখপাত্র তথা সিটু নেতা নারায়ণচন্দ্র দেব বলেন, “রাজ্যের কাছে কারখানা চালু রাখার আর্জি জানাব। তবে কর্মীদের স্বেচ্ছাবসর দিয়ে মিল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত সরকারি ভাবে জানানো হয়নি। জানানো হলে কী আর্থিক সুবিধা দেওয়া হবে, তা দেখে ব্যবস্থা নেব।” ফোরামের যুগ্ম মুখপাত্র তথা আইএনটিইউসি নেতা অনিলচন্দ্র সরকার বলেন, “কর্মীদের চাকরির শেষ দিন পর্যন্ত বেতন ও সব সরকারি আর্থিক সুবিধা দিয়ে স্বেচ্ছাবসর দেওয়া হলে আপত্তি নেই।” সরকারি সূত্রের খবর, কেন্দ্র নিয়ন্ত্রিত দিল্লির কটন কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া ও রাজ্য নিয়ন্ত্রিত পূর্ব মেদিনীপুরের তাম্রলিপ্ত কো-অপারেটিভ স্পিনিং মিল নামে দু’টি সংস্থা ওই মিলে তুলো সরবরাহ করে। প্রায় ১০ মাস ধরে ওই দু’টি সংস্থার প্রাপ্য মেটানো হয়নি। বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ৮ কোটি। মিল সূত্রের খবর, লোকসানে চলার কারণে তুলোর দাম মেটানো যায়নি। তাই গত বছরের এপ্রিল মাস থেকে ওই দুই সংস্থা তুলো পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে। এর পরেও রায়গঞ্জের বিধায়ক তথা মিলের চেয়ারম্যান মোহিত সেনগুপ্তের উদ্যোগে ২০১২-র মার্চ পর্যন্ত মিলের কর্মীরা মাইনে পেয়েছেন। বর্তমানে পদাধিকার বলে বিজয়বাবু মিলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর। তাঁর কথায়, “মিলের যন্ত্রাংশ মেরামত করা দরকার। তাতে ২৬ কোটি টাকার প্রয়োজন। সব দিক বিচার করে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” |