প্রত্যাশিত ভাবেই নলহাটি পুরসভায় জোট কার্যত ভেস্তে যেতে বসেছে শাসক দলের দুই শরিকের মধ্যে। সোমবার রামপুরহাট মহকুমা প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে নলহাটি পুরসভার ১৫টি ওয়ার্ডের জন্যই মনোনয়নপত্র জমা দেন কংগ্রেস প্রার্থীরা। তৃণমূল আগেই ১৫টি ওয়ার্ডে প্রার্থী দিয়েছে। ফলে জোট প্রক্রিয়ার সম্ভাবনা আপাতদৃষ্টিতে দূর অস্ত। ১১ মে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ না পেরনো পর্যন্ত অবশ্য জোট বা আসন সমঝোতার ব্যাপারে চূড়ান্ত ভাবে কিছু বোঝা সম্ভব নয়।
আপাতত কংগ্রেস-তৃণমূল পরস্পরের বিরুদ্ধে তোপ দাগতেই ব্যস্ত। দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল কংগ্রেসকে কটাক্ষ করে বলেছিলেন, “প্রণববাবুর ছেলে, নলহাটির কংগ্রেস বিধায়ক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় যদি আমাদের দলের পুরপ্রধান, সাংসদ, মন্ত্রী বা জেলা চেয়ারম্যানকে জোটের কথা বলতেন, তা হলে দু’তিনটে আসন হয়তো ছেড়ে দিতাম!” কংগ্রেস নেতৃত্বের পাল্টা বক্তব্য ছিল, কারও ‘ভিক্ষার দান’ নিয়ে তাঁরা পুরভোটে লড়বেন না। |
তৃণমূল নেতার ওই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এ দিন অভিজিৎবাবু বলেন, “এই পুরসভা জন্মলগ্ন থেকেই কংগ্রেসের দখলে। যদি কেউ বলে থাকেন, প্রণব-পুত্র বলে কংগ্রেসকে দু-তিনটে ওয়ার্ড দেবেন, সেটা তাঁরা তাঁদের কথা বলেছেন। ৮ কাউন্সিলর চলে যাওয়ার পরেও তো আমাদের ৩ কাউন্সিলর আছেন। সেখানে আরও দুই বা তিনটি আসন কেন নিতে যাব?” তাঁর আরও দাবি, “এলাকার মানুষ চান, কংগ্রেসের হৃতগৌরব ফিরে আসুক।” তাঁদের ইচ্ছার মর্যাদা দিতে এবং প্রদেশ নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কংগ্রেস নলহাটিতে একা লড়াই করছে বলেও দাবি অভিজিৎবাবুর।
১৫টি ওয়ার্ডেই মনোনয়ন জমা দেওয়া প্রসঙ্গে জেলা কংগ্রেস সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি জানিয়েছেন, অন্য রাজনৈতিক দলগুলির পাশাপাশি তৃণমূলের সঙ্গেও এ বার কংগ্রেসের মুখোমুখি লড়াই হবে। তাঁর আরও অভিযোগ, “নলহাটি পুরসভায় টনের পর টন পাইপ চুরি হয়েছে। দুর্নীতির প্রতিবাদ করে বিশ্বাসঘাতকদের শাস্তি দেবেন নলহাটির মানুষ।” কংগ্রেসের প্রার্থী তালিকায় গতবারের বিজয়ী কাউন্সিলর, প্রাক্তন পুরপ্রধান আয়নাল হুদা আহমেদ এবং প্রাক্তন উপপুরপ্রধান প্রকাশ প্রসাদ বাদে বাকি সবাই কার্যত নতুন মুখ। তৃণমূলের সঙ্গে জোট যদি শেষ পর্যন্ত না হয়, তা হলে কংগ্রেস ‘মর্যাদার লড়াই’-এ জিতবে না হারবে, এই পুরনির্বাচনে সেটাই দেখার।
অন্য দিকে, প্রার্থী দেওয়া নিয়ে বামফ্রন্টের শরিকি দ্বন্দ্ব আরও বেড়েছে। এ দিন ৮ নম্বর ওয়ার্ডে মনোনয়নপত্র জমা দেন ফরওয়ার্ড ব্লকের হিরালাল বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ বামফ্রন্টের তরফে ওই ওয়ার্ডে আগেই সমাজবাদী পার্টির প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। আবার ৭ ও ১১ নম্বর ওয়ার্ডে যথাক্রমে সিপিআই এবং সিপিএম প্রার্থী থাকলেও সেখানে মনোনয়ন দিয়েছে সমাজবাদী পার্টি। শরিকি বিবাদ মেটাতে এ দিন বীরভূম জেলা বামফ্রন্ট সিউড়িতে বৈঠক ডেকেছিল। তাতেও সমস্যা না মেটায় রাজ্য নেতৃত্বের উপরে চড়ান্ত সিদ্ধান্তের ভার দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, মোট ৬৮ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
|