ফের ঘোরতর রাজনৈতিক সঙ্কট গ্রিসে। দেশ জুড়ে গত কয়েক মাস ধরে চলা ব্যয়সঙ্কোচের প্রভাব এ বার পুরোপুরি পড়েছে নির্বাচনী ফলাফলের উপর। ফল বেরোনোর পরে দেখা যাচ্ছে, গ্রিসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে সব ক’টি দল। এমনকী দীর্ঘদিন ধরে জোটে থাকা দুই দল নিউ ডেমোক্র্যাসি আর পাসক-ও (প্যানহেলেনিক সোশ্যালিস্ট মুভমেন্ট) গত বারের তুলনায় ভোট পেয়েছে অনেকটা কম। এই দু’দলের জোটই মূলত গ্রিসে ব্যয়সঙ্কোচ নীতি চালু করার সমর্থক ছিল। আর তার প্রভাব ব্যালট বাক্সের দৌলতে এর মধ্যেই টের পেয়েছে তারা। যার ফল, অনিশ্চিত গ্রিসের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ।
৩০০ আসনের পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে গেলে কমপক্ষে ১৫১টি আসন পাওয়া জরুরি। আর এ বারের নির্বাচনে এই কাজটা কোনও দলই করে উঠতে পারেনি। রক্ষণশীল নিউ ডেমোক্র্যাসি পেয়েছে ১৮.৮৫% ভোট (১০৮টি আসন)। আর পাসক পেয়েছে মাত্র ১৩.১৮% ভোট (আসন সংখ্যা ৪১)। ফলে ওই দুই দলের ঝুলিতে আপাতত ১৪৯টি আসন।
তবে ফল যতই খারাপ হোক সব ক’টি দলের মধ্যে নিউ ডেমোক্র্যাসিই আসন সংখ্যার দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে। বামেদের জোট রয়েছে তার পরে। এই বাম জোট কিন্তু ব্যয়সঙ্কোচ নীতির বিরোধিতা করে এসেছে বরাবর। ফলে এ বারের নির্বাচনে তাদের ফল যে তুলনামূলক ভাল হবে, তা বলাই বাহুল্য। তৃতীয় স্থানে রয়েছে পাসক।
হিসেব মতো জোট সরকার গঠনে সবার আগে সুযোগ পাবে নিউ ডেমোক্র্যাসিই। তারা ব্যর্থ হলে সুযোগ যাবে বাম জোটের কাছে। বাম নেতা অ্যালেক্সিস টিপ্রাসই এই নির্বাচনে সব চেয়ে বেশি লাভবান হয়েছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবির। তবে সরকারের ব্যয়সঙ্কোচ নীতির বিরোধিতা করে দেশে সর্বাঙ্গীন বাম জোট গড়ে তোলা অ্যালেক্সিসের পক্ষেও খুব একটা সহজ হবে না। আর যদি তাই হয়, তা হলে তৃতীয় সুযোগ মিলবে পাসকের। আর সেখানেও জোট না হলে, নতুন করে নির্বাচন হবে গ্রিসে।
ফলে সব মিলিয়ে দেশের পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল। নিউ ডেমোক্র্যাসির নেতা অ্যান্টনিও সামারাসের কথায়, “আমি জানি মানুষের রাগটা কোথায়। কিন্তু দেশকে তো একটা সরকার ছাড়া রাখা যায় না। আমাদের দল জোট সরকার গড়লে ব্যয়সঙ্কোচ নীতিতে যে পরিবর্তন আনা হবে, তা নিশ্চিত করেই বলতে পারি।” আসলে এই ব্যয়সঙ্কোচ নীতিই যে এ বারের নির্বাচনের সব হিসেব ওলটপালট করে দিয়েছে, তা এক বাক্যে মেনে নিয়েছেন সব নেতাই। আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের (আইএমএফ) থেকে আর্থিক সুযোগ পেতে এই নীতি চালু করতে একরকম বাধ্য হয়েছিলেন জোট সরকারের নেতারা। আর সেটাই ভোটে ‘বুমেরাং’ হয়ে ফিরে এসেছে। আপাতত সব দলেরই দু’টো লক্ষ্য। এক, ইউরোজোনের মধ্যে গ্রিসকে টিকিয়ে রাখা। আর দ্বিতীয়ত, অত্যধিক ব্যয়সঙ্কোচের ভারে নুইয়ে পড়া দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা। কাজটা কোনও দলের পক্ষেই যে ততটা সহজ নয়, মানছেন সবাই। |