ফের সমাজতন্ত্রেই আস্থা ফরাসিদের,
সঙ্কটমুক্তির পথ নিয়ে ধন্দে ইউরোপ
রিবর্তনের পথেই পা বাড়াল প্যারিস।
দক্ষিণপন্থী নিকোলাস সারকোজিকে হারিয়ে ১৭ বছর পর বাম উদারপন্থীদের দখলে এল ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের মসনদ। ৫২ শতাংশ নাগরিকের সমর্থন পেয়ে সোশ্যালিস্ট পার্টির প্রবীণ নেতা ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ ফরাসি প্রেসিডেন্ট হতে চলেছেন এমনই এক সময়ে, যখন প্রবল আর্থিক সঙ্কটে ধুঁকছে ইউরোপ। ফলে ইউরোপের আর্থিক নীতি নিয়ন্ত্রকদের অন্যতম ফ্রান্স এ বার কোন পথে হাঁটবে, তার উপরেই অনেকটা নির্ভর করছে ইউরোপের অর্থনীতি তথা শক্তিসাম্যের ভবিষ্যৎ সমীকরণ। ওলাঁদ জয়ের পরে জানান, বর্তমান আর্থিক নীতি ভুলে তিনি ফ্রান্সকে দ্রুত ‘উন্নয়নের’ পথে আনতে চান। তার জন্য প্রথমেই বড়সড় কোপ পড়বে সারকোজির বরাদ্দ কমিয়ে খরচ বাঁচানোর নীতির উপর।
জয়ের পর ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ। সোমবার। ছবি: এ এফ পি।
ইউরোপ জুড়ে চলা সাম্প্রতিক আর্থিক সঙ্কট ছাড় দেয়নি ফ্রান্সকেও। ফলে সেখানেও প্রবল কাটছাঁট চলেছে জাতীয় বাজেটে। চরমে পৌঁছেছে বেকারত্ব। এর মধ্যেই গত মার্চে ইউরোপীয় ইউনিয়নে সারকোজি এবং জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মর্কেল সঙ্কটমুক্তির জন্য সব দেশেই ব্যয়সঙ্কোচের যৌথ প্রস্তাব পাশ করান। এই পরিস্থিতিতে যুবসমাজ তো বটেই, প্রবীণ ফরাসিরাও আস্থা হারাতে শুরু করেন প্রেসিডেন্ট সারকোজির উপর থেকে। বাড়ছিল ক্ষোভও। কারণ খরচ বাঁচিয়ে সঙ্কটমুক্তির তত্ত্বের অন্যতম পুরোধা যে সারকোজিই। তা ছাড়া তাঁর বিলাসবহুল ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে হাজারো বিতর্ক তো ছিলই। রবিবার ব্যালটে সেই ক্ষোভই উগরে দিলেন বেশিরভাগ ফরাসি নাগরিক।
১৯৯৫ সালে ফ্রাঁসোয়া মিতেরঁ ক্ষমতা ছাড়ার পর এই প্রথম সোশ্যালিস্ট পার্টির কোনও নেতা ফরাসি প্রেসিডেন্ট হতে চলেছেন। অন্য দিকে ১৯৮১ সালের পর সারকোজিই ফ্রান্সের প্রথম প্রেসিডেন্ট যিনি দ্বিতীয় বার মসনদ দখল করতে ব্যর্থ হলেন। তবে সারকোজির পরাজয় কিছুটা প্রত্যাশিত ছিল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। কারণ আর্থিক সঙ্কটের জেরে সারকোজি ছাড়াও ইউরোপের অন্তত ১০ জন রাষ্ট্রপ্রধান ক্ষমতা খুইয়েছেন। সারকোজি নির্বাচনের প্রথম পর্বেও পিছিয়ে ছিলেন। সোমবার গ্রিসের নির্বাচনেও ত্রিশঙ্কু ফলাফল প্রশ্ন তুলে দিয়েছে সে দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে।
তবে আশঙ্কা নয়, আশাতেই আপাতত বুক বেঁধেছে ফ্রান্স। ওলাঁদ জয়ের পরে বলেছেন, “আমি ফ্রান্সের যুব সমাজের প্রেসিডেন্ট। গোটা ইউরোপ আমাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। শুধু খরচ কমিয়েই সঙ্কটমুক্তি ঘটবে না।” প্যারিসে বাস্তিল দুর্গের কাছে ওলাঁদের সমর্থনে জড়ো হওয়া হাজার হাজার মানুষের মধ্যে কিন্তু প্রবীণের সংখ্যাটাও নেহাত কম নয়। ওলাঁদ সেখানে জানিয়ে দিয়েছেন, বিত্তশালী এবং বড় বড় সংস্থাগুলির থেকে বেশি কর আদায় করা হবে। একই সঙ্গে বাড়ানো হবে ন্যূনতম বেতন। বেকারত্ব দূর করার আশা জাগিয়ে ওলাঁদ জানিয়েছেন, প্রায় ৬০ হাজার নতুন শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। যুবাদের কাজের সুযোগ বাড়াতে অবসরের বয়স ৬২ থেকে কমিয়ে ৬০ করতে চেয়েছেন ওলাঁদ। দেশকে পঙ্গু করে নয়, বরং যুবসমাজকে সক্রিয় করেই আরও একটা ফরাসি বিপ্লবের স্বপ্ন দেখাতে চাইছেন তিনি। ভোটে জেতার পরেই ফোন করে ওলাঁদকে শুভেচ্ছা জানান আঙ্গেলা মর্কেল। তাঁকে বার্লিনে আমন্ত্রণও জানান। সেই প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন এই বাম উদারনীতিবাদী নেতা। শুভেচ্ছা এসেছে ব্রিটেন, চিন থেকেও। প্রত্যেকেই জানাচ্ছেন, ওলাঁদের হাত ধরে ফ্রান্স তথা গোটা ইউরোপ ঘুরে দাঁড়াবে বলেই তাঁদের আশা। তা কতটা পূর্ণতা পাবে, সেই উত্তরের অপেক্ষায় সব মহলই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.