শিক্ষিকাদের পোশাক নিয়ে ফের ‘ফতোয়া’ স্কুলের।
হাওড়ার শ্যামপুর কিংবা হুগলির সিঙ্গুরের পরে স্কুল চত্বরে শিক্ষিকাদের সালোয়ার কামিজ পড়া নিয়ে এ বার ফরমান জারি করেছে মালদহের হবিবপুরের আইহো বালিকা বিদ্যালয়।
তন্দ্রা বর্মন নামে যে শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি হয়েছে, গত দশ বছর ধরেই তিনি স্কুলে সালোয়ার পরে আসছেন। অথচ হঠাৎই নতুন করে আপত্তি তোলা হয়। শিক্ষিকার দাবি, সালোয়ার পড়ে এলে ‘শাস্তি’ পেতে হবে বলে স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁকে জানিয়ে দিয়েছেন। ‘ফরমান’ জারিতে মূল অভিযুক্ত স্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদক তথা স্থানীয় তৃণমূল নেতা সুশান্ত সাহা। তাঁর দাবি, “ছাত্রী ও অভিভাবকদের অনেকেরই ওই শিক্ষিকার সালোয়ার-কামিজ পরা নিয়ে আপত্তি রয়েছে।” তবে তাঁরই দলের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রের মতে, “স্কুল পরিচালন সমিতি বাড়াবাড়ি করছে। চাইলে কেউ সালোয়ার-কামিজ পরতেই পারেন।” মালদহের কংগ্রেস সাংসদ মৌসম বেনজির নূরও মনে করছেন, স্কুলের আপত্তি ‘অনাবশ্যক’।
বছর দশেক আগে ওই স্কুলে অঙ্ক শিক্ষিকার পদে যোগ দেন বাঁ-হাতি তন্দ্রাদেবী। তিনি জানিয়েছেন, বোর্ডে লেখার সময়ে শাড়ি সামলাতে তাঁর ‘অসুবিধা’ হয়। স্কুলে যোগ দেওয়ার সময়েই সে কথা জানিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে সালোয়ার কামিজ পরার আগাম অনুমতি নিয়েছিলেন। এত দিন কেউ আপত্তিও করেননি।
নতুন করে আপত্তি কেন? সুশান্তবাবুর দাবি, “ছাত্রী ও অভিভাবকদের একাংশ এতে আপত্তি জানিয়েছেন। স্কুলে ৩০ জন শিক্ষিকা। বাকিরা সকলেই শাড়ি পড়ে আসেন। সে কথাই ওঁকে জানানো হয়েছিল। শুনে তিনি চেঁচেমেচি জুড়ে দেন।” তন্দ্রাদেবী অবশ্য বলেন, “আমি সভায় উপস্থিত সকলকে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করি, বাঁ হাতি হওয়ায় শাড়ি পড়ে ক্লাস নিতে আমার অসুবিধা হয়। কিন্তু প্রধান শিক্ষিকা তাতে গুরুত্ব না দিয়ে উল্টে চাপ দিতে থাকেন। শাড়ি না-পরলে সাসপেন্ড করার হুমকিও দেওয়া হয়।”
প্রধান শিক্ষিকা শিপ্রা বসাক ভৌমিক অবশ্য তা স্বীকার করেননি। তাঁর দাবি, “কিছু ছাত্রী ও অভিভাবক সালোয়ার কামিজ পরা নিয়ে আপত্তি তোলায় আমরা ওঁকে শাড়ি পরে আসতে অনুরোধ করেছিলাম। কোনও হুমকি দেওয়া হয়নি।” সুশান্তবাবু যোগ করেন, “উনিই বরং হুমকি দেন, আমি পরিচালন কমিটিকে দেখে নেব। তাই আমরাও ওঁর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি।”
মালদহের জেলা স্কুল পরিদর্শক পার্থসারথি ঝা বলেন, “শিক্ষিকাদের কোনও নির্দিষ্ট পোশাক-বিধি নেই। নিজেদের সুবিধা মতো কেউ শাড়ি বা সালোয়ার-কামিজ পরতেই পারেন। পরিচালন সমিতি বাধা দিলে তা বেআইনি কাজ।” |