শিল্পায়নের স্বার্থেও উত্তরবঙ্গে শান্তি এবং আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখায় জোর দিল শিল্প মহল।
শনিবার শিলিগুড়ির মাল্লাগুড়িতে উত্তরবঙ্গে শিল্পায়নের সম্ভাবনা নিয়ে এক আলোচনাসভায় রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী ও বিভিন্ন বিভাগের কর্তাদের উপস্থিতিতে শিল্পপতি হর্ষবর্ধন নেওটিয়া বলেন, “(দার্জিলিং) পাহাড়ের পরিস্থিতি
|
গৌতম দেব |
আগের থেকে অনেক শান্ত হয়েছে। শিল্পায়নের স্বার্থে উত্তরবঙ্গে শান্তি ও আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে।” সভায় উপস্থিত রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবের আশ্বাস, “পাহাড়-তরাই-ডুয়ার্সের শান্তি বজায় রাখায় বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে রাজ্য সরকার।” শুধু তা-ই নয়, উত্তরবঙ্গে পর্যটন-সহ অন্যান্য শিল্পায়নের প্রক্রিয়ায় গতি আনতে তারা কতটা আগ্রহী, শিল্পোদ্যোগীদের সেই বার্তাও দেওয়া হয়েছে রাজ্যের তরফে।
গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা এবং আদিবাসী বিকাশ পরিষদের লাগাতার বন্ধ-বিক্ষোভ কর্মসূচির প্রভাব পড়েছে পাহাড় এবং লাগোয়া সমতলেও। ‘মাসুল’ দিয়েছে পর্যটন শিল্প। সেই প্রেক্ষিতে শিল্পোদ্যোগীদের তরফে শান্তি বজায় রাখার বার্তাকে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করা হচ্ছে। মোর্চার প্রচার সচিব হরকা বাহাদুর ছেত্রী অবশ্য বলেন, “উন্নয়ন, শিল্পায়ন না হলেই অশান্তি দেখা দেয়। আমরা শান্তি বজায় রাখছি। সুনির্দিষ্ট শিল্প আসুক। আমরা সাহায্য করব।” আদিবাসী বিকাশ পরিষদের নেতা রাজেশ টোপ্পো বলেন, “শিল্পের স্বার্থে পাহাড় এবং লাগোয়া সমতলে শান্তি বজায় রাখার আবেদন আমরাও করেছি রাজ্য সরকারের কাছে।”
এ দিনের সভায় রাজ্যের বিভিন্ন দফতরের মন্ত্রী-কর্তারা উত্তরবঙ্গে শিল্পায়নে উৎসাহী শিল্পোদ্যোগীদের নানা সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। গৌতম দেব ছাড়া, কৃষি বিপণনমন্ত্রী অরূপ রায়, পর্যটন দফতরের সচিব রাঘবেন্দ্র সিংহ, পুর এবং নগরোন্নয়ন দফতরের সচিব দেবাশিস সেন, তথ্য এবং প্রযুক্তি দফতরের বিশেষ সচিব সুশান্ত মজুমদার-সহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন ওই সভায়। ছিলেন শিল্পোদ্যোগীরাও।
বণিকসভা ‘ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স’-এর ডিরেক্টর জেনারেল রাজীব সিংহ এবং পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের সচিবের হাতে এ দিন গোটা উত্তরবঙ্গের উন্নয়নে বিশদ পরিকল্পনার খসড়া-প্রতিলিপি তুলে দেন মন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেন, “পর্যটনের পাশাপাশি, উত্তরবঙ্গে ফুল চাষ, তথ্য-প্রযুক্তি হাব, এডুকেশনাল হাব, হেল্থ কেয়ার হাব গড়ে তোলার বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই এলাকার উন্নয়নে সুষ্ঠু যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং পরিকাঠামো গড়ে তোলার দিকে নজর দেওয়া হয়েছে। পর্যটনের উন্নতিতে তা সহায়ক হবে।” তিনি জানান, পাহাড়ে শিল্প গড়ার ক্ষেত্রে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মতো বিশেষ কর ছাড়ের ব্যবস্থা করার চেষ্টাও হচ্ছে। পাহাড়ে বেশ কয়েকটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প হচ্ছে। তা থেকে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ পাওয়ার আশা করা হচ্ছে।
এসজেডিএ-র (শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি) চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্যের বক্তব্য, চা, পাট থেকে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, তথ্য প্রযুক্তির মতো বিভিন্ন শিল্পের সুযোগ রয়েছে উত্তরবঙ্গে। নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ এবং চিনের সঙ্গে বহির্বাণিজ্যের সম্ভাবনাও রয়েছে এই অঞ্চলে। তিনি বলেন, “শিল্পোদ্যোগীরা এগিয়ে আসুন। আমরা সমস্ত সাহায্য করতে প্রস্তুত।”
পক্ষান্তরে উত্তরবঙ্গে পর্যটন এবং অন্যান্য শিল্পায়নের ক্ষেত্রে যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ, জল সরবরাহের মতো পরিকাঠামো গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করেন শিল্পোদ্যোগী হর্ষবর্ধন নেওটিয়া। পর্যটন দফতরের সচিব রাঘবেন্দ্র সিংহ বলেন, “উত্তরবঙ্গের জন্য ‘মেগা ট্যুরিজম প্রজেক্ট’ নেওয়া হচ্ছে। ওই প্রকল্পে পর্যটনকে কেন্দ্র করে পরিকাঠামোরও অনেক উন্নতি হবে বলে আশ্বস্ত করছি।” |