গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণিভুক্ত মানুষের সংখ্যা নির্ধারণের জন্য এ বার ‘ওবিসি সুমারি’ শুরু করতে চলেছে রাজ্য সরকার। এই কাজের তদারকি করবেন জেলাশাসকেরা। রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় জানান, এত দিন ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে তফসিলি জাতি ও উপজাতি এবং মহিলাদের জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা ছিল। এ বার নতুন আইনে নির্বাচন হবে। সেখানে ওবিসি-দের জন্যও সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকছে। সে জন্যই পঞ্চায়েত এলাকাভিত্তিক ওবিসি জনসংখ্যা নির্ধারণ করতে এই গণনা হবে। ওবিসি সংরক্ষণের বিল ইতিমধ্যে রাজ্য বিধানসভায় পাশ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন সুব্রতবাবু।
পঞ্চায়েতমন্ত্রীর দাবি, “আগামী দু’মাসের মধ্যেই রাজ্যের ওবিসি সুমারির রিপোর্ট তৈরি হয়ে যাবে।” জেলাশাসকেরা এই কাজ কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, বা গ্রাম পঞ্চায়েতকে দিয়ে করাতে পারবেন।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এখন রাজ্যে ওবিসি জনগোষ্ঠী ১৪৩টি। প্রশ্ন উঠেছে, রাজ্যের প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা ধরে ধরে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির মানুষ খোঁজার মতো সময়সাপেক্ষ কাজ কী করে দু’মাসের মধ্যে শেষ করা সম্ভব? অনেকের ধারণা, নির্বাচন কমিশনের আপত্তি থাকলেও নমুনা সমীক্ষা করেই তড়িঘড়ি রিপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা হবে, যাতে আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে ওবিসি-দের জন্য সংরক্ষণ চালু হতে পারে।
ওবিসি সুমারি করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এ বিষয়ে কমিশনের মতামত জানতে চেয়েছিল পঞ্চায়েত দফতর। কমিশন তাদের জানিয়েছে, আইন অনুযায়ী তারা ওই সংরক্ষণ ব্যবস্থা কার্যকর করতে বাধ্য। তবে পঞ্চায়েত দফতরকে গ্রাম পঞ্চায়েত-ভিত্তিক ওবিসি সুমারির তথ্য দিতে হবে। এবং সেই তথ্য কোনও মতেই নমুনা সমীক্ষার ভিত্তিতে করা যাবে না। সরকারি কোনও সংস্থা বা দফতরকে দিয়েই পুরো জনসংখ্যার উপর সুমারি করতে হবে।
পাশাপাশি, রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনের আইনে কিছু সংশোধনের নির্দেশও দেয় কমিশন। সংশোধন কী ধরনের হবে, তা-ও পঞ্চায়েত দফতরকে জানিয়েছে তারা। কমিশনের বক্তব্য, সারা রাজ্য জুড়ে ওবিসি সুমারি করার মতো প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো রাজ্য নির্বাচন কমিশনের নেই। এবং ওই ধরনের সুমারি করার এক্তিয়ারও তাদের নেই। তাই সরকারকেই এই কাজ করতে হবে।
সুব্রতবাবু জানান, ওবিসি-দের সংরক্ষণের জন্য ইতিমধ্যে রাজ্য পঞ্চায়েত আইন সংশোধন করা হয়েছে। কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচন আইনে সংশোধন এখনও হয়নি। আগামী বিধানসভা অধিবেশনে এই সংক্রান্ত বিল আসবে। তিনি বলেন, “সংরক্ষণ হবে মোট আসনের ৫০ শতাংশের কম। এবং তা করতে হবে মহিলাদের জন্য ৩৩% সংরক্ষণ অক্ষুণ্ণ রেখেই।” |