মুখ্যমন্ত্রীদের ‘ট্রেড ইউনিয়ন’-এর আসরে আজ ফের মধ্যমণি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ক্ষমতায় আসার পর থেকেই কেন্দ্রের বিভিন্ন নীতির প্রশ্নে অ-কংগ্রেসি, অ-বিজেপি রাজ্যগুলির মধ্যে যোগসূত্রের কাজ করে আসছেন মমতা। কেন্দ্রের একাধিক নীতির বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীদের মধ্যে একটি ঐক্যের সুরও দেখা যাচ্ছে। যাকে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ট্রেড ইউনিয়নের ধাঁচে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের একটি জোট বলেও মনে করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের শরিক হলেও আঞ্চলিক শক্তিগুলির সূত্রধরের ভূমিকায় দেখা গিয়েছে মমতাকেই। আজও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। বৈঠকের চলাকালীন এবং বৈঠকের পরে।
রাজনৈতিক ভাবে বিজেপি বা এনডিএ-র সঙ্গে তৃণমূল এক মঞ্চে নেই। কিন্তু রাজ্যের অধিকারের প্রশ্নে মমতা জেডিইউ-এর নীতীশ কুমার বা গুজরাতের নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে খোশগল্পে মেতে উঠতে দ্বিধা করেননি। আজ পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে নীতীশের সঙ্গে তাঁর বেশ কিছুক্ষণ কথা হয়। জোট বেঁধে কেন্দ্রের উপর চাপ বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মেনে নেন দুই নেতাই। ‘পরিবর্তনে’র পর গুজরাতের বেশ কিছু ব্যবসায়ী পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগে আগ্রহী বলে আজ মমতাকে জানিয়েছেন বিজেপির নরেন্দ্র মোদীও। মমতা তাদের সমস্ত রকমের সাহায্য করা হবে বলে আশ্বাস দেন।
পরশু, সোমবার হিলারি ক্লিন্টন আসছেন কলকাতায়। তাই কলকাতায় ফেরার তাড়া ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। সকাল থেকেই তৈরি ছিল দু’টি বিমানের টিকিট। একটি দুপুর সাড়ে তিনটের। অন্যটি বিকেল সাড়ে পাঁচটার। শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় বিমানটিই ধরলেন মমতা। মধ্যহ্নভোজন সারতে গিয়েই কি বিলম্ব? অথচ তাঁকে এদিন মধ্যাহ্নভোজনের আসরে প্রায় দেখা যায়নি বললেই চলে। |
এনসিটিসি বৈঠকের ফাঁকে। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক ও তামিলনাড়ুর
মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার সঙ্গে মমতা। পিটিআই ও প্রেম সিংহের তোলা ছবি। |
বেলা তখন দেড়টা। দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে জাতীয় সন্ত্রাসদমন কেন্দ্র (এনসিটিসি) নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকের প্রথমার্ধ সবে শেষ হয়েছে। মধ্যাহ্নভোজনের টেবিলে আবিষ্কার হল, অনুপস্থিত রয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতাই হলেন ইউপিএ সরকারের একমাত্র শরিক-মুখ্যমন্ত্রী, যিনি এনসিটিসি বাতিল করার জন্য কেন্দ্রের কাছে দাবি জানিয়েছেন। মুহূর্তের মধ্যেই জল্পনার ফানুস আকাশে উঠল। রটে গেল, বিরোধিতার রাজনীতির কারণেই মধ্যাহ্নভোজ বাতিল করলেন মমতা!
তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, বিষয়টি মোটেই তা নয়। তাঁদের ব্যাখ্যা, মমতা মধ্যাহ্নভোজে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ সেরে বেরিয়ে আসেন। মমতা তাঁকে বলেন, হিলারি সোমবার কলকাতায় আসছেন। তিনি দ্রুত ফিরতে চান। তাই মধ্যাহ্নভোজনে থাকতে পারছেন না। এক তৃণমূল নেতার বক্তব্য, “তা ছাড়া মমতা সাধারণত দুপুরে বিশেষ কিছুই খান না। তাই মধ্যাহ্নভোজের পরিবর্তে সে সময়ে তিনি অন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক সেরে নেবেন বলে ঠিক করেছিলেন।” তৃণমূল সূত্রের খবর, সেই বৈঠক সারতে গিয়েই দেরি হয়ে যায় মমতার। সেই কারণেই বিকেলের বিমান ধরেন তিনি।
আজ সকালে বৈঠক শুরুর আগেই মমতা দেখা করেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার সঙ্গে। রাজ্যে বিপুল ভোটে জিতে আসার জন্য জয়ললিতাকে অভিনন্দনও জানান তিনি। পরে মধ্যাহ্নভোজের সময়ে ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক ও ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহের সঙ্গে টুকরো আলাপচারিতায় মেতে উঠতে দেখা যায় তাঁকে। সম্প্রতি দুই রাজ্যই মাওবাদী প্রশ্নে মুক্তিপণ সংক্রান্ত সমস্যায় পড়েছিল। সেই বিষয় নিয়ে আজ তিন মুখ্যমন্ত্রীর কথা হয়। দলীয় সূত্রে দাবি, মমতা ও রমন সিংহের মধ্যে আজ বিনায়ক সেনকে নিয়েও কথা হয়। বিনায়ক বর্তমানে কলকাতায় রয়েছেন। তৃণমূলের দাবি, মমতা রমনকে স্পষ্ট বলেছেন, তিনি কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে নন। আইন চলুক আইনের পথে।
আলাপচারিতায় ব্যস্ত মমতা মধ্যাহ্নভোজ খেতে না চাইলে কী হবে! অন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা জনে জনে এসে জিজ্ঞেস করতে থাকেন, তিনি খাচ্ছেন না কেন! শেষে এক কাপ চা খাবেন বলে ঠিক করেন মমতা। চা আনতে গিয়ে কার্যত কালঘাম ছুটে যায় রেলমন্ত্রীর অতিরিক্ত ব্যক্তিগত সচিব রতন মুখোপাধ্যায়ের। খাবার পরিবেশনের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা তাঁকে জানান মধ্যাহ্নভোজনের সময় চা পাওয়া যাবে না। রতনবাবু বলতে বাধ্য হন, চা খেতে চাইছেন খোদ মমতা! শোনামাত্র চা নিয়ে ছুটে আসেন একাধিক কর্মী। চা-পর্ব শেষ হতেই ফের মমতা ডুবে যান আলোচনায়। শুধু ভিনরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাই নন, কেন্দ্র ও অন্যান্য রাজ্যে কর্মরত বাঙালি আমলাদের সঙ্গে পরিচয় ঝালিয়ে নেওয়ার সুযোগও ছাড়েননি তিনি। প্রধানমন্ত্রী সচিবালয়ের প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারি পুলক চট্টোপাধ্যায় ছাড়াও পর্যটন শিল্পের উন্নতির বিষয় নিয়ে আজ হিমাচল প্রদেশের মুখ্যসচিব সুদৃপ্ত রায়ের সঙ্গে আলোচনা হয় মমতার।
তিনটে নাগাদ বিজ্ঞান ভবন থেকে বেরিয়ে আসেন মমতা। মিনিট দশকের ঝটিকা সাংবাদিক সম্মেলন। বিজ্ঞান ভবন থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে দলীয় সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে মিনিট দুয়েকের আড্ডা। তার পরে রেলমন্ত্রী মুকুল রায়কে সঙ্গে নিয়ে কলকাতার বিমান ধরার জন্য রওনা হয়ে যান মমতা। |