কালীঘাট-কাণ্ডে অভিযুক্তদের ‘মনে দোষ’ ছিল। তাই তাঁরা এত দিন পালিয়ে বেড়িয়েছেন বলে শনিবার আদালতে জানালেন ওই মামলার মহিলা তদন্তকারী অফিসার।
বিহার থেকে গ্রেফতার করে ওই চার অভিযুক্তকে এ দিন আদালতে তোলা হয়। তিন জনকে তোলা হয় আলিপুর আদালতে। আর এক জনকে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে। নির্যাতিতার শাশুড়ি অনুভা দাসকে ১৪ মে পর্যন্ত জেল হাজত এবং ভাসুর মেঘনাথ দাস ও জা মিঠু দাসকে ৯ মে পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। ১৫ বছর বয়সী ভাসুরঝিকে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে পাঠানো হলে তাকে ১৮ মে পর্যন্ত হোমে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। সকলেরই জামিনের আবেদন অগ্রাহ্য হয়েছে। অভিযোগকারিণীর স্বামী বাদল দাসকে আগেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তিনি এখন জেল হাজতে। মহিলার এফআইআরের ভিত্তিতে খুনের চেষ্টা, বধূ-নির্যাতন ও চুরির মামলা রুজু হয়।
বৃহস্পতিবার বিকেলে মহিলার শাশুড়ি, ভাসুর, জা ও ভাসুরঝিকে বিহারে গিয়ে গ্রেফতার করে পুলিশ। শুক্রবার ধৃতদের হাজিপুর আদালতে তোলা হলে তাদের এক দিনের ট্রানজিট রিমান্ডের অনুমতি দেন বিচারক। এর পরেই তাদের ট্রেনে চাপিয়ে এ দিন কলকাতায় আনা হয়। মেডিক্যাল পরীক্ষার পর ভাসুরঝি বাদে অন্য তিন জনকে আলিপুর আদালতে লক-আপে আনা হয়। |
আলিপুর আদালতে অভিযুক্ত অনুভা দাস। শনিবার। নিজস্ব চিত্র |
২৩ এপ্রিল রাতে নির্যাতনের অভিযোগ জানাতে কালীঘাট থানায় গেলে মহিলাকে পুলিশ ‘কটূক্তি’ করে বলে অভিযোগ ওঠে। পরের দিন সংবাদমাধ্যমের কাছে ওই মহিলা অভিযোগ জানানোর কথা বললে পুলিশ জেনারেল ডায়েরি করে। ২৫ এপ্রিল সেই সংবাদ প্রকাশ্যে আসার পর
সাসপেন্ড করা হয় থানার অতিরিক্ত ওসি এবং এক সাব-ইনস্পেক্টরকে।
গ্রেফতার হন স্বামী।
এ দিন আদালতে ভারপ্রাপ্ত বিচারক সুপর্ণা রায়ের এজলাসে অভিযুক্তদের তরফে আইনজীবীদের দাবি, “অভিযোগ সাজানো। ২৪ এপ্রিল অভিযোগকারিণী তাঁর স্বামীকে মারধর করেন। সে ব্যাপারে পুলিশ মহিলাকে ডেকে পাঠায়। এই রোষেই পরদিন থানায় শ্বশুরবাড়ির নামে মিথ্যা অভিযোগ করেন তিনি।” সরকারি আইনজীবী বলেন, “বিয়ের পর থেকেই মহিলাকে নির্যাতন করা হত। ২৩ এপ্রিল রাতে অমানবিক ভাবে মারধরের পর তাঁর মুখে বালিশ চাপা দিয়ে খুনের চেষ্টা হয়। তাঁর হার ও সোনার দুলও চুরি করা হয়েছে।”
বিচারক মামলার মহিলা তদন্তকারী অফিসার সাব-ইন্সপেক্টর রিঙ্কু ধরকে ডাকেন। রিঙ্কুদেবী জানান, মহিলাকে যে মারধর করা হয়েছিল, তার প্রমাণ ডাক্তারি পরীক্ষায় মিলেছে। স্বামী, শাশুড়ি, ভাসুর, জা ও ভাসুরঝি মিলে যে তাঁকে মেরেছেন, সে ব্যাপারেও যথেষ্ট সাক্ষ্য মিলেছে। তাঁর প্রশ্ন, “মনে দোষ না থাকলে অভিযুক্তরা পালিয়ে বেড়ালেন কেন?” ৭ মে আদালতে মহিলার গোপন জবানবন্দি নেওয়া হবে। |