পরীক্ষায় বসতে হচ্ছে বাঙালির সাধের জলভরা সন্দেশ, কাঁচাগোল্লাকেও! সেই পরীক্ষায় উতরোলে মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়ে মার্কিন বিদেশ সচিব হিলারি ক্লিন্টনের পাতে তাদের ঠাঁই হতে পারে।
উত্তর কলকাতার এক অভিজাত মিষ্টি প্রতিষ্ঠানকে শনিবার সন্ধ্যায় এ কথা জানিয়েই নমুনা পাঠাতে বলেছেন রাজ্য সরকারের আধিকারিকেরা।
দু’দিনের কলকাতা-সফরে পাচক থেকে রান্নার সরঞ্জাম সবই আসছে হিলারির সঙ্গে। তিনি কী খাবেন, তা নিয়েও সরকারি আধিকারিক থেকে পাঁচতারা হোটেলের শেফদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন মার্কিন নিরাপত্তা সংস্থার আধিকারিকেরা। মহাকরণে প্রাক্তন মার্কিন ফার্স্ট লেডি তথা বিদেশ সচিবের আপ্যায়নে কী থাকবে, তা-ও ওই নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের আগাম জানাতে হচ্ছে। মহাকরণ সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত যা ঠিক আছে, হিলারির জলযোগের জন্য চা বা কফি ও কিছু হাল্কা খাবারের ব্যবস্থা রাখা হবে। আর সেই হাল্কা খাবারের তালিকাতেই জায়গা করে নিতে পারে বাঙালির ধ্রুপদী সন্দেশও। |
মহাকরণে মার্কিন নিরাপত্তা অফিসারেরা। ছবি: দেবাশিস রায় |
মহাকরণের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, কলকাতার একটি প্রাচীন মিষ্টির দোকানকে পাঁচ রকম সন্দেশের নমুনা প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে। জলভরা, কাঁচাগোল্লার সঙ্গে আম বা চকোলেট-স্বাদের সন্দেশের পাশাপাশি সাবেক পারিজাত সন্দেশও থাকতে পারে। হিলারির নিরাপত্তার তত্ত্বাবধানে থাকা বিশেষজ্ঞেরা রবিবার সেই নমুনা চেখে দেখবেন। তাঁদের ছাড়পত্র পেলেই ওই দোকানকে চূড়ান্ত বরাত দেওয়া হবে। আর বরাত পেলে কাল, সোমবার মহাকরণে হিলারির বৈঠকের আগে সাত-সকালেই ওই মিষ্টি পৌঁছে দিতে হবে।
আজ, রবিবার সন্ধ্যায় আলিপুরের পাঁচতারা হোটেলে মার্কিন দূতাবাসের আধিকারিকদের সঙ্গে বিদেশ সচিবের নৈশভোজের পদ নিয়েও শেফদের জল্পনা চলেছে। তবে হিলারির সঙ্গে যে-হেতু রান্নার সব রকম বন্দোবস্তই থাকছে, তাই তিনি আদৌ কী খাবেন, তা নিয়ে সংশয় থাকছে।
১৪ বছর আগে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টনের স্ত্রী তথা মার্কিন ফার্স্ট লেডি হিসেবে কলকাতায় আসার সময়েও আলিপুরের ওই হোটেলেই ছিলেন হিলারি। সে-বার নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যরাই হোটেলের হেঁসেলের কার্যত দখল নিয়েছিলেন। ওই নিরাপত্তা কর্মীদের সামনেই চলেছিল হোটেলের যাবতীয় রান্নাবান্না। এ বারও তেমন সম্ভাবনা বিলক্ষণ থাকছে।
হোটেলের পুরনো কর্মীদের কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, আগের সফরের সময়ে ওই হোটেলে রুম-সার্ভিসে অর্ডার করেই নৈশভোজ সেরেছিলেন হিলারি। কিন্তু এ বার মার্কিন বিদেশ সচিবের কূটনৈতিক সফর উপলক্ষে হোটেলে তাঁর আতিথেয়তার আয়োজন নিয়ে কর্তৃপক্ষ পুরোপুরি মুখে কুলুপ এঁটেছেন।
আগের বার মার্কিন ‘ফার্স্ট লেডি’ হিসেবে এ শহরে আসার সময়ে হিলারির পাচক, হেয়ার ড্রেসার থেকে শুরু করে ছয় দরজার লিমুজিন গাড়ি-সব কিছুর জন্যই আলাদা বিমানের বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। ওই বিমানটি নামার পরে বিশেষ দ্বিতীয় বিমানে এসেছিলেন হিলারি। কলকাতা বিমানবন্দর সূত্রের খবর, এ বার অবশ্য একটি বিমানেই যাবতীয় লটবহর-সহ আসার কথা মার্কিন বিদেশ সচিবের।
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন বিদেশ সচিবের সাক্ষাতের মুহূর্তটি স্মরণীয় করে রাখতে মহাকরণও চেষ্টার ত্রুটি রাখছে না। রাজ্য সরকারকে জানানো হয়েছে, ২৫ থেকে ৪০ মিনিট হিলারি মহাকরণে কাটাবেন। মহাকরণ সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে মমতা ও হিলারির জন্য দু’টি চেয়ার কেনা হয়েছে। সেগুলি পরে পূর্ত দফতরের সংগ্রহশালায় রেখে দেওয়া হবে। গোটা অনুষ্ঠানটি দু’পক্ষই ভিডিও করে রাখবে। স্বাধীনতার পরে এই প্রথম কোনও মার্কিন বিদেশ সচিব মহাকরণে আসছেন। |