জোট-যন্ত্রণা নিয়ে বলেছেন বহু বার। জোটের ভাল দিকগুলি নিয়ে আজ জোরালো সওয়াল করলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। তিস্তা চুক্তি থেকে শুরু করে এনসিটিসি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যখন নীতিগত সংঘাত চলছে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের, ঠিক সেই সময় ম্যানিলায় বসে জোটের বাধ্যবাধকতা মেনে চলার পক্ষেই সরব হলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী।
প্রণববাবুর কথায়, “বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সিদ্ধান্ত নিতে সময় লাগে এটা ঠিক। যথেষ্ট ‘পীড়াদায়ক’ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় তাতেও কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঐকমত্যের ভিত্তিতে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সেটাই শেষ পর্যন্ত টেকসই হয়।”
রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে যখন রাজধানীতে দলগুলির মধ্যে চাপানউতোর চলছে (এবং যেখানে মমতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্র) সেই সময় বিদেশের মাটিতে বসে জোটের ভাল দিক নিয়ে প্রণববাবুর এই সওয়াল যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের বৈঠক শেষে এ দিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে ঘরোয়া রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন তিনি। ভারতীয় অর্থনীতি ক্রমশ দুর্বল দেখাচ্ছে, নীতি রূপায়ণের প্রশ্নে সরকার কার্যত পঙ্গু হয়ে পড়ায় বিভিন্ন আইন পাশ করানোর ক্ষেত্রে বিলম্ব ঘটছে এই সব অভিযোগের জবাবে সরব হন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “বহুদলীয় জোট ব্যবস্থার ফলে আইন পাশ বা নীতি রূপায়ণের ক্ষেত্রে কিছুটা সীমাবদ্ধতা এসেছে। এখন শুধু নিজের মতকে প্রতিষ্ঠা করাটাই শেষ কথা নয়। জনতার রায়, অন্য দলগুলির মতামতকেও সঙ্গে নিয়ে চলতে হবে। স্বাভাবিক ভাবেই তাতে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিলম্ব হবে।” |
এর পর ইতিহাসের দিকে ফিরে প্রণববাবু বলেছেন, “স্বাধীনতার পরের চার দশকে এটা কোনও সমস্যা ছিল না। কারণ, মানুষ একটি দলকেই শাসনের জন্য নির্বাচিত করে গিয়েছে। কিন্তু পরের দু’দশকে পরিস্থিতি বদলেছে। ’৮৯ সাল থেকে প্রতি ভোটেই প্রতিটি দলকেই সীমিত রায় (লিমিটেড ম্যান্ডেট) দিয়েছেন মানুষ। বার্তা স্পষ্ট, তুমি শাসক হতে পার, কিন্তু তুমিই একা নও। অন্যদেরও সঙ্গে নিয়ে চলতে হবে তোমাকে।” এই ‘সঙ্গে নিয়ে চলার’ প্রসঙ্গটি আরও বিশদে ব্যাখ্যা করেন প্রণববাবু। তাঁর কথায়, “সরকার কোনও বিল আনার পর তা যায় সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে। বিষয়টি দেখে কমিটি কিছু প্রস্তাব দেয়। তার পর সরকার ফের সেই প্রস্তাবগুলি খতিয়ে দেখে মন্ত্রিসভার সমস্ত সদস্যের সঙ্গে আলোচনা করে (যেখানে থাকে শাসক জোটের সব দল)। ফলে সময় তো লাগেই।”
তবে যৌথ সিদ্ধান্ত যে টেকসই হয়, তা বোঝাতে একটি উদাহরণও দেন তিনি। তা হল, ১৯৯১-এ কংগ্রেসের সরকার তখন সংখ্যালঘু। সে সময় অর্থমন্ত্রী মনমোহন সিংহ আর্থিক উদারীকরণের যে সিদ্ধান্ত নেন, তা প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। সব দল বা সরকারই তাকে একটা সময়ের পর সমর্থন করেছে। এক ছাদের তলায় বহু ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির প্রশ্নে মমতার সঙ্গে বিরোধ রয়েছে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের। প্রণববাবু ছাড়াও মমতার সঙ্গে এ নিয়ে দফায় দফায় কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মা, গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী জয়রাম রমেশ। বরফ গলার ইঙ্গিত মেলেনি এখনও। যদিও আমেরিকার সঙ্গে আলোচনায় বা বিভিন্ন মঞ্চে সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে জানানো হচ্ছে, বিদেশি লগ্নি আনা হবে, কিন্তু তাতে সময় লাগছে মাত্র। একই ভাবে চলেছে বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য রাজনৈতিক আলোচনা।
সরকার তথা কংগ্রেসের অন্যতম শীর্ষ নেতা হিসাবে প্রণব মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, সময় লাগলেও সংস্কারের প্রশ্নে যে দীর্ঘমেয়াদি আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, তা রক্ষিত হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সে ব্যাপারে পদক্ষেপও করা হয়েছে বলে জানান প্রণববাবু।
|
এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের (এডিবি) বোর্ড অফ গভর্নর্স-এর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। আজ ম্যানিলায় ব্যাঙ্কের সম্মেলনের শেষে এই কথা ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী বছর ভারতেই বসবে এডিবির বার্ষিক সম্মেলন। প্রণববাবু জানিয়েছেন, ভারত এডিবি-র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তাই চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়ে তিনি গর্বিত। এডিবি-র সচিব রবার্ট ডসন জানিয়েছেন, ২০১২ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে ভারতকে ৬০০ কোটি ডলারেরও বেশি ঋণ দেবে ব্যাঙ্ক। পরিবহণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন, নগরোন্নয়ন, কৃষির মতো ক্ষেত্রে ওই অর্থ ব্যবহার করা হবে। |