আকাশপথে কূটনৈতিক দৌত্য!
ভারত এবং বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে সৌজন্যের এক নতুন মাত্রা যোগ হল। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক-এর বৈঠক সেরে একই বিমানে আজ রাতে ঢাকা পৌঁছলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। ম্যানিলা থেকে ঢাকার সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার উড়ানে বাংলাদেশে দৌত্যের প্রস্তুতিও সেরে নিলেন প্রণববাবু।
গত কাল সন্ধ্যায় মুহিতের সঙ্গে এক দফা আলোচনা করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। সেখানেই তিনি প্রস্তাব দিয়েছিলেন, গন্তব্য যখন এক, যাওয়া যাক একই বিমানে। প্রণববাবুর বিশেষ বিমানে ঢাকা ফিরতে রাজি হয়ে যান মুহিতও। বাংলাদেশের প্রবীণ এই নেতা প্রণববাবুরও দীর্ঘদিনের বন্ধু। গত তিন দশকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে দু’জনের দেখা হলেও ভারত বা বাংলাদেশের মাটিতে সাক্ষাৎ হয়নি দু’জনের। সম্প্রতি পেট্রাপোল-বেনাপোল বাণিজ্য যোগাযোগ সংক্রান্ত এক অনুষ্ঠানে ভারতে এসেছিলেন মুহিত।
শনিবার বিকেলে ঢাকায় এসেছেন মার্কিন বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টন। রাতে পৌঁছেছেন প্রণববাবু। কিন্তু দু’জনে মুখোমুখি হচ্ছেন না। আজ হিলারির সঙ্গে বৈঠকের পরে কাল প্রণববাবুর বসেছেন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা। কিন্তু কাল হিলারি ও প্রণবববাবু ব্যস্ত থাকছেন নিজ নিজ কর্মসূচিতে।
আগামী কাল সকালে রবীন্দ্রনাথের সার্ধশতবর্ষ উৎসবের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন প্রণববাবু। তার পর বসবেন হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে। আজ হিলারির সঙ্গে হাসিনার আলোচনায় উঠে এসেছে দক্ষিণ এশিয়ার সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির বিষয়টি। কূটনীতিকরা মনে করছেন, আজ হাসিনা-হিলারি আলোচনার বিষয়টি আগামী কাল ভারত-বাংলাদেশ আলোচনাতেও উঠবে। তিস্তা চুক্তির দ্রুত রূপায়ণ হোক এটা ওয়াশিংটনও চায়।
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, এই মুহূর্তে যে বিষয়টির দিকে সব চেয়ে আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে রয়েছে ঢাকা, তা হল তিস্তা চুক্তির দ্রুত রূপায়ণ। সে দেশের নির্বাচন এগিয়ে আসছে এবং হাসিনা-বিরোধী শক্তি ক্রমশ মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। ২০১০ সালে হাসিনার ভারত সফরে তিস্তার জলবণ্টন নিয়ে যে ঘোষণা হয়েছিল, কার্যক্ষেত্রে তা এখনও বাস্তবায়িত না হওয়ায় বাংলাদেশের বিরোধী পক্ষ তর্জনী তুলছে হাসিনা সরকারের দিকে। প্রণববাবু হাসিনাকে জানাবেন, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহও ঐকান্তিক ভাবে চাইছেন যত তাড়তাড়ি সম্ভব জলবণ্টন চুক্তি হোক। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এ ব্যাপারে নদী বিশেষজ্ঞ কল্যান রুদ্রকে একটি রিপোর্ট তৈরি করতে বলেছে। রিপোর্ট তৈরির কাজ যত দ্রুত সম্ভব শেষ হবে, এমনটাই মনে করছে কেন্দ্র।
হাসিনার সফরের সময়েই ভারত বাংলাদেশকে বিপুল অঙ্কের ঋণ সাহায্য দিয়েছিল। গত কাল প্রণববাবুর সঙ্গে বৈঠকে মুহিত জানিয়েছেন, ওই ঋণের ৮০ শতাংশ প্রকল্পের কাজ চিহ্নিত হয়ে গিয়েছে। বাকিটুকুও শীঘ্রই হয়ে যাবে। পরিকাঠামো, রেল যোগাযোগ ও সড়ক নির্মাণের মতো কাজে এই টাকা ব্যবহার হবে। |