তাঁর প্রথম সফরে বাংলাদেশে এসে এ দেশে গণতন্ত্রকে মজবুত করার আহ্বানই জানালেন মার্কিন বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টন।
শনিবার বিকেলে বেজিং থেকে ঢাকা বিমানবন্দরে এসে নামে হিলারির বিমান। দাঁড়িয়ে থাকা বিমানের মধ্যেই তিনি ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে এক দফা আলোচনায় বসে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত হন। নেমে আসেন প্রায় ৪৫ মিনিট পরে। এর পরে সোজা চলে যান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী দীপু মণির সঙ্গে সেখানে প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা বৈঠক করেন হিলারি। তার পরে সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, “বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে জোরদার করতে আমি সকলের কাছে আবেদন জানাচ্ছি। শুধু সরকারি দল নয়, বিরোধীদেরও বলছি, মতভেদ মিটিয়ে ফেলতে দু’পক্ষ নিয়মিত আলোচনায় বসার অভ্যাস করুন।” রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গেও আলাদা আলাদা ভাবে আলোচনায় বসেন মার্কিন বিদেশসচিব। |
স্বাধীনতার পরে বিভিন্ন সময়ে সেনাশাসনে থেকেছে বাংলাদেশ। সরকার ও বিরোধী পক্ষের মুখোমুখি বসার রীতি এখানে একেবারেই নেই। বার বার চেষ্টা করেও তাদের এক টেবিলে বসাতে ব্যর্থ হয়েছে এমনকী নির্বাচন কমিশনও। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়ার মুখোমুখি হওয়ার ঘটনা এ দেশে বিরল। এই পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন বিদেশসচিবের নিয়মিত আলোচনায় বসার আহ্বান তাৎপর্যপূর্ণ। হিলারি বলেন, “গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ও আগামী দিনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারস্পরিক মত বিনিময়ের অভ্যাস থাকাটা বিশেষ জরুরি।” |
হরতালের রাজনীতি বাংলাদেশে ফিরে আসায় সম্প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করে বণিক মহল। বিরোধীদের এই পদক্ষেপে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে মলিন করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে। হিলারি এ দিন বলেন, “বিনিয়োগকারীদের কাছে যাতে ভুল সঙ্কেত না যায়, রাজনীতিকদের তা দেখা উচিত। হরতালের ফলে সাধারণ মানুষও যে দুর্ভোগে পড়েন, সে কথা বিবেচনায় রাখাতে হবে।” হিলারি বলেন, ভারত ও বাংলাদেশ, উপমহাদেশের এই দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রই আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ সমযোগী দেশ। বিদেশসচিব হিসাবে এই সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে তিনি বরাবরই সচেষ্ট থেকেছেন। সেই উদ্দেশ্যেই তাঁর এই সফর। দীপু মণির সঙ্গে তাঁর বৈঠক খুবই ফলপ্রসূ হয়েছে। হিলারি বলেন, “বাংলাদেশের সাফল্য আমাকে বিশেষ করে উৎসাহিত করে। কারণ আমি জানি, কী কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে এই দেশকে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। আশার কথা, বাংলাদেশের মানুষ কখনও হতাশ হয়ে পথ চলা ছাড়েননি।”
রবিবার গ্রামীণ ব্যাঙ্কের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ ইউনূস ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘ব্র্যাক’-এর প্রধান ফজলে হাসান আবেদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন মার্কিন বিদেশসচিব। তার পরে দুপুরে রওনা হবেন কলকাতার উদ্দেশে। |