জমি বিবাদের জেরে মাঝ বয়সী এক গ্রামবাসীকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ উঠল পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে। শান্তিপুরের কাছে বাঘআছড়া পঞ্চায়েতের প্রধান কংগ্রেসের সুসেন মণ্ডল ওই ঘটনার পর থেকেই পলাতক। সুসেনবাবু একা নন, তাঁর শ্বশুর নবকুমার মণ্ডল ও দুই শালাও গয়েশপুরের বাসিন্দা দুলাল ঘোষ (৫৫) নামে ওই গ্রামবাসীকে গাছে বেঁধে পিটিয়ে মারায় অন্যতম অভিযুক্ত। তবে পুলিশ জানায়, শুক্রবার সকালে গ্রামে হানা দিয়ে অভিযুক্তদের খোঁজ মেলেনি। এ ব্যাপারে প্রধানের এক আত্মীয়কে অবশ্য গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সম্প্রতি দুলালবাবু পড়শি গ্রাম লক্ষ্মীনাথপুরের বাসিন্দা নবকুমারবাবুর কাছ থেকে জমি কিনেছিলেন। কিন্তু তারপরেই রেজিস্ট্রি সংক্রান্ত বিষয়ে শুরু হয় বিবাদ। শুক্রবার দুলালবাবু লক্ষ্মীনাথপুরে নবকুমারবাবুর বাড়িতে গেলে কথাকাটাকাটি শুরু হয়। ক্রমে হাতাহাতিতে গড়ালে একা পেয়ে দুলালবাবুকে বেঁধে ফেলা হয় পাড়ার একটি গাছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান সুসেনবাবুও। কিন্তু ছাড়ানো দূরে থাক তাঁর প্রশ্রয়েই চলতে তাকে মারধর। বেধড়ক মার খেয়ে এক সময়ে জ্ঞান হারান দুলালবাবু। আশঙ্কাজনক অবস্থায় গ্রামবাসীরাই তাঁকে শক্তিনগর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যান দুলালবাবু। তাঁর ছেলে সৌরভের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ এ দিনই প্রধান সুসেন মণ্ডলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।
বেলার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে তাদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা। প্রধান ও তাঁর শ্বশুড়বাড়ির লোকেদের গ্রেফতারের দাবি করেন তাঁরা। বিকেলের দিকে গ্রামবাসীদের একাংশ নবকুমারবাবু ও অভিযুক্ত দুই প্রতিবেশির বাড়িতে লুঠপাট চালায়। আগুনও ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে জানা গিয়েছে। পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমণ মিশ্র বলেন, “জমি সংক্রান্ত বিবাদের জেরেই ওই খুন। তবে ঠিক কী ঘটেছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযুক্তদের সকলকেই গ্রেফতার করা হবে।” দুলালবাবুর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার সকাল আটটা নাগাদ তাঁরা খবর পান যে, দুলালবাবুকে বেঁধে মারধর করা হচ্ছে। ছুটে যান দুলালবাবুর দাদা সাতকড়ি ঘোষ। তিনি বলেন, “গিয়ে দেখি ভাই প্রচন্ড মার খেয়ে জ্ঞান হারিয়েছে। গ্রামের সোকেরা জানান, প্রধানের উপস্থিতিতেই ওই কাণ্ড হয়েছে।” তিনি বলেন, “আমরা সকলের কাছে ভাইয়ের প্রাণ ভিক্ষা করি। কিন্তু প্রথমে গ্রামবাসীরা কেউই এগিয়ে আসতে রাজি হননি। কোনওরকমে বাঁধন খুলে অ্যাম্বুল্যান্সে ওঁকে নিয়ে হাসপাতালে রওয়ানা হই। কিন্তু রাস্তাতেই মারা যান তিনি।”ঘটনার খবর পেয়ে গয়েশপুর গ্রাম থেকেও প্রতিবেশিরা আসেন। দুলালবাবুর মৃত্যু খবরে দুই গ্রামের বাসিন্দারাই উত্তেজিত হয়ে পড়েন। ঘটনার পর থেকেই খোঁজ নেই নবকুমারবাবু ও তাঁর দুই ছেলে শঙ্কর ও প্রদীপের। প্রদীপবাবুর স্ত্রী শিপ্রা মণ্ডল বলেন, “সকালে দুলাল ঘোষ বাড়িতে এসে গালিগালাজ করতে থাকে। দেওর প্রতিবাদ করলে তাঁকে বাঁশ দিয়ে মারে। ঘরের টালি ভেঙে দেয়। আমি ঠেকাতে গেলে আমাকেও মারে। বাধ্য হয়ে তাঁকে বেঁধে রাখা হয়। তাতেই উনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।” সুসেনবাবু বলেন, “দুলালবাবু সম্প্রতি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন। আমার শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে ভাঙচুরও করেছেন। খবর পেয়ে গিয়ে দেখি তাঁকে বেঁধে রাখা হয়েছে। আমিই তাঁকে অ্যাম্বুল্যান্স ডেকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করি।”
ঘটনার প্রতিবাদ করেছে তৃণমূল ও সিপিএম। জেলা তৃণমূলের সভাপতি পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা বলেন, “দুলালবাবু আমাদের দলের কর্মী। তাঁকে যারা খুন করেছে তাদের শাস্তি চাই।” সিপিএমের শান্তিপুর জোনাল কমিটির সদস্য শান্তনু চক্রবর্তীও অভিযুক্তদের শাস্তি দাবি করেছেন। এলাকার বিধায়ক কংগ্রেসের অজয় দে বলেন, “প্রতিটি হত্যাই দুঃখের। তবে সামনে পঞ্চায়েত ভোট তাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে প্রধানের নাম জড়ানো হচ্ছে।” |