‘বিকৃত’ স্বামীকে খুন করে অনুতপ্ত নয় স্ত্রী
‘ডাকাতের হাতে’ নয়, কৃষ্ণগঞ্জের সত্য ঘোষ খুনের ঘটনার পিছনে রয়েছে তাঁর স্ত্রী রিনা ঘোষ ও দুই মেয়ে প্রীতি ও টুম্পা।
শুক্রবার তাঁদের তিন জনকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার ওই খুনের পরে পুলিশ এ ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করে জানিয়ে দিয়েছিল, ডাকাতের হাতে সত্যবাবু খুনের যে ‘গল্প’ তাঁর বাড়ির লোক বলছেন, তা আদপেই ‘বিশ্বাসযোগ্য’ নয়। এ দিন ওই তিন জনকে গ্রেফতারের পরে নদিয়ার পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমণ মিশ্র বলেন, “রীনাদেবী ও তাঁর দুই মেয়েই অপরাধ স্বীকার করেছেন। প্রথমে মাথায় আঘাত করে তারপরে গামছা দিয়ে শ্বাসরোধ করে ওই প্রৌঢ়কে খুন করা হয়েছে।” তিনি জানান, নিহত ব্যক্তির স্ত্রী ও মেয়েদের উপর অত্যাচার করতেন।
কিন্তু কেন নিজের স্বামীকে খুন করতে গেলেন তাঁরা?
রীনাদেবী কোনও আনাল না রেখে এ দিন বলেন, “ওঁর হাত থেকে আমরা তিনজনেই মুক্তি পেতে চেয়েছিলাম। আমার স্বামীর মানসিক অত্যাচার সহ্যের সীমা পেরিয়ে গিয়েছিল।” তিনি জানান, ওই খুনে তাঁকে সাহায্য করেছেন দুই মেয়েও। পুলিশের জেরায় রিনাদেবী ও তাঁর দুই মেয়ে পুরো ঘটনাটাই স্বীকার করে নিয়েছেন।
মা রিনা ঘোষ এবং বড় মেয়ে প্রীতি। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
জানিয়েছেন এই ঘটনায় একটুও অনুতপ্ত নন তাঁরা।
বৃহস্পতিবার নিজের বাড়িতেই কৃষ্ণগঞ্জ হাসপাতাল এলাকার বাসিন্দা সত্যবাবুর দেহ মেলে। পুলিশের কাছে তাঁর স্ত্রী ও মেয়ে ডাকাতির গল্প ফাঁদে। তাঁরা জানায়, চার-পাঁচ জন দুষ্কৃতী বাড়িতে ডাকাতি করতে এসে খুন করেছে সত্যবাবুকে। কিন্তু তদন্তে নেমে মেলে বেশ কিছু অসঙ্গতি। পুলিশ রিনাদেবী, তাঁর দুই মেয়ে ও জামাইকে আটক করে দফায় দফায় জেরা করতে থাকে। তদন্তকারী এক অফিসার বলেন, “তিন জনের কথাবাতার্য় যে অসঙ্গতি ছিল তাতে পরিষ্কার হয় যে মা ও মেয়েরাই খুন করেছে। কিন্তু ওরা স্বীকার করছিলেন না। পরে অবশ্য স্বীকার করেন। কিন্তু কোনও অপরাধবোধ নেই ওঁদের।”
কী করেছিলেন সে দিন ওই প্রৌঢ়? অন্যান্য দিনের মতো বুধবার রাত দশটা নাগাদ মদ্যপ অবস্থায় বাড়ি ফিরে অশান্তি শুরু করেন সত্য ঘোষ। স্ত্রী ও দুই মেয়েকে অকথ্য গালিগালাজ শুরু হয়। রিনাদেবীকে মারধরও করেন। এই সময়ে সত্যবাবুর মাথায় পাল্টা আঘাত করেন তাঁর স্ত্রী। মাটিতে পড়ে গেলে দুই মেয়ে হাত-পা ধরে থাকে আর রিনাদেবী তাঁর মুখে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করেন। বেশ কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তির পর গামছা দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় সত্যবাবুকে। তারপর তিন জন মিলে ডাকাতির গল্প ফাঁদেন এবং তাকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে নিজেরাই আলমারি খুলে জিনিসপত্র এলোমেলো করে রাখেন। সকালে নিজেরাই খবর দেন প্রতিবেশিদের।
স্থানীয়দের কাছে জানা গিয়েছে, সত্যবাবু দিনের বেশিরভাগ সময়ই মদ খেয়ে থাকতেন। বাড়ি ফিরে রোজই অশান্তি হত, মারধরও করতেন। রীনাদেবীর কথায়, “অত্যাচার ক্রমশ বাড়ছিল। গত ২৫ বছর ধরে সহ্য করেছি, আর পারছিলাম না।” বছরখানেক আগে বহরমপুরে বিয়ে হয়েছিল বড় মেয়ে প্রীতির। বিয়ের মাস খানেকের মধ্যেই ওর শ্বশুরবাড়ির ‘অত্যাচার’ সহ্য করতে না পেরে বাড়ি ফিরে এসেছিল। ছোট মেয়ে টুম্পাও বিয়ের পরে বাড়ি আসলেই অশান্তি করতেন সত্যবাবু। বাজার না করা, রান্নায় জল ঢেলে দেওয়া, মেয়েদের কহতব্য নয় এমন বিকৃত কথা বলা, সবই চলত। এমনকী সম্প্রতি বড় মেয়েকে কুপ্রস্তাব দিতেন তিনি বলে জানান রিনাদেবী। বুধবার সকালে বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় হুমকি দিন যে রাতে ফিরে সকলকে বের করে দেবেন।
জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “দিনের পর দিন মানসিক অত্যাচার সহ্য করা তাঁদের কাছে আতঙ্কের হয়ে উঠেছিল। লোকটি বিকৃত মনস্ক ছিলেন। বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার হুমকির ফলে নিরাপত্তার অভাব বোধ করছিলেন তিনি। তা থেকেই এই নির্মম সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.