মৃত্যু গাজনের ‘সঙের’
গায়ে সত্যিই আগুন, দর্শক ভাবছে অভিনয়
গায়ে আগুন লেগে যখন তিনি মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছেন, তখনও চারপাশে হাততালি। লোকে ভাবছে, এই বুঝি উঠে পড়বেন ভীমচন্দ্র রাজোয়াড় (৫৪)। এই ছটফটানি তো অভিনয় ছাড়া কিছুই নয়! অচিরেই অবশ্য ভুল ভাঙল। পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে অগ্নিদগ্ধ ভীমচন্দ্রকে নিয়ে গেলেও বাঁচানো যায়নি। রবিবার রাতে মারা যান গ্রামের সকলের অত্যন্ত প্রিয় এই গাজনের ‘সঙ’। শনিবার রাতে ঘটনার সময় মাঠে উপস্থিত থাকা দর্শকেরা তো বটেই, তাঁর ছেলে বলরামও বুঝতে পারেননি যে ওটা অভিনয় নয়। বলরামের আক্ষেপ, “বাবা যে আগুনের জ্বালায় ছটফট করছিলেন, সেটা আমরা কেউই বুঝতেই পারিনি!”
ভীমচন্দ্র রাজোয়াড়
আসলে ভীমচন্দ্র গাজনের মেলায় ‘সঙ’ সেজে এমনই নিঁখুত অভিনয় করতেন যে, লোকের পক্ষে সেটা বোঝা কঠিনও ছিল। খেলা দেখানোর সময় হনুমান সেজে এমন লাফঝাঁপ করতেন এই লোকশিল্পী যে, দর্শক কাঁটা হয়ে থাকত, এই বুঝি হাড়গোড় গুঁড়ো হয়ে গেল। কিন্তু কখনওই তা হয়নি। শনিবার বিকেলেও তাই লোকে প্রথমে বুঝতে পারিনি, সত্যিই গায়ে আগুন লেগেছে পুরুলিয়া মফঃস্বল থানা এলাকার বাঘড়া গ্রামের বাসিন্দা ভীমচন্দ্রের।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পেশায় কাঠের মিস্ত্রি হলেও ভীমচন্দ্রের নেশা ছিল জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মেলা-গাজনে হনুমান সেজে মানুষের মনোরঞ্জন করা। শনিবার নিজের গ্রামেই ছিল গাজনের মেলা। একদিনের ওই মেলায় ‘সঙ’ সাজা বহুদিনের রেওয়াজ। গ্রামের কিছু লোকশিল্পী ‘লঙ্কাদহন’ পালা দেখানোর মনস্থির করেন। আর সেই পালায় ভীমচন্দ্র ছাড়া হনুমান আর কেই-ই বা হবেন! তাঁর ছেলে বলরাম এ বার উচ্চ মাধ্যমিক দিয়েছে। তার কথায়, “বাবা এ বার পুরুলিয়া শহরে গিয়ে ৩৫০ টাকায় পোশাক ভাড়াও করে এনেছিলেন।” প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার বিকেলে পালা শুরুর কথা থাকলেও দুপুর থেকেই হনুমানের সাজ চাপিয়ে লম্ফঝম্প শুরু করেছিলেন ভীমচন্দ্র। সাজ বলতে পাটের লোম ও ধাতব তারের উপরে মোটা করে পাট জড়িয়ে লম্বা লেজ। শিব মন্দিরের সামনে ভিড়ে ঠাসা মেলায় পালা শুরু হতেই লেজে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন তিনি। কিছুক্ষণ পরে দেখা যায় তাঁর গায়েও আগুন। মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছেন ভীমচন্দ্র। সঙ্গে সঙ্গে হাততালির ঝড়। স্থানীয় বাসিন্দা নিত্যানন্দ রাজোয়াড় বলেন, “প্রথমে কেউ বুঝতে পারেনি। যখন টানা মাটিতে ছটফট করছেন, তখন বোঝা যায় সত্যিই আগুন লেগেছে।” বছর আটেকের ভোলা বাউরিকে এ বার খুদে হনুমান সাজিয়েছিলেন ভীম। সে বলছে, “জেঠু সাজিয়েছিল। জেঠুই চলে গেল।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.