‘নমস্কার। খুব সুন্দর আপনার দেশ। ভারতবাসীর পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক শুভেচ্ছা জানাই।’
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের সূচনায় শুদ্ধ বাংলায় এই শুভেচ্ছাবার্তা জানাবেন ভারতীয় লোকসভার স্পিকার মীরা কুমার!
আগামী মাসের শেষে বাংলাদেশ সফরে যাচ্ছেন স্পিকার। সেখানে তিনি বক্তৃতাও করবেন বাংলায়। যে জন্য গত দু’সপ্তাহ যাবৎ দিনভর লোকসভার ধকলের পরেও সন্ধ্যায় নিজের বাড়িতে বসে বাংলা শিখছেন। স্পিকারের বাংলা-শিক্ষিকার ভূমিকায় কমলা নেহরু গার্লস কলেজের অধ্যক্ষা মিনতি চট্টোপাধ্যায় এবং বহুরূপীর প্রাক্তন অভিনেত্রী, অধুনা দিল্লি প্রবাসী আভেরী চৌরে।
কেমন ছাত্রী মীরা কুমার?
জানাতে গিয়ে.মিনতি উচ্ছ্বসিত “ওঁর শেখার প্রবল আগ্রহ এবং ভাষার উপরে সাধারণ দক্ষতা দেখে আমি অবাক। সাবলীল ভাবে বাংলা যুক্তাক্ষর সামলাচ্ছেন!” দিল্লি-ঢাকা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে স্পিকারের এই ভাষা-উদ্যোগ নতুন মাত্রা আনবে বলে কূটনৈতিক কর্তারাও আশাবাদী।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে মীরা কুমার বলেছিলেন, “আমি দেখছি, কূটনৈতিক ক্ষেত্রে সংসদ ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে।” সেই ভূমিকাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে স্পিকার নিজেই উদ্যোগী হয়েছেন। গত ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানে গিয়েছিলেন রীতিমতো ঊর্দু চর্চা করে। ইসলামাবাদের নৈশভোজে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন স্পষ্ট ঊর্দুতে কথা বলে। ফিরাক গোরখপুরি থেকে উদ্ধৃতিও দিয়েছিলেন অবিরল।
একই ভাবে বাংলাদেশ সফরের প্রাক্কালে রবীন্দ্রনাথ-নজরুল সম্পর্কে গভীর পড়াশোনা করছেন মীরা কুমার। “এত মনোযোগ নিয়ে বাংলা শব্দ শিখছেন, কে বলবে উনি লোকসভার স্পিকার! যেন নিপাট ভাল ছাত্রী। আমাদের সঙ্গে ব্যবহারও এত অমায়িক!” জানাচ্ছেন আভেরী। মিনতিদেবীর সঙ্গে তিনিও সন্ধ্যায় স্পিকারের বাসভবনে যাচ্ছেন। নিছক শব্দ বা তার অর্থের গণ্ডি ছাপিয়ে শেখাচ্ছেন উচ্চারণভঙ্গি।
আর যে হেতু কাজী নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতা প্রকাশের ৮০ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে স্পিকারের ঢাকা সফর, তাই ওই কবিতাটির উপরেও বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে। পুরোটা মুখস্থ না-করলেও ‘বিদ্রোহী’র অংশবিশেষ থাকবে তাঁর বক্তৃতায়। ‘শিক্ষিকা’রা জানাচ্ছেন, কবিতাপাঠ যাতে ত্রুটিমুক্ত ও সুন্দর হয়, সে জন্য স্পিকার চেষ্টার ত্রুটি রাখছেন না। রীতিমতো উচ্চস্বরে, স্পষ্ট উচ্চারণে তিনি এখন পড়ছেন, ‘যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দনরোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না....’
ভাষাশিক্ষার প্রশ্নে এমনিতেই আগ্রহ রয়েছে মীরাকুমারের। চলতি বছরের গোড়ায় চিলি-উরুগুয়ে-প্যারাগুয়ে সফরে গিয়েও কাজ চালানোর মতো স্প্যানিশ বলেছিলেন। যদিও নতুন করে শিখতে হয়নি, অতীতে বিদেশমন্ত্রকের তরফে স্পেনে থাকার অভিজ্ঞতা কাজে লেগেছিল। তবে বাংলা তাঁর কাছে একেবারেই নতুন। মিনতির কথায়, “দেবনাগরী অক্ষরে ওঁর পিক আপ খুব ভাল। তাই রোমানের বদলে দেবনাগরী হরফেই বাংলা লেখা হচ্ছে ওঁর বক্তৃতার জন্য। তাতে নজরুলের পাশাপাশি রবীন্দ্র প্রসঙ্গও থাকবে বিশদে। বলা হবে, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সাংস্কৃতিক যোগাযোগ স্থাপনে রবীন্দ্রনাথ কী ভাবে সেতু বাঁধার কাজটি করেছিলেন।”
বক্তৃতা না-হয় হল। তার বাইরেও রোজকার প্রয়োজনের বিভিন্ন আটপৌরে বাংলা বাক্যও শিখতে ভুলছেন না স্পিকার। উচ্চারণ ও ব্যঞ্জনা-সহ। কারণ মীরা কুমার চাইছেন বাংলা ভাষা দিয়ে বাংলাদেশের দেশের সাধারণ মানুষেরও মন ছুঁতে।
দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের এই ‘স্পর্শকাতর’ সময়ে যা অত্যন্ত জরুরি বলেই মনে করছে কূটনৈতিক মহল। |