শেষ পর্যন্ত ‘স্থিতাবস্থা’তেই ভরসা রাখল আলিমুদ্দিন! সিপিএমের নতুন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে বড়সড় কোনও ‘চমক’ থাকল না এ বার। নতুন সদস্য হিসেবে দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও বাঁকুড়ার দুই জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী ও অমিয় পাত্র সম্পাদকমণ্ডলীতে এলেন। কিন্তু বিনয় কোঙার বাদে পুরনো রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সব সদস্যই পুরনো পদে বহাল থাকলেন। বিনয়বাবু অবসর নেওয়ায় এবং দু’জন নতুন সদস্যের অন্তর্ভুক্তির ফলে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী এ বার কলেবরে বেড়ে দাঁড়াল ১৯-এ।
রাজ্যে ক্ষমতা হারানোর পরে প্রথম রাজ্য সম্মেলনে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্রদের নেতৃত্বে এ বারের রাজ্য কমিটি থেকে কিছু ‘বিতর্কিত’ মুখ ছেঁটে ফেলা হয়েছিল। লক্ষ্মণ শেঠ, অনিল বসু, অমিতাভ নন্দী, রাজদেও গোয়ালার মতো ‘অস্বচ্ছ’ ভাবমূর্তির নেতাদের রাজ্য কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। সেই ‘অভিযানে’র সেনাপতি ছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধবাবু। এ বার রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী গঠনেও বুদ্ধবাবু তাঁর ‘প্রভাব’ অক্ষুণ্ণ রেখেছেন। যার জন্য আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে আসেননি, সুজনবাবু আসতে পেরেছেন। বস্তুত, নতুন মুখ অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে রাজ্য থেকে দলের পলিটব্যুরোর সদস্য বিমানবাবু, বুদ্ধবাবু, সূর্যবাবু ও নিরুপম সেন এই চার জনের মতামতই সব চেয়ে বেশি ‘নির্ণায়ক’ ভূমিকা নিয়েছে বলে সিপিএম সূত্রের খবর।
রাজ্য কমিটির তরফে দৈনন্দিন কাজকর্ম পরিচালনার দায়িত্ব যাদের, সেই রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী গঠনের সময় বিশেষ ‘ঝুঁকি’ নিতে চায়নি আলিমুদ্দিন। এমনকী, বয়সজনিত কারণে যাঁরা ইতিপূর্বে জেলা সম্পাদকের দায়িত্ব ছাড়তে চেয়েছিলেন, সেই অমিতাভ বসু ও রঘুনাথ কুশারীকেও রাজ্য নেতৃত্বে রেখে দেওয়া হয়েছে। যার ফলে সংখ্যালঘু কোনও নতুন মুখ বা উত্তরবঙ্গের কোনও প্রতিনিধির এ বারও রাজ্য নেতৃত্বে জায়গা হয়নি। এবং যার জেরে নতুন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর ‘গ্রহণযোগ্যতা’ এবং ‘কার্যকারিতা’ নিয়ে দলেরই কোনও কোনও মহলে সংশয় থেকে যাচ্ছে।
তবে কেন্দ্রীয় কমিটি ও রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মহম্মদ সেলিমের ব্যাখ্যা, “কমিউনিস্ট পার্টিতে আন্দোলনের অভিজ্ঞতা এবং সাংগঠনিক দক্ষতা থেকেই নেতৃত্ব উঠে আসে। কেন্দ্রীয় বা রাজ্য কমিটি গঠনের সময় ভৌগোলিক ভাবে সব এলাকা ছুঁয়ে যাওয়ার একটা চেষ্টা করা হয়। পলিটব্যুরো বা রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী তৈরির সময় সংখ্যালঘু, মহিলা বা এলাকাভিত্তিক প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি কমিউনিস্ট পার্টিতে বিবেচনা করা হয় না।” |
আলিমুদ্দিনে রবিবার রাজ্য কমিটির বৈঠকের দ্বিতীয় দিনে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমানবাবু যে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর প্যানেল প্রস্তাব করেন, তাতে নতুন মুখ সুজনবাবু ও অমিয়বাবু। সাম্প্রতিক কালে দলের সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধির নিরিখে দক্ষিণ ২৪ পরগনা সব চেয়ে এগিয়ে ছিল বলে ফেব্রুয়ারির রাজ্য সম্মেলনে রিপোর্ট জমা পড়েছিল। গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বে জেরবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার দায়িত্বে সুজনবাবুকে বসানো হয়েছিল আলিমুদ্দিনের হস্তক্ষেপেই। চার বছর আগে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ক্ষমতা হারালেও ওই জেলায় যে ভাবে দল হারানো জমি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালিয়েছে, কর্মসূচিতে অংশগ্রহণে ‘দক্ষতা’ দেখিয়েছে, সাংগঠনিক ভাবে তারই ‘স্বীকৃতি’ হিসেবে বুদ্ধবাবু-বিমানবাবুরা জেলা সম্পাদক সুজনবাবুকে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে নিয়ে এলেন। প্রত্যাশিত ভাবেই, ‘পদোন্নতি’র অব্যবহিত পরে সুজনবাবু জানিয়েছেন, রাজ্য কমিটির অর্পিত দায়িত্ব পালনে আন্তরিক ভাবে সচেষ্ট হবেন। আবার জঙ্গলমহলের অন্যতম জেলা বাঁকুড়াকে লাগাতার মোকাবিলা করতে হয়েছে মাওবাদী এবং তৃণমূল, এই ‘জোড়া বিপদে’র। দলের নতুন ভূমিকায় নতুন নতুন স্লোগান তুলে আনার ক্ষেত্রে অমিয়বাবুরা পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। তারই সুবাদে বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক এখন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে।
কিন্তু এর পরেও দলের মধ্যে ঈষৎ ক্ষোভ এবং প্রশ্ন থাকছে উত্তরবঙ্গের প্রতি ‘অবহেলা’ নিয়ে। প্রাক্তন মন্ত্রী এবং দার্জিলিং জেলার নেতা অশোক ভট্টাচার্যের নাম বিবেচিত হলেও তাঁর ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি! রাজ্য নেতৃত্বের অবশ্য যুক্তি, অশোকবাবু বা কোনও ব্যক্তি বিশেষের প্রশ্ন এখানে আসছে না। সাপ্তাহিক রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে নিয়মিত উত্তরবঙ্গ থেকে এসে আবার ফেরত যাওয়া সম্ভব নয় বলেই সচরাচর উত্তরবঙ্গের কাউকে রাজ্য নেতৃত্বের কমিটিতে রাখা হয় না। দলেরই একাংশের মতে, বাম জমানায় পাহাড় সমস্যাকে যে ভাবে জেলা নেতৃত্ব মোকাবিলা করেছিলেন, তাতে খুব ‘সুফল’ মেলেনি। এখন পাহাড় ও ডুয়ার্সে ফের সমস্যা মাথাচাড়া দেওয়ার সময় অশোকবাবুর মতো নেতাদের রাজ্য নেতৃত্বে আনলে পাছে পুরনো ‘ক্ষত’ উস্কে ওঠে, এই আশঙ্কাতে ‘ঝুঁকি’ নিতে চায়নি আলিমুদ্দিন। এর ফলে, মানচিত্র ধরে মুর্শিদাবাদের (নৃপেন চৌধুরী) উপরে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর কোনও প্রতিনিধিত্ব এখনও থাকল না!
রাজ্য নেতৃত্বে একমাত্র সংখ্যালঘু এবং মহিলা মুখ হিসেবে রয়ে গেলেন যথাক্রমে মহম্মদ সেলিম ও শ্যামলী গুপ্ত। সংখ্যালঘু নেতা হিসেবে প্রাক্তন সাংসদ মইনুল হাসানকে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে ঢোকানোর পক্ষপাতী ছিল দলের একাংশ। কিন্তু অমিতাভবাবু, রঘুনাথবাবু বা অন্য কেউ-ই রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর পদ না-ছাড়ায় আর কোনও জায়গা খালিই হয়নি।
আর থাকল রেজ্জাক-কাঁটা। দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বরাবরের ‘বিদ্রোহী’ প্রাক্তন ভূমিমন্ত্রী আব্দুর রেজ্জাক মোল্লার এ বারও রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে ঠাঁই হয়নি। স্বভাবতই, এর পরে রেজ্জাক কী করবেন, তা নিয়ে দলকে ‘টেনশনে’ থাকতে হবে! ঘনিষ্ঠ মহলে রেজ্জাক অবশ্য এ দিন বলেছেন, গরিবের আন্দোলনে তিনি যাবেন এবং কোনও দল দেখবেন না! রেজ্জাক কি ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণা করেই এ বারের রাজ্য কমিটির বৈঠকে আসেননি?
তাঁর জেলার সম্পাদক তথা রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর নতুন সদস্য সুজনবাবুর বক্তব্য, “রেজ্জাক’দার শরীরটা সত্যিই খারাপ ছিল। বৈঠক শেষ হওয়ার পরেও ওঁর সঙ্গে কথা হয়েছে।” রাজ্য কমিটির এক সদস্য অবশ্য বলছেন, “সিপিএমের কবীর সুমন হয়ে রেজ্জাক থাকবেন!”
|
পশ্চিমবঙ্গ গ্রামীণ ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ কংগ্রেসের বার্ষিক সম্মেলন আয়োজিত হল বর্ধমানের পৌর উচ্চ বিদ্যালয়ে। বরিবার এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান পান্নালাল মিত্র প্রমুখ। এ দিন সম্মেলনে পান্নালালবাবু বলেন, “আমাদের ব্যাঙ্কের লোকসানের পরিমাণ প্রায় ১২০ কোটি টাকা। তার মধ্যে গত ২০১০-১১ আর্থিক বছরেই ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় ৪২ কোটি টাকা। তবে ২০১১-১২ অর্থবর্ষে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ কোটিতে।” ২০০৭-এর ২৬ ফেব্রুয়ারি বর্ধমান, হাওড়া ও ময়ূরাক্ষী গ্রামীণ ব্যাঙ্ককে একত্রিত করে তৈরি করা হয় পশ্চিমবঙ্গ গ্রামীণ ব্যাঙ্ক। পান্নালালবাবুর কথায়, “অফিসারদের একাংশ ঋণ দিতে চাইছেন না। তাঁরা ভাবছেন, এই ঋণ ফেরত না পেলে তাঁদের চাকরির ক্ষতি হবে। আমি তাঁদের বলছি, আপনারা ঝুঁকি নিয়ে ঋণ দিন। তাতে লাভ বা লোকসান হতেই পারে।” ব্যাঙ্কের প্রতিটি শাখাকে অন্তত ৫০ লক্ষ টাকা ঋণ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গ গ্রামীণ ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত মজুমদার বলেন, “রাজ্যে সাড়ে সাত হাজার গ্রামের মধ্যে চার হাজার গ্রামে সমস্ত ব্যাঙ্ক মিলিয়ে পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। যার মধ্যে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের শাখার সংখ্যা ৮৮৬-র মতো। যদি আমরা অতিরিক্ত শাখা খুলতে পারি বা কর্মচারী নিয়োগ করতে পারি, তা হলে ঋণের পরিমাণ আরও বাড়ানো যাবে।” |