পুরনো ‘অস্ত্র’ হেনে দল সাসপেন্ড করল অনিলকে
মাসদুয়েক আগে রাজ্য কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। এ বার দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকেই আরামবাগের ‘দাপুটে’ নেতা অনিল বসুকে তিন মাসের জন্য সাসপেন্ড করল সিপিএম। ‘তিরস্কার’ করা হল তাঁর অন্যতম সহযোগী বলে পরিচিত আরামবাগের প্রাক্তন বিধায়ক বিনয় দত্তকেও।
আরামবাগের প্রাক্তন সাংসদ অনিলবাবুর বিরুদ্ধে ‘দুর্নীতিতে প্রশ্রয়’ দেওয়ার অভিযোগ অবশ্য দু’বছরেরও বেশি
অনিল বসু
পুরনো। সেই ঘটনায় তৎকালীন রাজ্য কমিটির গঠিত তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট এত দিন আলিমুদ্দিনের হাতেই ছিল। রাজ্য কমিটি থেকে বাদ পড়ে অনিলবাবু যখন ‘বিদ্রোহী’ হওয়ার চেষ্টা করেছেন, সেই সময়েই পুরনো সেই রিপোর্ট আস্তিনের তলা থেকে বার করে আনলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য-বিমান বসুরা! সিপিএমেরই একাংশের মতে, যে সব এলাকাভিত্তিক ‘দাপুটে’ নেতাদের জন্য দলের ভাবমূর্তি ভূলুণ্ঠিত হয়েছে, তাঁদের আরও এক বার ‘বার্তা’ দেওয়ার প্রয়াসই বুদ্ধবাবুরা চালিয়েছেন অনিলবাবুকে শাস্তির সিদ্ধান্তে সিলমোহর বসিয়ে।
দলীয় সূত্রের খবর, কয়েক বছর আগে ওষুধ কেনা নিয়ে দুর্নীতি এবং অনিয়মের অভিযোগে জড়িয়ে গিয়েছিল সিপিএমের হুগলি জেলার কিছু নেতার নাম। তৎকালীন জেলা পরিষদের সভাধিপতি অসিত পাত্রকে (এখন ধৃত) পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অনিলবাবুর মতো কিছু নেতার বিরুদ্ধে জেলায় সাংগঠনিক স্তরে কিছু ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছিল। রাজ্য কমিটির তরফে তিন সদস্যের তদন্ত কমিশন ওই ঘটনায় ২০১০ সালেই যে রিপোর্ট দেয়, তা অনিলবাবুর বিরুদ্ধে গিয়েছিল। কিন্তু সামনে বিধানসভা ভোট এবং আরামবাগ এলাকায় অনিলবাবুর ‘প্রভাবের’ কথা মাথায় রেখে সেই রিপোর্ট তাকে তুলে রাখা হয়েছিল। আলিমুদ্দিনে শনি ও রবিবারের রাজ্য কমিটির বৈঠকে সেই কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতেই অনিলবাবুকে তিন মাসের জন্য দল থেকে সাসপেন্ডের সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়েছে।
অনিলবাবু অবশ্য রবিবার বলেছেন, “দলগত বা সংগঠনগত ভাবে আমাকে কিছু জানানো হয়নি। যেটুকু জেনেছি, সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকে। দলগত ভাবে যত ক্ষণ না জানানো হচ্ছে, তত ক্ষণ এ নিয়ে মন্তব্য করব না।”
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “ঘটনা আগেই ঘটেছিল। তখন বিধানসভা ভোটের কথা বিবেচনা করে বড় কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এখন সেই প্রক্রিয়াই এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হল।” তবে দলের তরফে অনিলবাবুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কারণ দুর্নীতিতে প্রশ্রয় হলেও জনমানসের কাছে এই বার্তাই যাচ্ছে যে, দিনের পর দিন ‘বেপরোয়া’ আচরণ করে-যাওয়া প্রাক্তন সাংসদকে দেরিতে হলেও আর ‘প্রশ্রয়’ দিতে চাইছে না সিপিএম। সে তিন মাসের জন্য সাসপেনশন যতই ‘প্রতীকী’ হোক। তৃণমূলের হুগলি জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত যেমন বলেছেন, “অনিলবাবুর বিরুদ্ধে অনেক আগেই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল বিমানবাবুদের। অনিলবাবু আমাদের নেত্রী সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করেছিলেন।” একই সঙ্গে অবশ্য তপনবাবুর আরও মন্তব্য, “এখন পঞ্চায়েত ভোট এসে যাচ্ছে বলে সিপিএম দোষত্রুটি মেরামতের চেষ্টা করছে। কিন্তু মানুষ এতে ভুলবেন না!” প্রসঙ্গত, বিধানসভা ভোট চলাকালীন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে এমন ‘অশালীন’ মন্তব্য করেছিলেন অনিলবাবু, যার জন্য তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধবাবুর হস্তক্ষেপে ক্ষমা চাইতে হয়েছিল তাঁকে। শঙ্খ ঘোষের মতো বিদ্বজ্জন কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন। তার পরেই অবশ্য বুদ্ধবাবুর সঙ্গে জনসভায় এক মঞ্চে দেখা গিয়েছিল অনিলবাবুকে।
এ বারের রাজ্য সম্মেলনে অনিলবাবুকে রাজ্য কমিটি থেকে ছেঁটে ফেলতে বদ্ধপরিকর ছিলেন মূলত বুদ্ধবাবুই। তবে তার আগেই হুগলি জেলার সম্পাদক হওয়ার দৌড়ে অনিলবাবু এবং জেলার আর এক নেতা সুনীল সরকারের ‘লড়াই’ এমনই তুঙ্গে ওঠে যে, আলিমুদ্দিনের হস্তক্ষেপে ওই পদের দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রাক্তন উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী সুদর্শন রায়চৌধুরীকে। ‘ক্ষুব্ধ’ অনিলবাবু তার পরে কলকাতায় রাজ্য সম্মেলনে আসেননি। অনিলবাবুকে যেমন আলিমুদ্দিনের ‘বিড়ম্বনা’ দীর্ঘ দিনের, তেমনই ‘ডাকসাইটে’ বিধায়ক বিনয়বাবুর বিরুদ্ধে দলের ভিতরে-বাইরে থেকে বহু অভিযোগ দলীয় নেতৃত্বের কাছে জমা পড়েছিল। শেষ পর্যন্ত তাঁকে ‘তিরস্কার’ করা হয়েছে বলে সিপিএম সূত্রের খবর।
অনিলবাবুদের শাস্তির বিষয়টি নিয়ে সিপিএম নেতৃত্ব অবশ্য আনুষ্ঠানিক ভাবে মুখ খুলতে চাননি। এই সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে এ দিন আলিমুদ্দিনে রাজ্য সম্পাদক বিমানবাবু বলেন, “অনিল বসুকেই এটা জিজ্ঞাসা করতে হবে!” সিপিএমের হুগলি জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরী বলেন, “অনিল বসুর ব্যাপারে জেলা নেতৃত্বের সুপারিশের কোনও ভূমিকাই নেই। এ ব্যাপারে আমাদের কিছু বলার নেই।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.