নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
হাওড়ার অপহৃত ইঞ্জিনিয়ার অমরেশ মান্নাকে শনিবার রাতে মালদহ থেকে উদ্ধার করে জিজ্ঞাসাবাদের পরে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে, বকেয়া টাকা আদায়ের জন্যই এই ঘটনা। পুলিশ জেনেছে, অপহরণ করে ওই ইঞ্জিনিয়ারকে প্রথমে উত্তর দিনাজপুরের এমতাবাদ অঞ্চলে রাখা হয়। পরে পুলিশি তল্লাশি শুরু হলে অপহরণকারীরা আর ঝুঁকি না নিয়ে মালদহ স্টেশনে তাঁকে ছেড়ে পালিয়ে যায়। এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত হিসেবে উত্তর দিনাজপুরের
|
উদ্ধারের পরে অমরেশ মান্না।
রবিবার। নিজস্ব চিত্র |
এমতাবাদ এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মালিক নামে এক ব্যক্তিকে খুঁজছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অমরেশবাবু টেলিফোনের টাওয়ার নির্মাণকারী এক সংস্থায় কাজ করতেন। অভিযোগ, সম্প্রতি টেলিফোনের টাওয়ার বসানোর নাম করে হাওড়া, হুগলি, উত্তর দিনাজপুর প্রভৃতি জায়গায় বিভিন্ন জমির মালিকের কাছ থেকে নগদ ৭০ হাজার টাকা নেন তিনি। তাঁদের প্রতিশ্রুতি দেন, প্রথমে ৭০ হাজার টাকা দিলে পরে
প্রতি মাসে তাঁদের জমিতে টাওয়ার বসানোর জন্য ভাড়া বাবদ পাঁচ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।
মাসে পাঁচ হাজার পাওয়ার আশায় অনেকেই অমরেশবাবুকে ৭০ হাজার টাকা দিয়ে দেন। পুলিশের অভিযোগ, এই ভাবে কয়েক মাস আগে উত্তর দিনাজপুরের এমতাবাদ এলাকার আব্দুল মালিক নামে এক মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে ন’জন বাসিন্দার থেকে মোট ৬ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা নেন তিনি। এ দিকে, অমরেশ যে টাওয়ার সংস্থার হয়ে কাজ করতেন, সেই সংস্থা খবর পায় যে, বেআইনি ভাবে টাকা তোলা হয়েছে। এর পরেই ওই সংস্থা অমরেশবাবুকে টাওয়ার বসানোর বরাত বাতিল করে দেয়।
এ দিকে, মালদহে বিভিন্ন জমির মালিকেরা দেখেন, টাওয়ার আর বসছে না। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, অমরেশবাবুর মধ্যস্থতাকারী আব্দুল মালিক খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন যে, পুরো টাকা আত্মসাৎ করার মতলবে আছেন অমরেশ। আব্দুল মালিকের এমতাবাদ এলাকায় তেল কল ও চাল কল রয়েছে। সেই সঙ্গে তিনি বাড়ির কন্ট্র্যাক্টরের কাজও করেন। অমরেশবাবু তাঁদের টাকা আত্মসাৎ করতে চাইছেন, এই খবর জানার পরেই বকেয়া টাকা আদায়ের জন্য অপহরণের ছক কষেন আব্দুল।
অমরেশকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে, আব্দুল তাঁকে বাড়ির কন্ট্রাক্টরের কাজে যোগ দিতে বলেন। প্রস্তাব মানলে তিন লক্ষ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন আব্দুল। টাওয়ার সংস্থার কাজটি চলে যাওয়ায় এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান অমরেশ। এর পরে দীপঙ্কর নামে এক বন্ধুকে নিয়ে এমতাবাদে যান তিনি। সেখানে যেতেই নিজের একটি রাইস মিলে অমরেশ ও দীপঙ্করকে আটকে রাখেন আব্দুল। এর পরে অমরেশের ফোন থেকেই মুক্তিপণ চাওয়া হয়। মালদহ স্টেশনের একটি জায়গায় টাকা দেওয়ার কথাও বলে অপহরণকারীরা।
পুলিশ অমরেশের মোবাইল টাওয়ারের অবস্থান দেখে বুঝতে পারে তিনি মালদহে আছেন। পুলিশের দল রওনা দেয় মালদহে। টাকা নিতে এসে মালদহ স্টেশনে এত পুলিশ দেখে অমরেশ ও দীপঙ্করকে ছেড়েই পালায় অপহরণকারীরা। সেখান থেকে ওই দু’জনকে উদ্ধার করে পুলিশ। হাওড়ার সিটি পুলিশের ডিসি (সদর) নিশাদ পারভেজ বলেন, “অমরেশকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অপহরণকারীদের ধরতে মালদহ পুলিশের সাহায্য নেওয়া হবে।” |