নিজস্ব সংবাদদাতা • উদয়নারায়ণপুর |
কালীপুজো উপলক্ষে হওয়ার কথা ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তারই প্যান্ডেল বাঁধা চলছিল হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের উত্তর হরিশপুর গ্রামে। সেই কাজ দেখতে বেরিয়ে রবিবার বিকেলে বাজ পড়ে মৃত্যু হল ৯ জনের। আহত হলেন ৬ জন।
পুলিশ জানায়, বজ্রপাতে মৃতেরা হলেন উত্তর হরিশপুরের লবকুশ পোড়েল (৪০), বিদ্যুৎ ধাড়া (৩০), নিমাই দলুই (৬০), ভরত দলুই (৩৫), শ্যামসুন্দর মল্লিক (২০), বন্যা পোড়েল (২০), ভোলা ধাড়া (১৭), তিলকবালা পোড়েল (৭০), এবং ভীম পোড়েল (৪৫)। আহতদের উদয়নারায়ণপুর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে এক জনের অবস্থার অবনতি হওয়ায় স্থানান্তরিত করানো হয় হাওড়া জেলা হাসপাতালে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবারের জন্য সরকারের তরফ থেকে ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। আহতদের সব রকম সাহায্যের ব্যবস্থা করারও নির্দেশ দিয়েছেন। |
শোকার্ত স্বজন। ছবি-হিলটন ঘোষ |
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি ব্যথিত ও মর্মাহত। এ রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঠেকানোর সাধ্য মানুষের নেই। কিন্তু আমরা ওই সব মানুষের পাশে আছি।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামের পঞ্চানন্দ মন্দির লাগোয়া মাঠে একটি ক্লাবের উদ্যোগে শনিবার রাতে কালীপুজো হয়। এ দিন সকালে প্রতিমা বিসর্জনের পরে সন্ধ্যায় এই উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। বিকেল থেকেই প্যান্ডেল বাঁধা হচ্ছিল। পাড়ার মহিলা-পুরুষেরা ভিড় জমিয়েছিলেন। বিকেল ৫টা নাগাদ শুরু হয় প্রবল ঝড়-বৃষ্টি। প্যান্ডেল দেখতে ভিড় করা জনতার একাংশ এবং আশপাশের খেতে যাঁরা কাজ করছিলেন, তাঁরা মন্দির লাগোয়া একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন। ওই বাড়িটিতে কেউ বাস করেন না। সেখানে সকলে আশ্রয় নেওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই বাড়িটির ছাদে বাজ পড়ে। ভিতরে থাকা জনা পনেরো মহিলা-পুরুষ ছিটকে পড়েন। পুড়ে যায় বাড়িটিতে আশ্রয় নেওয়া গোটাচারেক ছাগলও। গ্রামবাসীরা হাসপাতালে নিয়ে গেলে ৯ জনকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। মৃত লবকুশ পোড়েলের ভাই বাবলু হাসপাতালে বলেন, “দাদা মাছ বিক্রি করে সংসার চালাতেন। প্যান্ডেল দেখতে গিয়েছিলেন। বাজ পড়ার পরে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখি, দাদা নিথর। সারা শরীর ঝলসে গিয়েছে।”
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রাতেই উদয়নারায়ণপুর হাসপাতালে যান কৃষি বিপণনমন্ত্রী অরূপ রায়। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী প্রতি মুহূর্তে দুর্ঘটনার বিষয়ে আমাদের কাছ থেকে খোঁজখবর নিয়েছেন। আহতদের চিকিৎসায় কোনও গাফিলতি যাতে না হয়, সে জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।” অরূপবাবু হাসপাতালে রাত পর্যন্ত থেকে আহতদের চিকিৎসার তদারক করেন। মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী মুকুল রায়কেও হাসপাতালে যাওয়ার নির্দেশ দেন। হাসপাতালে যান উদয়নায়ারণপুর, উলুবেড়িয়া উত্তর এবং উলুবেড়িয়া দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়কেরা। উদয়নারাণপুরের বিধায়ক সমীর পাঁজা বলেন, “এমন ঘটনা কখনও দেখিনি। হাসপাতালে যেন মৃতদেহের মিছিল আসছে!” |