শিকড়ের বন্ধনেই দুই পড়শিকে কাছে টানতে জোর
কূটনৈতিক ব্যক্তিত্ব নন, রাজনৈতিক নেত্রী নন। সরকারি পদাধিকারীও নন। ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক নিয়ে আলোচনাসভার বক্তা-তালিকায় তাই তাঁর নাম ছিল না। কিন্তু শ্রোতাদের দাবিতে তাঁকে বলতেই হল।
হল, কারণ এ শহরের সঙ্গে তাঁর নাড়ির টান! এবং বক্তা থেকে শ্রোতা সকলে মোটামুটি একমত যে, দু’দেশের মানুষের ‘শিকড়ের’ বাঁধনই সমস্যা সুরাহার অন্যতম পথ-নির্দেশক। তাই ১৯৪৯-এ কলকাতায় যাঁর জন্ম, আট-ন’মাস বয়সে বাবা-মা যাঁকে লাহৌরে নিয়ে গিয়েছিলেন, যাঁর ঠাকুর্দার কারখানার পত্তন এ শহরে, সেই মোনা কাসুরিও বললেন একই কথা পরস্পরের কাছাকাছি আসার পন্থা আরও বাড়াতে হবে।
আর তাঁর স্বামী, পাকিস্তানের প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী (মুশারফ জমানার) খুরশিদ মেহমুদ কাসুরি মনে করালেন ‘কাছাকাছি আসার’ এক দৃশ্য। বললেন, তাঁর আমলে মোহালি ও লাহৌরে ক্রিকেট ম্যাচ দেখার জন্য দু’দেশের হাজার হাজার ক্রীড়ামোদীকে ভিসা দেওয়া হয়েছিল। লাহৌরের স্টেডিয়ামে দু’হাতে দু’দেশের জাতীয় পতাকা নিয়ে দৌড়েছিল লোকে, এক পশ্চিমি পত্রিকা যাকে বলেছিল, শান্তির গণ-উৎসব। খুরশিদ এ-ও জানালেন, সভার অন্যতম বক্তা মণিশঙ্কর আইয়ারের সঙ্গে তাঁর প্রথম দেখা কেমব্রিজে। ‘দক্ষিণ এশীয় মুখ’ দেখে তিনি আলাপ করতে এগিয়েছিলেন। সেই ‘মণি’ পরবর্তীকালে পাকিস্তানে গিয়ে তাঁরই ডাকে সফরসূচি পাল্টে প্রথমে লাহৌরে যান, দেখে আসেন নিজের জন্মভিটে।
বস্তুত দু’দেশের মানুষের এ হেন নাড়ির টান, পরস্পরের কাছে আসার তাগিদটা অনুভব করেই অটলবিহারী বাজপেয়ী থেকে শুরু করে পারভেজ মুশারফ বা মনমোহন সিংহ যোগাযোগ বাড়ানোর দিকে জোর দিয়েছেন। আবার বিপরীত দিকে রয়েছে যুদ্ধ, সন্ত্রাসবাদ, পাক ফৌজের মনোভাব, কাশ্মীর, সিয়াচেন। এগুলো কি সম্পর্ক গড়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে না?
আলোচনাসভায় মোনা কাসুরি, শঙ্কর রায়চৌধুরী, খুরশিদ মেহমুদ কাসুরি এবং মণিশঙ্কর আইয়ার। ছবি: দেবাশিস রায়
রবিবার কলকাতায় ‘সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড প্রগ্রেস’ আয়োজিত আলোচনাসভায় প্রশ্নটা স্বাভাবিক ভাবেই উঠল। বর্তমানে ইমরান খানের দলের (যার পিছনে সেনা-সমর্থন আছে বলে জল্পনা) কাশ্মীর বিষয়ক ‘টাস্ক ফোর্সের’ প্রধান মেহমুদ কাসুরির অবশ্য দাবি, পাক সেনাবাহিনী ‘শান্তিপ্রস্তাব’ সমর্থন না-করলে প্রেসিডেন্ট মুশারফের আমলে কাশ্মীর-সমস্যার ‘প্রায় সমাধানের’ মুখে তাঁরা পৌঁছাতে পারতেন না। কাশ্মীরে স্বশাসন ও যৌথ ব্যবস্থাপনা-সহ মুশারফের দেওয়া সেই পাঁচটি প্রস্তাব কি নয়াদিল্লি গ্রহণ করেছিল? নাকি তিনি অন্য কোনও মীমাংসা-সূত্রের কথা বলছেন?
‘সমাধান প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার স্বার্থে’, কাসুরি এ দিন তা ভাঙেননি। তবে জানিয়ে দিয়েছেন, “কাশ্মীর নিয়ে যে সমাধানই হোক, তা কাশ্মীর, ভারত বা পাকিস্তানের ১০০% মানুষকে খুশি করতে পারবে না। তেমন কোনও নিখুঁত মীমাংসা বাস্তবে সম্ভব নয়।” যদিও পাক সেনাবাহিনী সম্পর্কে ভারতের উদ্বেগ নিরসনে তাঁর আশ্বাস, “এক জন ফৌজিই সবচেয়ে ভাল বোঝেন, যুদ্ধের ক্ষতটা কী মারাত্মক। তাই অনেক শীর্ষ সেনা-অফিসার বাহিনী ছাড়ার পরে শান্তির প্রচারক হয়ে ওঠেন। দু’দেশেই।”
পাশে বসা ভারতের প্রাক্তন সেনাধ্যক্ষ জেনারেল শঙ্কর রায়চৌধুরী অবশ্য নিজেকে সরাসরি এই দলে ঢোকাতে রাজি হলেন না। তাঁর বক্তব্য, পেশাদার সৈনিক হিসেবে তিনি দেশের স্বার্থ রক্ষা করেছেন, করবেন। দেশের স্বার্থ যদি শান্তি হয়, তবে তা-ই রক্ষা করা তাঁর কতর্ব্য। পাক মদতে পুষ্ট সন্ত্রাসবাদের প্রসঙ্গ তুলে জেনারেল এ প্রশ্নও ছুড়ে দিলেন, “ভারত তার দেশের উগ্রপন্থীদের (এক্সট্রিম এক্সট্রিমিস্ট) সামলাতে পারে। কিন্তু পাকিস্তান কি সে দেশের জঙ্গিদের সামলাতে পারবে?”
বিরোধিতাটা এল প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বর্তমানের সাংসদ মণিশঙ্কর আইয়ারের কাছ থেকে। যাঁর মতে, সন্ত্রাসবাদের জন্ম পাকিস্তান একা দেয়নি। এ গোটা দুনিয়ার সমস্যা। আর পাকিস্তানই সন্ত্রাসবাদের সবচেয়ে বড় শিকার। “পাকিস্তান বুঝতে পারছে, সাপকে দুধ খাওয়ালেও বিছানায় নিয়ে শোয়া যায় না, সে ছোবল মারতে পারে। তেমন সন্ত্রাসবাদের যাবতীয় দায় স্বীকার করবে ইসলামাবাদ, এমন নীতি নিয়ে ভারতের না চলাই ভাল।” মন্তব্য মণিশঙ্করের। শুধু পাকিস্তানি সেনার দিকে আঙুল তুলতেও তিনি নারাজ। রাজীব গাঁধীর আমলে সিয়াচেন-সমঝোতার একটি ‘হতে চলা’ চুক্তি ভারতীয় সেনার বাধায় ভেস্তে গিয়েছে, এমন দাবিও শোনা গেল মণিশঙ্করের মুখে। এ দিন যাঁর প্রস্তাব, দু’দেশের শান্তিপ্রক্রিয়া এমন কাঠামোয় হওয়া উচিত, সন্ত্রাসের আক্রমণেও যা টাল খাবে না।
আদৌ কি তা করা যাবে?
এটা কূটনীতির প্রশ্ন। বিতর্কিতও। তাই ঘুরে-ফিরে বড় হয়ে দাঁড়াচ্ছে ‘আপাত সম্ভব’ পন্থাটা। সীমান্তের দু’পারে যোগাযোগ বাড়াতে হবে মোনা কাসুরির এই আহ্বান শুনেই যে সভায় সবচেয়ে বেশি হাততালি পড়েছে, সমাপ্তি-বক্তৃতায় তার উল্লেখ করতে ভোলেননি মেহমুদ কাসুরি।
গোড়াতেই স্ত্রীর কলকাতা-যোগের কথা উল্লেখ করে যিনি হয়তো আলোচনাকে এই সুরেই বেঁধে দিতে চেয়েছিলেন!
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.