সজাগ থাকতে হবে সুদের সুযোগ নিতে
সুদের সঙ্গে সম্পর্ক কম-বেশি সকলের। সুদের নামমাত্র পরিবর্তনও স্পর্শ করে প্রত্যেককে। সুদ বাড়া বা কমার প্রভাব আমানতকারীদের উপর এক রকম। ঋণগ্রহীতাদের কাছে অন্য রকম। সুদের হেরফের নাড়া দেয় শেয়ার বাজারকে। প্রভাব ফেলে সোনা ও বন্ডের দামের উপর।
যাঁরা শেয়ার বাজারের পথ মাড়ান না, লগ্নি করেন শুধুমাত্র সুরক্ষিত স্থির আয় প্রকল্পে, তাঁদেরও এখন নিয়মিত নজর রাখতে হয় সুদের ওঠা-পড়ার উপর। লোকসান কমানো অথবা লাভ বাড়ানোর জন্য পদক্ষেপও করতে হয় চটজলদি। সজাগ না-থাকলে সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। সুদ বাড়লে বাজারে বন্ডের দাম কমে। উল্টোটা হয় সুদ কমলে।
জমা ও ঋণের উপর ব্যাঙ্কগুলিকে এখন সুদ স্থির করার স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। এই কারণে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের সুদের হারে আমরা তারতম্য দেখতে পাই। পার্থক্য হয় সরকারি ও বেসরকারি ব্যাঙ্কের সুদের হারে। সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সুদের হারের উপর নিয়ন্ত্রণ শিথিল করার পরেও দেশের বড় ব্যাঙ্কগুলি সুদকে ৪ শতাংশে আটকে রেখেছে। তবে কোনও কোনও ছোট বেসরকারি ব্যাঙ্কে সুদের হার বেড়ে হয়েছে ৫ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশ পর্যন্ত।
সুদের হারের ওঠা-পড়ার উপর নজর রেখে প্রয়োজনে তহবিল স্থানান্তর করে লাভ বাড়ানো বা লোকসান কমানো যায়। সম্প্রতি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক রেপো রেট ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমানোর প্রভাব পড়েছে আমানত ও ঋণের সুদের উপর। সময় এসেছে নতুন করে সব কিছু বুঝে নেওয়ার। ২০১২-’১৩ সালের জন্য সংস্থাগত প্রভিডেন্ট ফান্ডে সুদের হার সামান্য বাড়িয়ে করা হয়েছে ৮.৬ শতাংশ। কিছু দিন আগে পরিবর্তন করা হয়েছে ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পগুলির সুদের হারে। স্টেট ব্যাঙ্ক সম্প্রতি সুদ কমিয়েছে কয়েকটি মেয়াদের জমা প্রকল্পে।
গত প্রায় দু’বছর ধরে একনাগাড়ে বেড়েছে ঋণের উপর সুদের হার। ফলে ভাল রকম বেড়েছে বাড়ি গাড়ি ঋণেরইএমআই। যাঁরা এক রকম পরিকল্পনা করে ঋণ নিয়েছিলেন, পরে ইএমআই ক্রমাগত বাড়তে থাকায় সব কিছুই ওলটপালট হয়ে যাচ্ছিল। অবশেষে এল অবনমন। সুদ কমার পালা।
ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্ক অবশ্য সম্প্রতি পুরনো গৃহঋণ গ্রাহকদের সুযোগ দিয়েছে আগের উঁচু সুদযুক্ত প্রকল্প থেকে কম সুদযুক্ত প্রকল্পে ঋণ সরিয়ে আনার। এর জন্য অবশিষ্ট ঋণের ১ শতাংশ মাসুল দিতে হলেও আখেরে লাভই হবে ঋণগ্রহীতাদের। আগে যাঁরা উঁচু সুদে ঋণ নিয়েছেন, তাঁরা এই সুযোগ গ্রহণ করলে সুদ বাবদ তাঁদের সাশ্রয় হতে পারে অনেকটাই। স্টেট ব্যাঙ্কের গৃহঋণে বর্তমান সুদের হার ৩০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণের ক্ষেত্রে ১০.৭৫ শতাংশ, ৩০ লক্ষ ১ টাকা থেকে ৭৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণের ক্ষেত্রে ১১ শতাংশ এবং ঋণের পরিমাণ এর বেশি হলে ১১.২৫ শতাংশ। মনে রাখতে হবে, এই কম সুদের সুবিধা পাওয়ার জন্য যে-মাসুল দিতে হবে, তা এককালীন। অন্য দিকে, কম সুদের সুবিধা কিন্তু মিলবে আবার সুদ না-বেড়ে ওঠা পর্যন্ত। প্রকল্পটি এখনও চালু আছে। যাঁরা এই প্রকল্পের সুযোগ নিতে চান, তাঁদের নির্ধারিত আবেদনপত্রে আবেদন করতে হবে। সঙ্গে জমা করতে হবে ১ শতাংশ মাসুলের টাকা। এই সুবিধা পাওয়া যাবে এক বারই। গাড়িঋণে স্টেট ব্যাঙ্ক সম্প্রতি সুদ কমিয়েছে ৭৫ বেসিস পয়েন্ট।
বেশ কিছু ভুঁইফোঁড় সংস্থা চড়া সুদের লোভ দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে মোটা টাকা সংগ্রহ করছে বলে খবর আসছে। সুদের হার অত্যধিক বেশি হলেই সংস্থাটি সম্পর্কে ভাল করে খোঁজ-খবর নেওয়া প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে, বেসরকারি ক্ষেত্রে সুদের হার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে পারে ঝুঁকির পরিমাণও। দেখতে হবে, চড়া হারে কয়েক কিস্তি সুদ পাওয়ার পর আসলটি যেন খোয়া না-যায়।
আরও কয়েকটি কোম্পানি ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে গত সপ্তাহে। ইনফোসিস-এর ফলাফল বাজারে যে ক্ষতের সৃষ্টি করেছিল, তাতে খানিকটা মলম লাগিয়েছে টিসিএস-এর ফল। উন্নত ফলাফল উপহার দিয়েছে আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কও। সব ক’টি বড় মাপের বেসরকারি ব্যাঙ্ক এখনও পর্যন্ত বেশ ভাল ফলাফল প্রকাশ করেছে। মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই শুরু হয়ে যাবে সরকারি ব্যাঙ্কগুলির ফলাফল প্রকাশের পালা।
স্বাভাবিক বর্ষার আভাস মিলেছে এ বারও। বাস্তবে তা মিললে পরপর তিন বছর আমরা পাব স্বাভাবিক বর্ষা। দেশের প্রত্যেকটি মানুষের পক্ষে এটি খুবই জরুরি। এমনিতেই খাদ্যপণ্যের এখন আকাশছোঁয়া দাম। এর পর যদি বৃষ্টিতে ঘাটতি হয়, তবে ঘোর বিপদ। স্বাভাবিক বর্ষার ইঙ্গিত শেয়ার বাজারের পক্ষেও শুভ সংবাদ।
অনেক দিন ধরে শেয়ার বাজার কম-বেশি একই জায়গায় আটকে থাকায় আকর্ষণ কমছে মিউচুয়াল ফান্ডের প্রতি। বেশ হ্রাসমান এসআইপি অ্যাকাউন্টের সংখ্যা। এখনও পর্যন্ত ভাল আয়ের সম্ভাবনা থাকায় একমাত্র এফএমপি প্রকল্প বড় মাপের লগ্নি টানতে সক্ষম হচ্ছে। এ বারের বাজেটে প্রস্তাবিত রাজীব গাঁধী ইক্যুইটি প্রকল্পের আওতায় যদি ইক্যুইটি-নির্ভর মিউচুয়াল ফান্ডকে আনা হয়, তবে হয়তো কিছুটা প্রাণ ফিরতে পারে মিউচুয়াল ফান্ডের বাজারে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.