|
|
|
|
|
হই হই হলুদ |
রান্নাঘর, রূপচর্চা, স্বাস্থ্যরক্ষায় হলুদের জয় হিন্দ। বাঙালির বিয়েতেও। শুরু হল নতুন বিভাগ মসালা ম্যাজিক। আজ হলুদবরণ! |
বহু গবেষণায় জানা গেছে যে হলুদের আদি জন্মভূমি হল দক্ষিণ এশিয়ায়। অর্থাৎ ইন্দোনেশিয়া, ইন্দো চিন এবং ভারতবর্ষ সমেত এশিয়ার বিভিন্ন দেশ। হলুদের বৈজ্ঞানিক নাম কারকিউমা লঙ্গা।
প্রাচীন ভারতে, আর্য সভ্যতার সময় থেকে আমরা হলুদের ব্যবহার প্রথম লক্ষ করি। সে যুগে হলুদকে, সমস্ত শরীরের একটি বিশেষ শক্তি প্রদানকারী উপাদান হিসাবে বিশেষ সম্মান দেওয়া হত। বিয়ের সময় নারী-পুরুষ উভয়কে হলুদ মাখানোর রেওয়াজ তখন থেকেই শুরু হয়। পবিত্র, খাঁটি, বলপ্রদানকারী প্রভৃতি তকমা হলুদের গায়ে লেগে ছিল। তার দৌলতেই বিয়ের আগে হলুদের অনুষ্ঠানটি ভারতীয় বিয়ের রীতির একটি প্রধান অঙ্গ হয়ে ওঠে।
পশ্চিমি দেশগুলির ঐতিহ্যে হলুদের কোনও ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায় না। গ্রিসের লোকেরা হলুদের ব্যবহার সম্বন্ধে সে ভাবে সচেতন ছিল না। হলুদ তখন ওই দেশগুলিতে সহজলভ্য ছিল না। সেই কারণে হলুদ ব্যবহার সম্ভবও ছিল না। মার্কোপোলোর রচনার মধ্যে সর্বপ্রথম পশ্চিমি দেশে হলুদ সম্বন্ধে ঔৎসুক্য লক্ষ্য করা যায়। তবে মার্কোপোলো লিখেছেন, ভারতীয়রা জামাকাপড় রং করতে হলুদ ব্যবহার করে। এটি আংশিক সত্য। |
|
হলুদের ইতিহাস
যিশু খ্রিস্টের জন্মের দু’হাজার বছর আগেই ভারতে অথর্ব বেদে কুষ্ঠ এবং জন্ডিস-এর বিশেষ চিকিৎসায় হলুদ ব্যবহারের উল্লেখ দেখা যায়। খ্রিস্টপূর্ব ২৬০০ বছর আগে থেকে রং করার কাজে এর ব্যবহার শুরু হয়। সুতরাং, আজকালকার ছেলেছোকরার সঙ্গে কারকিউমা লঙ্গা-র তুলনা করা উচিত হবে না। আলাদা একটা সম্মান দিতে হবে। মার্কো পোলো লিখেছেন, ১২৮০ খ্রিস্টাব্দে তিনি চিনে হলুদের ব্যবহার লক্ষ করেন। সুতরাং, এ ব্যাপারে অন্তত চিনের থেকে আমরা এগিয়ে। ১৯৬৪ সালে এক ইতিহাসবিদের গবেষণা থেকে জানতে পারি, পলিনেশিয়ার দেশগুলিতে রান্নার কাজে হলুদের ব্যবহার বহু দিন থেকে প্রচলিত আছে। এর থেকে একটা অনুমান করা যায় যে, হাজার বছর আগে ভারতের বিভিন্ন বংশের সঙ্গে এদের এক সময় যোগাযোগ ছিল, যার ফলস্বরূপ গেরস্থালির কাজে হলুদের চল এখনও বর্তমান।
আফ্রিকাতে হলুদের ব্যবহার আরম্ভ হয় খ্রিস্টীয় অষ্টম শতক এবং কোনও অঞ্চলে ত্রয়োদশ শতকের পর থেকে। এ কথা ঠিক যে, বৌদ্ধ সন্ন্যাসী এবং বিভিন্ন বিদেশি পর্যটকের হাত ধরে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় হলুদের বিস্তার ঘটে। আর একটি কথা আমাদের মনে রাখতে হবে, হলুদ শুধুমাত্র বিভিন্ন কঠিন অসুখ নিরাময়ের ক্ষেত্রেই ব্যবহার হত। এবং জামাকাপড় রং করার ক্ষেত্রেও হলুদের বিশেষ ভূমিকা ছিল। রান্নাঘরে এর স্থান অনেক পরে হয়েছে। তবে বিভিন্ন খাবারকে ঠিক ভাবে সংরক্ষণ করার জন্য হলুদ প্রথম ব্যবহৃত হতে শুরু করে।
হলুদের উপকারিতা
আর্য সভ্যতার সময় থেকে আমরা দেখতে পাই, হলুদকে বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক ওষুধের প্রধান মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হত। হজমের সাহায্যকারী হিসেবে এর বিশেষ অবদান আছে। এ ছাড়াও রক্ত পরিষ্কার করতে, পিত্তস্থলী এবং ঋতুচক্র স্বাভাবিক রাখতে হলুদের সাহায্য নেওয়া হত। বাতের ব্যথা, কেটে যাওয়া, পোড়া, বিভিন্ন ক্ষতস্থানে প্রলেপ, পোকামাকড় কামড়ানো যাবতীয় বিষয়ে হলুদ এবং হলুদ থেকে তৈরি বিভিন্ন ওষুধের ব্যবহারই একমাত্র চল ছিল। হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের লোকেরা কানের বিভিন্ন সংক্রমণ, সাইনাস সমস্যার সমাধানেও হলুদ ব্যবহার করত।
সমগ্র এশিয়াতে কাঁচা এবং রান্না করা দু’রকমই খাওয়ার চল ছিল। জাফরান যেহেতু অত্যন্ত দামি, তাই হলুদ দিয়ে কাপড় রং করার রেওয়াজ শুরু হয়। পরিমাণ মতো হলুদ প্রতি দিন খেলে রক্ত সঞ্চালন ঠিক থাকে, এবং রক্তচাপের সমস্যার মোকাবিলা করা যায়। |
|
|
|
|
|