|
|
|
|
|
সরিয়া যাও হে অসুখ
শরীরের কোনও অংশ বা আড়াল-আবডাল লালচে হয়ে উঁচু হয়ে উঠেছে?
খোসা উঠছে?
ওটা সোরিয়াসিস।
ভয় বা লজ্জায় আটকে না থেকে
চিকিৎসা করান। বলছেন ডা. সুব্রত মালাকার |
|
|
এমন কিছু ত্বকের অসুখ থাকে, যা অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। সেগুলিকে তাঁরা ঠিক চিকিৎসা পদ্ধতির আওতায় আনতে পারেন না। মাঝখান থেকে প্রচুর বিভ্রান্তি ঘটে। সই রকমই একটি অসুখ সোরিয়াসিস।
সোরিয়াসিস কী
এই অসুখ হলে ত্বকটি লাল, মোটা দেখতে হয়। ওই অংশটি থেকে খোসা ওঠে। এর মানে ত্বকের ওই বিশেষ অংশে কোষের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। প্রধানত এটা কনুই, হাঁটু, মাথায় দেখা যায়। তবে কারও কারও ক্ষেত্রে সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেরই খুব কম পরিমাণে হয়, সেই কারণে এটি নিয়ে ভাবনা চিন্তা করেন না। ত্বকের সাধারণ কোনও অসুখ হিসাবেই মনে করেন। এটি শীত কালে খুব বেড়ে যায়। এই অসুখটি সারা পৃথিবীতেই দেখা যায়। কোনও বিশেষ অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। খুব কম বয়সী থেকে বৃদ্ধ যে কোনও বয়সেই হতে পারে।
এর কারণ কী
• ঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি। তবে প্রধানত রোগটি বংশগত।
• তবে পরিবেশগত কারণেরও বিশাল ভূমিকা রয়েছে। যেমন, মানসিক চাপ। একই পরিবারের একাধিক লোক সোরিয়াসিসে আক্রান্ত হয়েছে, এমন হলে, এটি একটি বড় সমস্যা তৈরি করে।
• শরীরের নিজস্ব প্রতিরোধ ক্ষমতাটিরও বড় ভূমিকা আছে। যে ব্যক্তির সাধারণ স্বাস্থ্য খুব ভাল, তার সোরিয়াসিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম।
• এই অসুখে কোনও খাবারই বন্ধ থাকে না। কিন্তু মদ এবং সিগারেট একেবারে নিষিদ্ধ।
কী ভাবে বুঝবেন সোরিয়াসিস হয়েছে
• ত্বকের কোনও একটি অংশ উঁচু হয়ে উঠবে। প্রচুর খোসা উঠবে। আলপিনের মত ছোট ছোট রক্তক্ষরণের জায়গা দেখা যাবে।
• শরীরের যে কোনও অংশেই হতে পারে। তবে কোথাও কেটে গেলে সেই অংশে সোরিয়াসিস হতে পারে। প্রথম সূত্রপাত হিসাবে এটি দেখা যায়।
• শরীরের বিভিন্ন খাঁজে এটি হতে পারে। যেমন, বাহুমূল, ঊরু ও জঙ্ঘার সন্ধিস্থল এই অংশগুলিকে আমরা গুরুত্বই দিই না।
• নখের মধ্যে ছোট ছোট গর্তাকারে দেখা যায়। নখের রং হলদেটে হয়ে যায়।
• হাতের তালু, পায়ের পাতা বা মাথার মধ্যে হতে পারে। অনেকে খুশকির সঙ্গে এটিকে গুলিয়ে ফেলে।
সোরিয়াসিস কি শরীরের বিভিন্ন সন্ধিস্থলের ক্ষতি করতে পারে?
দশ থেকে পঁয়ত্রিশ শতাংশ লোকের মধ্যে শরীরের বিভিন্ন সন্ধিস্থলে (জয়েন্ট) সোরিয়াসিস হয়, যেমন হাঁটু, গোড়ালি এবং হাত। এ জায়গাগুলিতে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। সাধারণত ত্বকের ওপরের অংশটিতে প্রদাহ আগে দেখা যায়। তার পরে শরীরের বিভিন্ন জয়েন্ট-এ দেখা যায়।
সোরিয়াসিস কী ভাবে চিহ্নিত করব
সাধারণত চোখে দেখেই বোঝা যায়। যদি কোনও সন্দেহ থাকে, তবে বায়োপ্সি করা যেতে পারে।
চিকিৎসা পদ্ধতি
অসুখটি কতখানি গভীর, তার ওপর নির্ভর করছে কোন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করা হবে। যদি দেখা যায়, দশ ভাগের কম হয়েছে, তবে মোটামুটি ভাবে শুধুমাত্র লাগানোর ওষুধই প্রয়োগ করা হয়। যদি দেখা যায় রোগটি শতকরা কুড়ি ভাগ ছাড়িয়ে গিয়েছে, তবে লাগানোর ওষুধের সঙ্গে খাওয়ার ওষুধও দেওয়া হয়। যদি দেখা যায় শরীরের বিভিন্ন জয়েন্ট-এ হয়েছে, তবে আলট্রাভায়োলেট রে (অতিবেগুনি রশ্মি) প্রয়োগ করা হয়। তার সঙ্গে খাওয়ার ওষুধও দিতে হবে। যে হেতু এই রোগের অনেক চিকিৎসা পদ্ধতি আছে, তাই ডাক্তার-রোগীর পরামর্শের ওপর নির্ভর করে কোন পদ্ধতিটি দ্রুত আরোগ্য আনবে। রোগীর সহযোগিতা একান্ত কাম্য।
লাগানোর ওষুধের মধ্যে আছে
স্টেরয়েড জাতীয় ক্রিম, ভিটামিন ডি থেকে তৈরি এক ধরনের ক্রিম এবং মাথায় লাগানোর জন্য এক ধরনের লোশনও পাওয়া যায়। খাওয়ার ওষুধের মধ্যে প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর কাজ করে, এমন কিছু ওষুধ রয়েছে। অনেকের খুবই চুলকোয়। তাঁদের জন্য অ্যান্টি-অ্যালার্জিক ওষুধ বরাদ্দ।
অন্যান্য চিকিৎসা
আলট্রাভায়োলেট থেরাপি সপ্তাহে দুই-তিন বার প্রয়োগ করতে হবে। এক্সজাইমার ৩০৮ লেসারটি খুবই ফলপ্রদ।
মনে রাখবেন
এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি অসুখ এবং আমাদের মানসিক চাপের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। মানসিক চাপের বৃদ্ধির সঙ্গে রোগের বৃদ্ধি ঘটে। কখনও খুঁটবেন না বা ওপরের ছালটি তুলতে যাবেন না। ছালটি ওঠালে রোগ বৃদ্ধি পায়। রোগটি দীর্ঘমেয়াদি হলেও ঠিক মতো চিকিৎসা করালে অনেক অনেক ভাল থাকবেন। |
যোগাযোগ: ২৩৫৮-৮০১০, ৯৪৩৩০২৩৮৭৯
সাক্ষাৎকার: কস্তুরী মুখোপাধ্যায় ভারভাদা |
|
|
|
|
|