|
|
|
|
|
খানাখন্দ এড়িয়ে চলুন |
ভাবছেন, খাদ্যে বিষক্রিয়া শুধু মশলাদার খাবার থেকেই হয়? ভুল। জীবাণুরা এমন অনেক জায়গায়
ঘাপটি মেরে থাকে, যা আপনি সহজে টেরই পাবেন না। আসুন, খানিক গোয়েন্দাগিরি হোক। |
গরমে রাস্তায় বেরিয়ে তেষ্টায় প্রাণ আইঢাই। চোখের সামনে সাজানো রঙিন পানীয়, রসালো তরমুজ, পেঁপে। অথচ খাওয়ার উপায় নেই। পইপই করে কাগজে, টিভিতে, পোস্টারে আমাদের সতর্ক করা হচ্ছে রাস্তার কাটা ফল, রঙিন পানীয় একদম নয়। খেলেই হই হই করে জীবাণুরা ঢুকে পড়বে আমাদের শরীরের মধ্যে। আর তার পর? ডাক্তার, কড়া কড়া ওষুধ, ইঞ্জেকশন, এতেও না কমলে সোওওজা হাসপাতাল। কিন্তু রাস্তার ফল, পানীয়কে বিষবৎ পরিত্যাগ করলে, চোখের সামনে যা দেখছি, সব ধরে ধরে জীবাণুমুক্ত করলেও কি ছাড় মেলে ফুড পয়জন-এর হাত থেকে? মেলে না। কারণ আমরা ছোট ছোট বিষয়গুলোকেই এড়িয়ে যাই। ফলে, খাদ্যে বিষক্রিয়ার প্রধান উপসর্গ, অর্থাৎ, জ্বরের সঙ্গে বমি আর ডায়রিয়ার হাত থেকে রেহাই মেলে না।
ফ্রিজে খাবার জমাবেন না: ফ্রিজে খাবার পুরে অনেক দিন নিশ্চিন্তে বসে থাকবেন না কিন্তু। চিকেন এক থেকে দু’দিন, রেড মিট তিন থেকে পাঁচ দিন, ডিম তিন থেকে পাঁচ সপ্তাহ, আর মাখন বড় জোর এক থেকে তিন মাস। তবে অবশ্যই দেখে নিতে হবে আপনার ফ্রিজের তাপমাত্রা যথাযথ আছে কিনা। আকাদেমি অব নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়টেটিক্স বলছে, ফ্রিজের তাপমাত্রা হওয়া উচিত কমপক্ষে ৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তারও কম। আর ফ্রিজার শূন্য ডিগ্রি ফারেনহাইট, বা তারও কম। এর জন্য ফ্রিজের মাঝের তাকে একটা থার্মোমিটার রেখে দিতে পারেন। খাবার সংরক্ষণ করুন তাদের নিজস্ব কৌটোয়। অর্থাৎ জ্যামের কৌটো থেকে জ্যাম বার করে অন্য কোনও কৌটোয় রাখবেন না। কারণ মূল কৌটোর গায়েই লেখা থাকে এটি কত দিন পর্যন্ত ঠিক থাকবে।
একাধিক বাজারের ব্যাগ: পুনর্ব্যবহারযোগ্য ব্যাগ যে পরিবেশের পক্ষে খুব ভাল, এত দিনে আমরা জেনে গিয়েছি। এই ব্যাগ কিন্তু আমাদের শরীরের জন্য সব সময় ভাল নয়। আকাদেমি অব নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়টেটিক্স জানাচ্ছে, ছয় জন মানুষের মধ্যে মাত্র এক জন এই ধরনের শপিং ব্যাগ নিয়মিত পরিষ্কার করে। ফলে মহানন্দে ব্যাকটেরিয়ারা ব্যাগের মধ্যে ছানাপোনা নিয়ে সংসার পাতে। তার ওপর আবার একই ব্যাগ নানা কাজে ব্যবহার করলে কাঁচা মাছ-মাংসের গায়ে লেগে থাকা রক্ত, ময়লা ইত্যাদি অন্যান্য খাবার বা ফলের মধ্যে মেশে। আর নানা ধরনের অসুখ তৈরি করে। উপায়? এই ধরনের ব্যাগ ব্যবহার করতে চাইলে তাকে নিয়মিত পরিষ্কার করুন, হয় ওয়াশিং মেশিনে, নয়তো গরম জলে সাবান গুলে তার মধ্যে ডুবিয়ে। আর একাধিক ব্যাগ ব্যবহার করুন। একটা রাখুন ডিম, মাছ, মাংস ইত্যাদির জন্য। অন্যটা থাকুক সবজি, ফল ইত্যাদির জন্য। জিনিসপত্র বের করে ব্যাগগুলোকে একটা পরিষ্কার, শুকনো জায়গায় তুলে রাখুন।
ইনসুলেটেড ব্যাগ ব্যবহার: খাবারদাবার ঠিক রাখার একটা মোক্ষম উপায় হল তাদের উপযুক্ত তাপমাত্রায় রেখে দেওয়া। কিন্তু দোকান থেকে বেরিয়ে বাড়ি আসার পথে সেই তাপমাত্রা তো বজায় থাকে না। তা ছাড়া অনেক সময়ই গাড়িতে খাবার জিনিস রেখে আমরা অন্য কাজে চলে যাই। এই সমস্যা কিছুটা হলেও এড়ানো যায় ইনসুলেটেড ব্যাগ (খাবারদাবার বহন করার জন্য এক বিশেষ ধরনের ব্যাগ) সঙ্গে রাখলে। এতে আইসক্রিমের মতো বিভিন্ন দুগ্ধজাত পণ্য, মাংস ইত্যাদি নষ্ট হয়ে যায় না। |
|
অতিরিক্ত অ্যান্টাসিড নয়: যাঁরা নিয়মিত অ্যান্টাসিড ব্যবহার করেন বুক জ্বালা আর অ্যাসিডিটি কমাতে, তাঁদেরই ফুড পয়জন-এ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কথাটা শুনতে অবিশ্বাস্য ঠেকলেও, সত্যি। মায়ো ক্লিনিক জানাচ্ছে, খাবার থেকে যে সমস্ত রোগ তৈরি হয়, তাদের আটকানোর জন্য আমাদের শরীরের মধ্যেই কিছু স্বাভাবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা আছে। এবং পাকস্থলীর অ্যাসিড আমাদের শরীরের অভ্যন্তরে থাকা সালমোনেলা’র মতো জীবাণু তাড়াতে দারুণ কাজ করে। অ্যান্টাসিড এই পাকস্থলীর অ্যাসিডের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। ফলে এই জীবাণুরা গিয়ে ঢোকে আমাদের অন্ত্রে। তা হলে কি একেবারেই অ্যান্টাসিড খাবেন না? অবশ্যই খাবেন। তবে সে রকম প্রয়োজন পড়লে। অতিরিক্ত সাবধানী হয়ে আগেভাগে খাওয়ার অভ্যেস ছেড়ে দিন।
পোষ্য থেকে সংক্রমণ: বাড়ির পোষ্যটি আপনার ভারী আদরের। চার দিকে তার অবাধ গতি। বাদ পড়ে না কিচেনের কাউন্টার টপ, এমনকী খাওয়ার টেবিলটিও। কিন্তু জানেন কি, ওদের গা এবং পায়ের নোংরা বাড়িয়ে তোলে আপনার অসুখের সম্ভাবনাও। তা ছাড়া প্রাণীরা ক্যাম্পিলোব্যাকটর এনটারিটিস-এর বাহক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই জীবাণুকে বিভিন্ন পেটের অসুখের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাই রান্নার জায়গা আর ডাইনিং টেবিলের আশপাশ থেকে ঝামর ঝামর লোমওয়ালাটিকে দূরে রাখুন। আর অবশ্যই পোষ্যের সঙ্গে সময় কাটানোর পর ভাল করে হাত ধুয়ে নিন।
পেপার টাওয়েল আর সাবানজল: প্রত্যেক দিন রান্নার জায়গাটির চার পাশ মুছে রাখতে বলা হয় কেন? অবশ্যই জীবাণু তাড়াতে, জীবাণুকে চার পাশে ছড়িয়ে দিতে নিশ্চয়ই নয়। কিন্তু আমরা যে ভেজা স্পঞ্জ বা ন্যাতা ব্যবহার করি, তাতে এই শেষের কাজটিই ভাল ভাবে হয়। তেল-মশলা তোলার জন্য পেপার টাওয়েল আর সাবান জল ব্যবহার করা অনেক ভাল। খাওয়ার সোডা দিয়েও পরিষ্কার করা যায়। তবে আপনি যদি অতিরিক্ত কাগজ নষ্ট করার ব্যাপারে খুঁতখুঁতে হন, তা হলে স্পঞ্জটিকে নিয়মিত সাবান জলে ধুয়ে এবং শুকিয়ে জীবাণুমুক্ত করে নিতে পারেন। এ ছাড়াও মাইক্রোওয়েভ, ফ্রিজ, কুকটপ ইত্যাদি নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন। এতে জীবাণু ছড়াতে পারবে না। |
|
|
|
|
|