বাড়ি বিক্রির ১০ লক্ষ টাকা স্কুলকে দান
‘প্রাণের চেয়ে প্রিয়’ স্কুলকে নিজের বাড়ি বিক্রির ১০ লক্ষ টাকা দান করলেন তুফানগঞ্জ নৃপেন্দ্রনারায়ণ মেমোরিয়াল হাইস্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক অজয়কুমার শতপথী। বিপত্নীক অজয়বাবু এখন বাড়ি ভাড়া করে থাকেন।
বৃহস্পতিবার ছিল স্কুলের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠান। সেখানেই স্কুল-কর্তৃপক্ষের হাতে তিনি ওই টাকার চেক তুলে দেন। ২০০৮ সালে ওই স্কুল থেকেই অবসর নেন অজয়বাবু। নিজের স্কুলের দুঃস্থ ও মেধাবী পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়াতেই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। অজয়বাবু বলেন, “এই স্কুল আমার প্রাণের চেয়ে প্রিয়। এখান থেকে আমি অনেক কিছু পেয়েছি। এখানকার ছাত্রছাত্রীরা আমার সন্তানের মতো। তাদের মধ্যে যারা দুঃস্থ ও মেধাবী, তাদের পাশে দাঁড়াতে বাড়ি বিক্রির টাকাটা দিয়েছি। এটা এমন কী আর বড় ব্যাপার। স্কুল-কর্তৃপক্ষকে বলেছি, ওই টাকার সুদ থেকে দুঃস্থ ও মেধাবীদের বৃত্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে।”
স্কুল সূত্রের খবর, ওই টাকা ব্যাঙ্কে ‘ফিক্সড’ করে রাখা হবে। প্রতি বছর জমানো টাকা থেকে প্রাপ্য সুদে স্কুলের দুঃস্থ, মেধাবী পড়ুয়াদের বৃত্তি দেওয়া হবে। বৃত্তির নামকরণ হচ্ছে অজয়বাবুর প্রয়াত স্ত্রী শ্যামলীদেবীর নামে। এ দিন ছিল স্কুলের ৯৭তম প্রতিষ্ঠা দিবস। অনুষ্ঠানে আবেগবিহ্বল হয়ে পড়েন তাঁর সহকর্মীরাও। অজয়বাবুর মতো এক জনের সঙ্গে কাজ করেছেন বলে তাঁরা গর্বিত।
অজয়বাবু অবশ্য আদতে কোচবিহারের লোক নন। তাঁর আদি বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকে। অজয়বাবুর বাবা কর্মসূত্রে অসমের গৌরীপুরে থাকতেন। সেখানেই পড়াশোনা অজয়বাবুর। গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ভোলানাথ কলেজ থেকে স্নাতক হন। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। আলিপুরদুয়ার মহকুমার একটি স্কুলে শিক্ষক হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৯৪ সালে তুফানগঞ্জ নৃপেন্দ্র নারায়ণ মেমোরিয়াল হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নেন। তাঁর স্ত্রী শ্যামলীদেবীও আলিপুরদুয়ারের একটি স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন। তুফানগঞ্জ শহরের নিউটাউন এলাকায় বাড়ি করেন অজয়বাবু। কয়েকবছর আগে স্ত্রীর মৃত্যু হয়। ছেলে প্রিয়দর্শী বিজ্ঞানী। ফ্রান্সে থাকেন। মেয়ে মাদ্রাসা শিক্ষিকা অলিভিয়ার বিয়ে হয়ে গিয়েছে।
ওই শিক্ষকের সহকর্মীরা জানান, পুরো বাড়িতে একরকম নিঃসঙ্গ জীবন কাটাচ্ছিলেন অজয়বাবু। শেষ পর্যন্ত তিনি সুখ-দুঃখের স্মৃতি বিজড়িত ওই বাড়ি বিক্রি করে নিজের পুরনো স্কুলের পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। সন্তানেরাও কেউ আপত্তি করেননি। এখন অজয়বাবুর ঠিকানা ভাড়া বাড়ি। অজয়বাবুর কথায়, “৬৫ বছর চলছে। আর কতদিনই বা বাঁচব। ছেলে বিদেশে। মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ওঁরা কেউ আমার পরিকল্পনা নিয়ে এতটুকু আপত্তি না-করায় বাড়ির ঝামেলা চুকিয়ে ফেলা সহজ হয়েছে। জীবনের বাকি দিনগুলি ভাড়া বাড়িতেই কাটিয়ে দেব।”
স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক গোপাল বিদ্যানন্দ জানান, চাকরি জীবনেও অজয়বাবু দুঃস্থদের পাশে দাঁড়াতেন। অনেককে বই কিনে দিতেন। কেউ বেতন দিতে না পারলে তিনি দিয়ে দিতেন। ছাত্রদের পাশে দাঁড়ানো তাঁর বহুকালের অভ্যেস। এ দিন যা টাকা দিয়েছেন তার সুদে প্রতি মাসে বৃত্তি দেওয়া হবে। এ দিনের অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক সৌজন্যের নজিরও মিলেছে। একই মঞ্চে সিপিএমের পুর চেয়ারম্যান সুভাষ ভাওয়াল এবং তৃণমূল বিধায়ক অর্ঘ্য রায়প্রধান উপস্থিত ছিলেন। বিধায়ক বলেন, “এখানে রাজনীতির ব্যাপার নেই। নিছক স্কুলের অনুষ্ঠান।” আর সুভাষবাবু বলেন, “আমি স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র। সেই টানেই ছুটে এসেছি। বিধায়কের সঙ্গে সৌজন্যমূলক কথাবার্তা হয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.