উত্তর দিনাজপুর ও মালদহের দু’টি বড় সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ এবং ভেন্টিলেশন-এর ব্যবস্থা না থাকায় প্রায় ১৪ ঘণ্টা এক রকম বিনা চিকিৎসায় কাটাতে হল এক প্রসূতিকে। একের পর এক হাসপাতাল তাঁকে অন্য হাসপাতালে ‘রেফার’ করে দেওয়ায় ওই প্রসূতিকে বুধবার রাত ১১টা থেকে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার মধ্যে প্রায় চারশো কিলোমিটার পাড়ি দিতে হয়েছে অ্যাম্বুল্যান্সে। উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জের বাসিন্দা মৌমিতা মল্লিক নামে ওই মহিলাকে শেষ পর্যন্ত শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে তাঁর পুত্র সন্তান হয়েছে। মৌমিতাদেবী ও তাঁর সন্তান সুস্থ বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মৌমিতাদেবীর যে শারীরিক অবস্থা ছিল, তাতে প্রসবের পরে তাঁকে আইসিইউ বা ভেন্টিলেশন-এ রাখার দরকার হতে পারত। কিন্তু সেই ব্যবস্থা না থাকায় বুধবার রাত ৮টা নাগাদ তাঁকে রায়গঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরে সেখান থেকে তাঁকে ‘রেফার’ করে দেওয়া হয় মালদহ মেডিক্যাল কলেজে। কিন্তু মালদহ মেডিক্যালেও ওই প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো নেই। তাই রাত ১টা নাগাদ সেখানে পৌঁছনোর পরে আবার মৌমিতাকে ‘রেফার’ করা হয় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে। |
মৌমিতাদেবীর মামা তারক কুণ্ডুর অভিযোগ, “দু’টি সরকারি হাসপাতাল যে উদাসীনতা ও গাফিলতির পরিচয় দিয়েছে, তাতে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। তাই শেষ পর্যন্ত আরও একটি সরকারি হাসপাতালে ভাগ্নীকে নিয়ে যেতে চাইনি। তাকে নার্সিংহোমে ভর্তি করিয়েছি।” এই দিন ঘটনার কথা জানাজানি হওয়ার পরে কংগ্রেসের একদল নেতা-সমর্থক রায়গঞ্জ হাসপাতালে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। সেখানে যান তৃণমূল নেত্রী কেয়া চৌধুরী। রায়গঞ্জের তৃণমূল নেতা তিলক চৌধুরীর স্ত্রী কেয়াদেবীকে তখন হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ। পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ওই প্রসূতি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। আমাদের হাসপাতালে আইসিইউ চালু হয়নি। সেই কারণে তাঁকে কাছাকাছি মালদহ মেডিক্যাল কলেজে রেফার করানো হয়। সেখানেও যে আইসিইউ, ভেন্টিলেশন নেই, তা জানা ছিল না।” মালদহ মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ জানান, এই হাসপাতালে আইসিইউ ও ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা করতে প্রস্তাব গিয়েছে। এখনও সেই ব্যবস্থা করা যায়নি। তারকবাবুর অভিযোগ, “রায়গঞ্জ হাসপাতালের চিকিৎসকের জানা উচিত ছিল মালদহ মেডিক্যালে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো নেই। যাঁদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতায় এমন হল তাঁদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিক।”
এদিন, বিক্ষোভকারীদের তরফে রায়গঞ্জ বিধানসভা যুব কংগ্রেস কমিটির সভাপতি অভিজিৎ সাহা বলেন, “রোগিণীকে হয়রানির প্রতিবাদে আমরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলাম। তখন কেয়াদেবী গিয়ে আমাদের গালি দেন। আমরা তার প্রতিবাদ করায় উনি ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলেছেন।” কেয়াদেবীর বক্তব্য, “আমি বিক্ষোভ হচ্ছে শুনে হাসপাতালে যাই। তখন কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের একাংশ রাজনৈতিক কারণে আমাকে হেনস্থার চেষ্টা করে। আমি বিষয়টি জেলা প্রশাসন ও রাজ্য মহিলা কমিশনে জানাচ্ছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনও গাফিলতি ছিল কিনা তা দেখা হচ্ছে।” |