ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করে জিতে ওঠা যুবরাজ সিংহ মাঠে ফিরেই দেখলেন তাঁর আইপিএল টিম আক্রান্ত। টেবিলের তলায় পড়ে থাকা ডেকান চার্জার্সের কাছে হারের পর মুমূর্ষু রোগীর মতো তাদের ঢুকিয়ে নেওয়া হল অপারেশন থিয়েটারে। কত দিন এ ভাবে লাল আলো জ্বেলে পড়ে থাকতে হবে কেউ জানে না। কত দিন পরে আবার ব্যাট হাতে দেখা গেল যুবরাজকে। পুণে ওয়ারিয়র্সের ক্রিকেটারদের সঙ্গে হাত মেলালেন, তাঁদের বুকে জড়িয়ে ধরলেন। নেটে ঢুকে দু’একটা বলও মারলেন। দেখা গেল মাঠে নামার আগে পুণে টিম হার্ডল করার সময় যুবিকেও ডেকে নিয়েছে। এর চেয়ে জলজ্যান্ত মোটিবেশন আর কী হতে পারে! জীবনযুদ্ধে জিতে আসা একটা লোক, আমাদের উদ্বুদ্ধ করছে। কিন্তু যুবরাজের এখনকার যে স্লোগান ‘লিভ স্ট্রং’ সেই কাঠিণ্যটাই পাওয়া গেল না পুণের খেলার মধ্যে।
সবথেকে চোখে লাগার মতো হচ্ছে, পর-পর দু’টো ম্যাচে পুণে টিমটাকে ভীষণ বিপন্ন দেখাল। অথচ দিল্লির মাঠে এই টিমকেই কত টগবগে দেখিয়েছে। মুম্বইয়ের মাঠে মুম্বইকে হারানোর সময় দারুণ আক্রমণাত্মক লেগেছে। সেই আগুনটাই যেন তাদের খেলা থেকে উধাও। যে ডেকান চার্জার্স এর আগে ছ’টা ম্যাচের একটাও জেতেনি, যাদের একমাত্র পয়েন্ট এসেছিল ইডেনের বৃষ্টিতে ধুয়ে যাওয়া ম্যাচ থেকে, তারাই কি না হারিয়ে দিয়ে চলে গেল!
পুণের কোনও রবিন পিটারসেন বা অম্বাতি রায়ডুও নেই যে, শেষ দুই ওভারে দুর্ধর্ষ মেরে হারা ম্যাচ জিতিয়ে দেবে। তাদের আছে জেসি রাইডার। যাঁর রান আটকে যাওয়ায় টিমের ব্যাটিংকে বিভ্রান্ত দেখাচ্ছে। আর আছেন স্টিভ স্মিথ যিনি আগে হারা ম্যাচ জিতিয়েছেন। কিন্তু তিনি নামছেন এত পরে যে, ততক্ষণে ম্যাচের দফারফা সারা হয়ে যাচ্ছে। আগের দিন সহবাগের দিল্লি চার ওভার বাকি থাকতে হারিয়ে দিয়ে গিয়েছিল আট উইকেটে। এ দিন ডেকান হারাল ১৮ রানে। দু’দিনই ধাক্কা খেল রানরেট। আর সেমিফাইনালের রাস্তায় রানরেট এমন বস্তু যা কখন ঝুপ করে ফয়সলাকারী হিসেবে ভেসে উঠে স্বপ্ন খানখান করে ভেঙে দেবে কেউ জানে না! |
এ দিনও যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলেন স্মিথ। মাত্র ১৩ বলে করলেন ২৬। কিন্তু তিনি যখন ক্রিজে এলেন ততক্ষণে আস্কিং রেট লাফিয়ে পৌঁছে গিয়েছে ওভার প্রতি ১২-র ওপর। স্মিথ এসে তিনটে ছয় মারলেন। চতুর্থটা মারতে গিয়ে আউট হয়ে গেলেন। আর একটু আগে এলে প্রতি বলে বাড়তে থাকা আস্কিং রেটের সঙ্গে ঝুঝতে ঝুঝতে তাঁকে ব্যাট করতে হত না। প্রতি বলে ঝুঁকি নেওয়ার প্রশ্ন থাকত না। সৌরভ নিজে মোটামুটি শুরু করেছিলেন। মনপ্রীত গোণিকে ছয় মারলেন। কিন্তু আজও লম্বা ইনিংস খেলতে পারলেন না। উথাপ্পাকে এত টাকা দিয়ে কিনেছে পুণে। দু’বছরে একটাও জিতিয়েছেন কি না কেউ মনে করতে পারছে না। ম্যাচ শেষে দাগ আউটে বসা সৌরভকে বিহ্বল দেখাচ্ছিল। আউট হয়ে ফিরেছেন কখন! কিন্তু তখনও প্যাড খোলেননি।
অশোক দিন্দা না থাকায় পুণের বোলিংয়ে সেই আগুনটাও যেন তৈরি হচ্ছে না। আলফানসো থমাস টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের খুব উপযোগী বোলার হতে পারেন। কিন্তু তিনি প্রধানত রান আটকানোর বোলার।
মুরলী কাতির্ককে বসিয়ে ভুবনেশ্বর কুমারকে খেলানোর সিদ্ধান্তটাও কাজে এল না। ডেকানের হয়ে সর্বোচ্চ স্কোর করে গেলেন ক্যামেরন হোয়াইট। ৪৬ বলে ৭৮। বিদেশি ব্যাটসম্যান মানেই উপমহাদেশের উইকেটে স্পিন খেলতে গিয়ে পা ঠকঠক করবে। কিন্তু ডান-হাতি হোয়াইটকে বাঁ হাতি স্পিনার খেলতেই হল না কার্তিক না থাকায়। সৌরভ দ্রুত টের পাচ্ছেন, অধিনায়কের পৃথিবীটা সেই আগের মতোই আছে। যখন জিতছ, জিতছ ঠিক আছে। যা সিদ্ধান্ত নেবে, ধন্য ধন্য হবে। কিন্তু হারতে শুরু করলেই দ্রুত রং পাল্টে যায়। মাত্র ক’দিন আগেই স্যামুয়েলসকে তিনি যে ভাবে ব্যবহার করছিলেন তার প্রশংসা হচ্ছিল। এখন সমালোচিত হচ্ছে। কথা উঠছে, ক্যালাম ফার্গুসনের মতো প্লেয়ার বসিয়ে কেন স্যামুয়েলসকে টানা হচ্ছে? স্যামুয়েলস বোলিংয়ের দিচ্ছেন চার ওভারে ৩৯। ব্যাটিংয়ে কোনও বিগ হিট নেই। ১৭৭ তাড়া করার দিনেও ডট বল খেলে যাচ্ছেন।
পুণের এখনও সাতটা ম্যাচ বাকি। এখনই তারা শেষ চারের দৌড় থেকে ছিটকে গেল এমন অবশ্যই বলা যাবে না। কিন্তু সাতটার মধ্যে অন্তত চারটে জিততে হবে। বাকি থাকা ম্যাচগুলো সবই কঠিন ম্যাচ হয়ে গেল ডেকানের কাছে হারায়। পরের ম্যাচ ডেকানের সঙ্গে কটকেই। দ্রুত জয়ের রাস্তায় ফিরতে হবে সৌরভদের। কটকে জয়ের মুখ দেখতে না পারলে ফের ঘোর অন্ধকার ঘনিয়ে আসবে পুণের মাথার ওপর। ইডেনের আগে দু’টো ম্যাচ রয়েছে। সেই দু’টো ম্যাচ জিতলে সৌরভদের নিয়ে হইচইটা ফিরে আসবে। সেই অবস্থায় ঘরের মাঠে শাহরুখ খানের সামনে প্রবেশ করাটা অনেক বেশি সম্মানীয় প্রবেশ হবে।
৯ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে পুণে এখন টেবিলে ছয় নম্বরে। নাইট রাইডার্স দুইয়ে। গম্ভীররা পুণের চেয়ে একটা ম্যাচ কম খেলেছেন। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স আবার দু’টো ম্যাচ কম খেলেছে। পুণের এখন সবথেকে কঠিন দু’টো ম্যাচ হচ্ছে, বেঙ্গালুরু এবং মুম্বই। দু’টোই হোম ম্যাচ। আবার এ দিনের হার দেখে মনে হচ্ছে, ডেকানের কাছে পিছলে যাওয়ার পর কোনটা সহজ আর কোনটা কঠিন! সবই তো মরণ-বাঁচন লড়াই! রাত একটাতে মাঠ ছাড়ার সময় দেখা গেল সমর্থকেরা তখনও পুণে-পুণে বলে চিৎকার করছেন। তাঁদের প্রিয় টিমের নীল পতাকা উড়াচ্ছেন। সৌরভদের কাছে যা মনোবল বাড়ানোর দাওয়াই হতে পারে। বিপর্যয়ের মধ্যেও জনতা ছেড়ে চলে যায়নি! |