বালির বিতর্কিত জয়পুর বিল যে অনেকটাই ভরাট করা হয়েছে, পরিদর্শনের পরে সে বিষয়ে নিশ্চিত হাইকোর্ট-নিয়োজিত কমিটি। একটি জনস্বার্থের মামলার প্রেক্ষিতে জলাভূমিগুলির অবস্থা খতিয়ে দেখতে হাইকোর্টের নির্দেশে ১২ সদস্যের কমিটি তৈরি করেছিল রাজ্য সরকার। তাদের ১২ সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলে আদালত। বৃহস্পতিবার সকালে ওই কমিটির চার জন সদস্য জয়পুর বিল ঘুরে দেখে জানিয়েছেন, খুব তাড়াতাড়িই তাঁরা রিপোর্ট তৈরি করে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে দেবেন। সেই রিপোর্ট কলকাতা হাইকোর্টে জমা পড়বে। |
রাজ্য সরকারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে জয়পুর বিলের প্রায় ১২০০ বিঘা জুড়ে তৈরি হচ্ছে বেসরকারি সংস্থার আবাসন ও হোসিয়ারি পার্ক। সম্প্রতি পার্কের জমি পরিদর্শন করে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, হোসিয়ারি পার্কের জমি নিয়ে বিতর্ক নেই। যদিও এ দিন জয়পুর বিল পরিদর্শন করে কমিটির সদস্য, জলাভূমি-বিশেষজ্ঞ ধ্রুবজ্যোতি ঘোষ বলেন, “ঐতিহ্যবাহী জয়পুর বিলে ক’দিন আগেও নৌকা চলত। মাছচাষ হত। এখন তার চিহ্নই নেই। জায়গাটি নিঃসন্দেহে ভরাট হয়েছে।” একই মত নদী-বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্রেরও। তিনি বলেন, “রাজ্য জুড়ে যে ভাবে জলাভূমি ভরাট হচ্ছে, তা বাস্তুতন্ত্রের পক্ষে ভয়ানক।” দু’জনেই জানান, বিল ও পুকুরের সংজ্ঞাই আলাদা। বিল প্রকৃতির সৃষ্টি, যা ভূগর্ভের জলস্তরকে সমৃদ্ধ করে। বিশেষজ্ঞেরা জানান, এই জয়পুর বিলের উপর দিয়েই গিয়েছে সরস্বতী নদী। এখানেই আছে সুতি খাল। আগে বর্ষায় দামোদরে প্লাবনের বাড়তি জল জয়পুর বিলে ঢুকত। কল্যাণবাবু বলেন, “আবাসন প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে পরিবেশ দফতরের কোনও রকম ছাড়পত্র ছাড়াই।”
গত বছর মে মাসে জয়পুর বিল ভরাটের প্রতিবাদ করে খুন হন বালির তৃণমূল নেতা তপন দত্ত। এর পরেই বিতর্কিত ওই বিলের কতটা ভরাট হয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে সেখানে যান পরিবেশমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষদস্তিদার। রাজ্য জুড়ে জলাভূমিগুলি কী ভাবে ধ্বংস হচ্ছে, তা নিয়ে হাইকোর্টে গত সেপ্টেম্বরে জনস্বার্থের মামলা করেছিল দক্ষিণ কলকাতার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সংস্থার সাধারণ সম্পাদক কুণাল গুহরায় বলেন, “আইনের ফাঁক গলে সরকারি ব্যবস্থাপনায় কী ভাবে জলাভূমি ভরাট হচ্ছে, তার চিত্র আদালতের কাছে পেশ করেছিলাম। সঙ্গে কয়েকটি উদাহরণও দিয়েছিলাম। তার মধ্যে ছিল তপনবাবুর খুনের ঘটনাও।” গত মার্চে সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জয়নারায়ণ পটেল ও বিচারপতি সম্বুদ্ধ চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যকে একটি কমিটি গঠন করে অবস্থা খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দেন। |