সম্পাদকীয় ১...
ঘুম ভাঙিলে হয়
পাড়ায় বিচক্ষণ ডাক্তার থাকিতে ছেলেছোকরাদের নিকট যাওয়ার যে প্রয়োজন নাই, তাহা পরশুরাম বহু পূর্বেই জানাইয়া দিয়াছিলেন। অভ্যাসটি অবশ্য থাকিয়া গিয়াছে। যেমন, দিনকয়েক পূর্বেই দেশের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অধ্যাপক কৌশিক বসু বলিয়াছিলেন, ভারতে ২০১৪ সালের পূর্বে আর আর্থিক সংস্কারের আশা না করাই ভাল। রাজনীতির ঘূর্ণিপাকে সংস্কারের সম্ভাবনা তলাইয়া গিয়াছে। মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক বসুর ভাষণটি প্রায় শেষ হইতে পারে নাই, তাহার পূর্বেই কংগ্রেস এই মন্তব্যের ভিত্তিহীনতা প্রমাণে ব্যস্ত হইয়া পড়িয়াছিল। শ্রীবসুও, সম্ভবত সরকারের চাপেই, তাঁহার বক্তব্য হইতে খানিক সরিয়া আসেন; জানান যে আগামী ছয় মাসেই সংস্কারের দেখা মিলিবে। প্রধানমন্ত্রীও আমলাদের খানিক বকিয়া দিলেন। পাড়ার ডাক্তার যে রোগটির কথা বলিলেন, সরকার তাহা দেখিয়াও প্রাণপণে না দেখিবার ভান করিল। রোগ অস্বীকার করাই যদি যথার্থ চিকিৎসাপদ্ধতি হইত, তাহা হইলে চিকিৎসক, ঔষধের বালাই থাকিত না। ভারতীয় অর্থনীতির রোগটিও যে যথার্থ চিকিৎসাভিন্ন সারিবে না, এই কথাটি আরও এক বার স্মরণ করাইয়া দিল স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুয়োর নামক ক্রেডিট রেটিং সংস্থা। তাহারা ভারতের আউটলুক রেটিং ‘স্টেবল’ বা স্থিতিশীল হইতে নামাইয়া ‘নেগেটিভ’ বা নেতিবাচক করিল। কী কারণে ভারতের নম্বর কাটা গেল, সংস্থাটি তাহাও বিশদ বলিয়াছে। তাহাদের মতে, ভারতের রোগটি এই রকম এই দেশে রাজকোষ ঘাটতির পরিমাণ বিপুল; রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার ফলে আর্থিক সংস্কারের প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ গতিহীন হইয়া পড়িয়াছে। আর এক ক্রেডিট রেটিং সংস্থা মুডি’জ বলিয়াছে, ভারতে ব্যবসায়িক কাজকর্মের পথে সরকারই ‘বৃহত্তম বাধা’। এবং, ভারতের বৃদ্ধির হার তাহার সম্ভাবনার তুলনায় ঢের নীচে। প্রধানমন্ত্রী বেপাড়ার ডাক্তারের নির্ণয়পত্রটির সহিত পাড়ার ডাক্তারের কথা মিলাইয়া দেখিতে পারেন, ফারাক খুঁজিতে আতসকাচের প্রয়োজন হইবে।
যে দেশের প্রধানমন্ত্রীর নাম মনমোহন সিংহ, সেই দেশের অর্থনীতির এমন পথভ্রষ্ট হওয়া আশঙ্কাজনক। বস্তুত, রাজকোষ ঘাটতির স্ফীতি, সংস্কারের গতিভঙ্গ সকলই আরও একটি রোগের উপসর্গ। রোগটির নাম, অর্থনীতির রাশ সম্পূর্ণ ভাবে ক্ষুদ্র রাজনীতির হাতে চলিয়া যাওয়া। যে রাজনৈতিক শক্তিগুলির টানাপোড়েনে দেশের অর্থনীতির গতিপথ নির্ধারিত হইতেছে, ক্ষুদ্র স্বার্থই তাহাদের একমাত্র সাধনা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতি রাজনীতিকরা পেট্রোলের দাম বাড়িলে রাস্তায় নামেন কারণ দেশের আর্থিক গতিভঙ্গ হইলে তাঁহাদের আপাতত ক্ষতি হইবে না, কিন্তু জনমোহিনী রাজনীতিতে তাৎক্ষণিক লাভ হইবে প্রচুর। বিরোধী দলগুলি সংসদ অচল করিয়া রাখিয়া অন্তর্বর্তী লোকসভা নির্বাচনের দিন গোনে। আর, ইউ পি এ সরকারের বড় শরিক কংগ্রেসও যে কোনও মূল্যে ক্ষমতায় টিকিয়া থাকিতে চায় দেখা যাইতেছে, সেই উদ্দেশ্যে কোনও আপসেই তাহার আপত্তি নাই। অর্থনীতির কথা ভাবিবার অবকাশ কাহারও নাই। এই পরিস্থিতিটি না বদলাইলে অর্থনীতি নিশ্চিত ভাবেই আরও শ্বাসরুদ্ধ হইবে। বৃদ্ধির হার গতিহীন হইবে, মূল্যস্ফীতিও বেলাগাম হইবে। পরিস্থিতি পরিবর্তনের দায়িত্ব অবশ্য সকল পক্ষের সমান নহে দায়িত্বটি মূলত ইউ পি এ সরকারের। আরও স্পষ্ট করিয়া বলিলে, দায়িত্ব কংগ্রেসের, এবং প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের। চাপের মুখে দৃঢ় থাকিবার কৌশলটি প্রধানমন্ত্রীর অজানা নহে। ২০০৮ সালে ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তির প্রশ্নে বামপন্থীদের সম্পূর্ণ অন্যায্য চাপ প্রধানমন্ত্রী অতি সাহসী ভঙ্গিতে সামলাইয়াছিলেন। ভারতের অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের স্বার্থে সেই সাহসী প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাবর্তন প্রয়োজন। নচেৎ, ঘরে-বাহিরে যে বিপদসংকেত বাজিতেছে, তাহা নিদারুণ ভাবে সত্য হইবে। স্ট্যন্ডার্ড অ্যান্ড পুয়োর-এর সিদ্ধান্ত জানিয়া অর্থমন্ত্রী বলিয়াছেন, সংস্থাটি ঠিক সময়ে ‘অ্যালার্ম’ বাজাইয়াছে। আশার কথা, অধ্যাপক বসুর কথা সরকার শুনিয়াও না শুনিবার ভান করিয়াছিল, এই ক্ষেত্রে তাহার ব্যতিক্রম হইয়াছে। ‘অ্যালার্ম’ বাজিয়াছে। এখন সরকারের ঘুম ভাঙিলে হয়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.