এ রাজ্যে আইটিসি নতুন লগ্নির পথে পা রাখছে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুরোধ মেনেই সম্ভবত সংস্থা এ বার রাজ্যে বিনিয়োগ করতে চলেছে। স্থানীয় সংস্থা কেভেন্টার্স-এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বারাসতে একটি কারখানা গড়ে তুলেছে তারা। মাত্র ৮ মাসে তৈরি এই কারখানা আগামী মাসের মাঝামাঝি চালু হয়ে যাবে বলে সরকারি সূত্রের খবর। সংশ্লিষ্ট সূত্রের ইঙ্গিত, বহু দিন পরে এ রাজ্যে অধিগ্রহণ ছাড়া সম্পূর্ণ নয়া প্রকল্পে টাকা ঢালছে ১০২ বছরের পুরনো এই সংস্থা। এ দেশে যে সংস্থার যাত্রা শুরুও কলকাতা থেকেই।
খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে আইটিসি-র লগ্নি টানতে চেয়েছিল বিগত সরকারও। কিন্তু তা সফল হয়নি। এ রাজ্যে আইটিসি-র ফুড পার্ক তৈরির পরিকল্পনা বহু দিনের। বিগত সরকারের আমল থেকেই সেই চেষ্টা চলেছে। এ বাবদ প্রায় ২০ একর জমি সরকারের কাছে চেয়েছিল সংস্থা। জমি পেতে অনেক সময় চলে যায়। ক্ষুব্ধ চেয়ারম্যান যোগী দেবেশ্বর বণিকসভা সি আই আই-এর অনুষ্ঠানে খোলাখুলি প্রশাসনিক গড়িমসির অভিযোগ তোলেন।
তবে রাজ্যে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সঙ্গে ছবিটা বদলে যায়। ২০১১ সালের ১৮ জুন। মুখ্যমন্ত্রী হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সে দিনই প্রথম শিল্পমহলের মুখোমুখি হয়েছিলেন। লগ্নি টানার ক্ষেত্রে সরকারের তৎপরতা ফুটে উঠেছিল তাঁর বক্তব্যে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “ডু ইট ইমিডিয়েটলি।” বেলভেডিয়ার ক্লাবের চা চক্রে আলাপচারিতার ফাঁকে এ রাজ্যে দ্রুত কিছু করার জন্য আইটিসি কর্তা যোগী দেবেশ্বরকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ‘ভার্জিনিয়া হাউস’-এর কর্তাকে মমতা বলেছিলেন, “উই আর ইন আ হারি।”
এর পরেই প্রকল্পের পরিকল্পনা দানা বাঁধে। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত স্থানীয় সংস্থা কেভেন্টার্স গোষ্ঠীকে সঙ্গী হিসেবে বেছে নেয় আইটিসি। বারাসতে ১২০ একর জমি জুড়ে একই ছাদের তলায় সব্জি-ফল সংরক্ষণ থেকে শুরু করে প্যাকেজিং-এর সুবিধা বিশিষ্ট পরিকাঠামো তৈরি করেছে কেভেন্টার্স। যেখানে প্রায় ১০০ কোটি টাকা লগ্নি করেছে তারা। এই প্রকল্পের লাগোয়া ১০ একর জমিতেই আইটিসি ও কেভেন্টার্স-এর যৌথ উদ্যোগে তৈরি হয়েছে নতুন কারখানাটি। এখানে আইটিসি-র নুডলস্ ‘ইপ্পি’ উৎপাদন করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, দৈনিক ৫০ টন উৎপাদন করবে এই কারখানা। দিনে ৭ লক্ষ নুডলস্-এর প্যাকেট তৈরি হবে।
পুণেতে নুডলস্ উৎপাদনের কারখানা বছর দুয়েক আগেই তৈরি হয়েছে। সেখানে দৈনিক ১০০ টন উৎপাদন হয়। ১,২০০ কোটি টাকার চটজলদি নুডলস্ তৈরির বাজারে নিজেদের উপস্থিতি বাড়াতে চায় আইটিসি। আর সেই লক্ষ্যেই উৎপাদন বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত। বার্ষিক ২০ শতাংশ হারে বাড়তে থাকা এই বাজার ধরতে দ্বিতীয় কারখানায় টাকা ঢালছে আইটিসি। পূর্বাঞ্চলেও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এই বাজার। তাই এ রাজ্য ছাড়াও ওড়িশা, বিহার, ঝাড়খণ্ড ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলেও নুডলস্ সরবরাহ করবে বারাসতের এই কারখানাই।
বস্তুত, আইটিসি-র বিনিয়োগ টানতে নুতন সরকারই নয়া প্রস্তাব দেয়। ফেব্রুয়ারি মাসের গোড়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেন দেবেশ্বর। রাজ্যে বিভিন্ন জেলায় ‘ফুড পার্ক’ গড়ে তোলার আমন্ত্রণ জানায় সরকার। সংস্থাকে শিলিগুড়ি, উলুবেড়িয়া ও ডায়মন্ড হারবার-এ খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প সংক্রান্ত পার্ক তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে রাজ্য সরকার।
অবশ্য এই প্রকল্প নিয়ে মুখ খুলতে চায়নি আইটিসি বা কেভেন্টার্স, কেউই। মহাকরণ সূত্রের খবর, নতুন কারখানাটি উদ্বোধন করার জন্য ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানিয়েছে সংস্থা দু’টি। সম্ভবত মে মাসের গোড়ায় মুখ্যমন্ত্রীর সময় পাওয়া যেতে পারে। |
