|
|
|
|
আলো-হাওয়া ঢোকে না, দম আটকায় লক-আপে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কালনা |
আট ফুট বাই আট ফুট। মেরে কেটে ১৫ জনের জায়গা। তার মধ্যেই ঠাসাঠাসি করে প্রতি দিন ঢোকানো হয় তিরিশ থেকে পঁয়ত্রিশ জন বন্দি। জানলা তো দূরের কথা, নেই ছোট কোনও খুপরিও যেখান থেকে বাইরের আলো-হাওয়া ঢুকতে পারে ওই ঘরে। মেঝেতে, দেওয়ালে পানের পিকের দাগ, ঘর ভর্তি নোংরা আবর্জনা। নেই শৌচাগারও। কালনা মহকুমাশাসকের ঘরের পাশে ছোট্ট এই ঘরটিই কোর্ট লক-আপ রুম। সদ্য গ্রেফতার হওয়া বা বিচারাধীন বন্দিদের আদালতে তোলার আগে পর্যন্ত এই ঘরটিতেই রাখা হয়। শুধু লক-আপ রুম নয়, একই অবস্থা পাশের জিআরও কার্যালয়ের। দেওয়াল থেকে খসে পড়ছে চাঁই। আলমারি, মেঝে, টেবিল-সর্বত্র ঠাসা নথিপত্র। গুরুত্বপূর্ণ নথিতে বাসা বেঁধেছে উঁই। তার মধ্যেই কাজ করছেন কয়েকশো কর্মী।
কালনা মহকুমা এলাকায় তিনটি থানা। কালনা, মন্তেশ্বর ও পূর্বস্থলী। প্রতিদিন ওই থানাগুলি থেকে গ্রেফতার হন অনেকেই। তাঁদের নাম, ঠিকানা, কেস নম্বর, অপরাধের ধরণ ইত্যাদি নথিভুক্ত করা হয় পাশের জিআরও কার্যালয়ে। তাই সকালে থানা থেকে সেই ধৃতদের এনে রাখা হয় ওই লক-আপে। শুধু তাই নয়, যে বন্দিদের মামলা চলছে, তাদেরও আদলতে তোলার আগে পর্যন্ত ঠাঁই ওই এক চিলতে লক-আপ ঘর। |
|
কালনা আদালতের কোর্ট লক-আপ। ছবি: কেদারনাথ ভট্টাচার্য। |
অথচ, এই ঘরটিতে বন্দিদের জন্য ন্যূনতম পরিষেবার ব্যবস্থাও নেই। নেই বৈদ্যুতিন পাখার ব্যবস্থা। লক-আপের বাইরে যে পাখা চলে তার যৎসামান্যই ঘরে ঢোকে বলে দাবি বন্দীদের। লক-আপের ভিতরে এত জন থাকায় গরমে দম আটকে আসার মতো অবস্থা হয়। শৌচাগারে যাওয়ার প্রয়োজন হলে, তা সারতে হয় লক-আপের ভিতরেই। অথচ নিয়ম হল, কোনও বন্দির শৌচাগারে যাওয়ার প্রয়োজন হলে নিরাপত্তারক্ষীদেরই তাঁদের সেখানে নিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু অভিযোগ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁদের লক-আপ থেকে বের করতে চান না। তাই বাধ্য হয়ে লক-আপের ভিতরেই শৌচকর্ম সারতে হয় তাঁদের। পরিবেশ দূষিত হয় তাতে। বন্দিদের খেতে দেওয়া হলে ওই দূষিত পরিবেশের মধ্যেই খেতে বাধ্য হন তাঁরা।
অন্য দিকে, মহিলা বন্দিদের অবস্থা আরও খারাপ। পুরুষদের জন্য আলাদা ওই লক-আপ রুম থাকলেও মহিলাদের জন্য সেই ব্যবস্থাও নেই। আদালতে তোলার আগে কড়া নিরপত্তায় বসিয়ে রাখা হয় তাঁদের। এক পুলিশকর্মীর কথায়, “নজরদারিতে সামান্যতম ত্রুটি হলেই পালিয়ে যেতে পারেন মহিলা বন্দীরা। সেক্ষেত্রে শাস্তি পেতে হবে আমাদের। মহিলাদের জন্য এখনও কোনও লক-আপ তৈরি না হওয়াটা দুর্ভাগ্যের।” জিআরও এবং লক-আপের দুরাবস্থার কথা স্বীকার করে মহকুমাশাসক সুমিতা বাগচি বলেন, “‘এ ব্যাপারে বিস্তারিত পরিকল্পনা জেলাশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে। জেলা গুরুত্ব দিয়ে দেখছে বিষয়টি।” |
|
|
|
|
|