গাঁধীগিরিতেই কেল্লাফতে।
হাসপাতালের সমস্যা মোটাতে গাঁধীগিরিকেই কাজে লাগালেন জনা কয়েক যুবক। ফলও মিলল হাতে-নাতে।
মাস দুয়েকেরও বেশি সময় ধরে করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের পাখা বিকল। সেগুলো সারানো হবে বলে খুলে ফেলা হলেও পরে তা আর ফেরেনি যথাস্থানে। অভিযোগ, হাজার অভিযোগে কাজ হয়নি। অগত্যা হাত পাখাই ছিল ভরসা। গত শনিবার সন্ধ্যায় স্থানীয় কয়েক জন যুবক হাসপাতালের সমস্যা মেটাতে নিজেরাই চাঁদা তুলে দুটো দাঁড়ানো পাখা ভাড়া করে এনে লাগিয়ে দেন প্রসূতি বিভাগে। কোনও বিক্ষোভ করেননি তাঁরা। কোনও অভিযোগও জানাননি। স্থানীয় ওই যুবকদের এক জন মিঠু অধিকারী বলেন, ‘‘হাসপাতালে বেশ কিছু অনিয়ম-অব্যবস্থায় এর আগে আমরা বিক্ষোভ দেখিয়েছি। তাতে সাময়িকভাবে অবস্থার পরিবর্তন হলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। আমরা ঠিক করলাম, এর সমাধান একটাইগাঁধীগিরি। নিজেরা চাঁদা তুলে বাজার থেকে দুটো দাঁড় করানো পাখা ভাড়া করে প্রসূতি বিভাগে লাগিয়ে দিলাম। |
হাসপাতালে স্বপন মণ্ডল, মিঠু অধিকারী, রাজেশ বাসফোর। নিজস্ব চিত্র। |
কোনও ঝগড়া-ঝামেলা নয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সাফ জানিয়ে দিয়েছিলাম যতদিন না প্রসূতি বিভাগে পাখার ব্যবস্থা করা হবে ততদিন আমরা এ ভাবে চাঁদা তুলে ভাড়া করা পাখা চালাব।’’ ভাড়ার পাখা অবশ্য বেশিক্ষণ চালাতে হয়নি। রবিবার সকালেই প্রসূতি বিভাগে পাখার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন হাসপাতালে ভর্তি প্রসূতিরা। তবে হাসপাতাল নয়, তাঁরা এই কাজের সব কৃতিত্বই ওই যুবকদেরই দিচ্ছেন। হোগলবেড়িয়ার যমশেরপুর গ্রামের কাকলি ঘোষ শনিবার সকালে হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনি বলেন, ‘‘গরমে কী কষ্ট পেয়েছি তা কেবল আমিই জানি। হাসপাতালে অনেক কিছুই পাওয়া যায় না বলে শুনেছি। তাই বলে এই গরমে একটা পাখাও থাকবে না, এটা ভাবিনি। শনিবার সন্ধ্যায় ওই ছেলেরা এসে দু’টো স্ট্যান্ড পাখা লাগিয়ে দেয়। পরে শুনলাম ওরা হাসপাতালের লোক নয়, বাইরের ছেলে। এ ভাবেই প্রতিবাদ করছে! পরের দিন হাসপাতালের তরফেও পাখা টাঙিয়ে দিয়ে গেল। ওই ছেলেদের কী ভাবে ধন্যবাদ দেব জানি না।” হাসপাতালের অব্যবস্থা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন রোগীরা। বিছানায় বসে কুচাইডাঙার লুতফার বিবি, গোপালের পাড়ার ফরিদা বিবি কিংবা বক্সীপুরের রঞ্জিত সাহাদের অভিযোগ, ‘‘গরমে খুব কষ্ট পাচ্ছি। আশপাশে আবর্জনা ছড়িয়ে। রাতে জানালা খুলে রাখলে মশা আর দূর্গন্ধে টেঁকা যায় না। শৌচাগারও অপরিষ্কার।” হাসপাতাল সুপার বিধুভূষণ মাহাতো বলেন, ‘‘প্রসূতি বিভাগের পাখাগুলো খারাপ হয়ে গিয়েছিল। সেগুলো ঠিকঠাক করে লাগাতে একটু দেরি হয়ে গেল। রবিবার সকালেই চারটি পাখা লাগানো হয়েছে। খুব তাড়াতড়ি আরও কয়েকটি পাখা ওই ঘরে লাগানো হবে। বিদ্যুৎ না থাকলে জেনারেটরের ব্যবস্থা আছে। কিন্তু জেনারেটর সব পাখা একসঙ্গে চলে না। তবে কিছু দিনের মধ্যেই বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন একটি জেনারেটর পেয়ে যাব।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘শুনেছি কয়েক জন পাখা ভাড়া করে নিয়ে এসেছিল। তবে আমরা তো কয়েক ঘন্টার মধ্যেই পাখার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’’ তবে সমস্যার যে এমন দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে ভাবতে পারেননি ওই যুবকরাও। মিঠু অধিকারি, স্বপন মণ্ডল, রাজেশ বাসফোরদের কথায়, ‘‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু তাতে কিছুই হয়নি।” করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি তথা স্থানীয় বিধায়ক সিপিএমের সমরেন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘ওই যুবকদের প্রতিবাদ অভিনব। ওদের উদ্যোগও প্রশংসনীয়। ওই হাসপাতাল নিয়ে বেশ কিছু সমস্যা আছে। রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে।’’
|
শ্লীলতাহানিতে ধৃত ঠিকাকর্মী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
পাভলভ মানসিক হাসপাতালের রোগিণীর শ্লীলতাহানির ঘটনায় গ্রেফতার হল সেখানকারই অস্থায়ী ঠিকাকর্মী। পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম মহম্মদ ইকবাল (৪০)। শনিবার রাতে পার্ক সার্কাস স্টেশনের কাছে বস্তি এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযোগ, বৃহস্পতিবার ইকবাল হাসপাতালের এক রোগিণীর শ্লীলতাহানি করে। পরে ওই রোগিণী কর্তব্যরত নার্সকে বিষয়টি জানান। যে-চিকিৎসক ওই রোগিণীকে দেখেন, শুক্রবার তাঁকেও সব জানান অভিযোগকারিণী। হাসপাতালের সুপার শনিবার তপসিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। রবিবার ইকবালকে আদালতে তোলা হয়। বিচারক তাকে ৫ মে পর্যন্ত পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দেন। |