আজ বিশ্ব বই দিবস
নূতন ভাবনা
গ্রন্থসকলের পাখা গজাইয়াছে। মরিবার তরে নহে, ভূমিকম্প-ঝঞ্ঝাবাত-বইপোকাদিগের আক্রমণ ফুৎকারে উড়াইয়া বাঁচিয়া থাকিবার তরে। এবং, অতঃপর তাহারা সত্যই উড়িয়া আসিবে আপনার গৃহে। সুখী গৃহকোণটি গ্রন্থজঞ্জালে ভরাট করিয়া ফেলিতেছেন বলিয়া গৃহিণীর গঞ্জনা এই বার অতীত হইবে, পঞ্চ হাজার গ্রন্থ থাকিবে, শুধু মেহগনির মঞ্চটি আর লাগিবে না। এই ত, গত রাত্রে পড়িতে ইচ্ছা হইল জেমস জয়েসের ইউলিসিস। সংগ্রহে ছিল না, শরণ লইলাম পড়িবার সফটওয়্যার কিন্ডল-এর, এক মিনিটে গ্রন্থ হাজির আমার কম্পিউটারে। উপরন্তু ইহাকে মোবাইলে বা ল্যাপটপে লইয়া যত্রতত্র পড়া যাইবে, সঙ্গে ঘুরিবে অভিধানও। অর্থাৎ যেমন খুশি পড়, বুঝ কিংবা না বুঝিলে বুকমার্ক দিয়া রাখিয়া দাও! ইংরাজি ভাষার প্রায় সকল স্বত্বহীন ধ্রুপদী এই প্রকারে অধুনা সুলভ, সুলভ স্বত্বযুক্তগুলিও, কড়ি ফেলিলে।
বিশ্ব বই দিবসে (যে দিবসে এত কাল সাহিত্যের গুদাম সাবাড় সেল বসিত) পরিবেশের স্বার্থে, বিষয়টি বিবেচনা করিতে পারেন বঙ্গীয় গ্রন্থজন। তাহাতে কত বৃক্ষ বাঁচিবে, মেলা লইয়া মাঠে-ময়দানে টানাটানি হইবে না। স্টলের বর্গফুট লইয়া গোঁসা হইবে না, একটি স্মার্টফোনেই হইবে স্টল। গ্রন্থচোরও ভড়কাইয়া যাইবে। অবশ্য গ্রন্থশরীরের সঙ্গসুখে বঞ্চিত হইবার দুঃখ পাইবেন কেহ কেহ, বিশেষ করিয়া ছোটরা, তাহাদের জন্য না হয় সশরীর ‘লিমিটেড এডিশন’ থাকুক। বঙ্গভাষায় এমন উদ্যোগ পুরাতন গ্রন্থে হইয়াছে। পশ্চিমবঙ্গের গ্রন্থাগারসমূহের সরকারি নেটওয়ার্কে দুষ্প্রাপ্য পুরাতন গ্রন্থ পিডিএফ আকারে আপলোড হইতেছে। অদ্য গিল্ড এবং বাংলা আকাদেমির আয়োজনে নন্দন চত্বরে বিশ্ব বই দিবসীয় সভার সূচনা। ৩ টায় জাতীয় গ্রন্থাগারে আলোচনা। সিগাল বুক স্টোরে সন্ধ্যায় বই দিবসের আড্ডা ও বই প্রকাশ, সূত্রধর-এর আয়োজনে। গ্রন্থজনেরা বিষয়টি ভাবিবেন কি? সঙ্গে ন্যাশনাল বুক ট্রাস্টের ক্যালেন্ডার হইতে দুইটি অলংকরণে পাঠক লক্ষ করিবেন, ছবির ফ্রেম ছাড়াইয়া যাইতেছে ছবি। বঙ্গীয় গ্রন্থচিন্তাও কি গতানুগতিক চিন্তার ফ্রেম ছাড়াইয়া যাইতে পারিবে না?

মোহিত
‘বুকের মধ্যে গোপন পাখি ডানা মেলে/ বাইরে আসবে’... লিখেছিলেন মোহিত চট্টোপাধ্যায়। বাংলাদেশের বরিশালে ওঁর জন্ম ১৯৩৪-এর ১ জুন। স্বাধীনতার বছরেই ওপার বাংলার পাট চুকিয়ে চলে আসেন এ শহরে। শুরু হয় সাহিত্যচর্চা। শক্তি সুনীলের কৃত্তিবাসী দলে থেকে লিখেছেন আষাঢ়ে শ্রাবণ, গোলাপের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, অঙ্কন শিক্ষা, শবাধারে জ্যোৎস্না ও এমন আরও কাব্যগ্রন্থ। অধ্যাপনার ফাঁকে কবিতা লিখতে লিখতেই তিনি চলে যান নাটক রচনার দিকে। মৃত্যুসংবাদ, কণ্ঠনালীতে সূর্য এমত নাটক দিয়ে যাত্রা শুরু। তারপর মেটামরফোসিস, রাজরক্ত, ক্যাপ্টেন হুররা, মৃচ্ছকটিক, নীল রঙের ঘোড়া, সক্রেটিস, জন্মদিন, গ্যালিলিও গ্যালিলেই, মুষ্টিযোগ, তুষের আগুন, বিধাতাপুরুষ অথবা আওরঙ্গজেব-- প্রায় একশো নাটক এবং কিছু অনুনাটক। ওঁকে নিয়ে কাজ করেছেন ফ্রিৎজ বেনেভিৎস, বিভাস চক্রবর্তী, শ্যামল ঘোষ, পঙ্কজ মুন্সি বা অসিত মুখোপাধ্যায়। চিত্রনাট্য লিখেছেন মৃণাল সেনের মৃগয়া, পরশুরাম বা ওকা উরি কথা অথবা রাজা সেনের দামু-র জন্য। সবগুলিই জাতীয় পুরস্কারে সম্মানিত। ওঁর পরিচালিত ‘মেঘের খেলা’ শিশু ছায়াছবি জিতেছিল রুমানিয়া আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র পুরস্কার। রাজ্য ও জাতীয় স্তরের বিভিন্ন নাট্যসম্মান-সহ রবীন্দ্রনাথের সার্ধশত জন্মবর্ষে পেয়েছিলেন কেন্দ্রীয় সরকারের ‘রবীন্দ্ররত্ন পুরস্কার’। গত বছর আক্রান্ত হন স্বরযন্ত্রের ক্যানসারে। তবু ছিলেন সৃষ্টিশীল। ‘দু’হাত মেলে বাতাস ধরো উড়ে যাবে’। গত ১২ এপ্রিল কবিতার পংক্তি মিলিয়েই চলে গেলেন তিনি, জীবন রঙ্গমঞ্চের বাইরে।

স্মৃতিসূত্র
সে কালের এমারেল্ড থিয়েটারের বাড়িতে অমরেন্দ্রনাথ দত্ত খুললেন ক্লাসিক থিয়েটার। কিন্তু কী নাটক হবে? উনিশ শতকের উপান্তে অমরেন্দ্রনাথ মঞ্চভাগ্য পরীক্ষায় নামলেন ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদের (১৮৬৩-১৯২৭) ‘আলিবাবা’ নিয়ে। সেই বোধ হয় চিচিং ফাঁক। এ শহর কাঁপিয়ে দিয়েছিল ‘আলিবাবা’। জনপ্রিয়তা কাকে বলে তার এক সর্বকালীন দৃষ্টান্ত হয়ে আছে ক্ষীরোদপ্রসাদের নাটকটি। পেশায় কেমিস্ট এই নাট্যকারের জন্মসার্ধশতবর্ষ এ বছর। যথারীতি, রবি-করে তা-ও চাপা পড়ে যাচ্ছিল। স্মৃতিসূত্রটি ধরিয়ে দিলেন সুতানুটি বইমেলা কমিটি। ক্ষীরোদপ্রসাদের জন্মস্থান খড়দহে শ্রীগুরু গ্রন্থাশ্রম-সংলগ্ন প্রাঙ্গণে কমিটির উদ্যোগে বসল নাট্যকারের আবক্ষ মূর্তি। ছিলেন অলোক রায়, দেবাশিস মজুমদার প্রমুখ। যৌথ আয়োজনে ছিল খড়দহ পুরসভা ও শ্রীগুরু গ্রন্থাশ্রম। নতুন করে ক্ষীরোদপ্রসাদের নাটক অভিনয়, বই প্রকাশের পরিকল্পনাও হয়েছে।

নতুন বই
পঁয়ত্রিশ বছর আগে ১৯৭৭-এর জানুয়ারিতে বেরিয়েছিল জয় গোস্বামীর একটি তন্বী কাব্যগ্রন্থ। মাত্র আটটি কবিতার সেই বই, কবিতাগুলি সবই সরাসরি লেখা-- কুমারী থেকে ছাপা-সুন্দরী হয়ে উঠেছিল, কোনওটিই পাণ্ডুলিপির আয়োজনের পরে কোনও সাময়িকপত্রে প্রকাশিত হয়নি। সেই ধারাটা, পাণ্ডুলিপি থেকেই বইয়ের সেই ধারাটা বজায় রেখেছিলেন জয়, বিষাদ, সূর্য পোড়া ছাই আর মৌতাত মহেশ্বর-এ। তেমনই ঘটনা আবার, এই বৈশাখে সিগনেট প্রেস থেকে। আকাশ মেঘলা থাকলে কবিতার বই ছাপে ভাল, বলতেন সিগনেটের ডিকে। এই বৈশাখে আকাশ অংশতও মেঘলা নয়, তবু বেশ ঝকঝকে চেহারায় শতাধিক কবিতা নিয়ে আনন্দ উদ্যোগ সিগনেট প্রেস থেকে প্রকাশিত হল জয়ের তরুণতম বই, মায়ের সামনে স্নান করতে লজ্জা নেই। এ দিকে বিজল্প মিউজিক থেকে জয়ের নবতম কবিতাপাঠ আর সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গান নিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশিত হল অ্যালবাম ‘হৃদি ভেসে যায়’, প্রকাশ করলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। ‘সুর তো ফকির’, ‘তোমার লেখা গানের মধ্যে’, ‘দিনগুলির মৃত্যু’র মতো কবিতাকে যেন নতুন প্রাণ দিলেন জয় নিজের গলায়, সঙ্গে রইল সুদীপের দরাজ গান। এ শহরে এই প্রখর বৈশাখে গান-কবিতা হয়ে থাকল গরমকালের সন্ধেবেলার হাওয়ার মতো।

নভেন্দুর নাটক
সমাজতন্ত্রের সংকটের মুহূর্তেও, বামপন্থী দলতন্ত্রের আদর্শচ্যুতি লক্ষ করেও তিনি অন্য শিবিরে নাম লেখাননি। প্রবল প্রত্যয়ে বলতেন, ‘আমি তো আমার রাজনৈতিক বিশ্বাস বা দর্শন নিয়ে পুতুল খেলায় মাতিনি যে মনমতো কিছু না ঘটলে রাগে দুঃখে তা আছড়ে ভেঙে ফেলব!’ তাঁর রাজনৈতিক দর্শনের সঙ্গে মিলিয়েই পড়তে হয় নভেন্দু সেনের নাটক (১৯৪৪-২০০৮)। বাংলা নাট্যে নতুন ভাষার জন্ম দিয়েছিলেন তিনি। ১৯৬৯-এ শ্যামল ঘোষের পরিচালনায় ‘নক্ষত্র’ প্রযোজিত ‘নয়ন কবিরের পালা’য় সেই ভাষার সঙ্গে প্রথম পরিচিত হয় কলকাতার মঞ্চ। তবু ‘উদ্ভট’, ‘কিমিতিবাদী’, ‘বিপ্রতীপ’ ইত্যাদি নানা অভিধায় চিহ্নিত হয়ে তা এত কাল প্রান্তিক হয়ে ছিল। এ বার তাকে নতুন করে আলোয় আনার উদ্যোগ শুরু হয়েছে। দে’জ পাবলিশিং থেকে প্রকাশিত হয়েছে নভেন্দুর নাট্যসংগ্রহ ১। ইরা সেন ও শমীক বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত সেই সংগ্রহে নয়ন কবিরের পালা তো বটেই, সমবেত সওয়াল জবাব, প্যান্টোমাইম, দ্বিজভূমি, আদাব, ইষ্টিকুটুম ইত্যাদি আরও নটি নাটক। সম্প্রতি এটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ হল মিনার্ভায়। ছিল বেলঘরিয়া এথিক প্রযোজিত নভেন্দু সেনের নাটক ‘অভিমুখ’ও।

ফরাসি-পথিক
বাঙালির সঙ্গে ফরাসির বড়ই মিল। প্রমথ চৌধুরী মিল দেখেছিলেন দুই ভাষায়, দুই সংস্কৃতিতে। তবু বঙ্গে ফরাসি চর্চায় তারকা মুষ্টিমেয় ক’জন। শুরুটা এক রকম ঠাকুরবাড়ি থেকেই। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ প্রবল ভাবে ফরাসি চর্চা করেছিলেন। নাটক লিখেছেন মলিয়ের অবলম্বনে, অনুবাদ করেছেন ভিক্তর য়ুগো কিংবা আলফোঁস দোদে-র গল্প, ভিক্তর কুঁজ্যার দর্শন-গ্রন্থ। তার পরে প্রমথ চৌধুরী, সৈয়দ মুজতবা আলি, অন্নদাশঙ্কর রায়, অরুণ মিত্র বঙ্গে ফরাসি ভাষা ও সংস্কৃতির ধারা বয়েই চলেছে। সেই ধারাতেই একনিষ্ঠ চিন্ময় গুহ। দীর্ঘদেহী এই ফরাসি-পথিক অনুবাদ করেছেন লা রোশফুকোর মাক্সিম, আঁদ্রে জিদের উপন্যাস ‘শীর্ণ তোরণ’ নামে। পেশায় ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষক, এখন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য চিন্ময় গুহকে সম্মানিত করেছে ফ্রান্সও। তাঁকে সমগ্রতায় ধরতে চেয়েছে সমীরণ মজুমদার সম্পাদিত ‘অমৃতলোক’ পত্রিকা। বিশেষ সংখ্যায় তাঁকে নিয়ে প্রবন্ধ-নিবন্ধ, তাঁর গ্রন্থের সমালোচনা। প্রচ্ছদে দেবাশীষ দেবের ক্যারিকেচারে এই বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব (সঙ্গের ছবি)।

একা এবং একা
উৎসব-মুখর কলকাতায় এ বার নতুন সংযোজন একক সংলাপধর্মী নাট্যোৎসব। ‘মনোলগস একা এবং একা’শীর্ষক এই নাট্যোৎসবের চিন্তন ও প্রয়োগে আছেন সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়। এটি সাজানো হয়েছে পুরাণ, মহাকাব্য ও কাব্য উপাখ্যান এই তিন বিষয়কে ভিত্তি করে। এক মঞ্চে আসছেন শাঁওলী মিত্র, প্রণতি ঠাকুর, বিজয়লক্ষ্মী বর্মন এবং চপল ভাদুড়ি। প্রথম দিন চপল ভাদুড়ির অভিনয় ‘মা শীতলা’। দ্বিতীয় দিন বুদ্ধদেব বসুর ক্রান্তিকাল থেকে পাঠাভিনয় করবেন শাঁওলী মিত্র। শেষ দিন মহাকাব্যে নারী অবলম্বনে প্রণতি ঠাকুর পাঠ করবেন রামায়ণের ঊর্মিলা এবং মহাভারতের দ্রৌপদী। পরে বিজয়লক্ষ্মী বর্মন পাঠ করবেন কাব্যোপন্যাস যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল থেকে। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে তিন দিনের এই নাট্যোৎসব শুরু হচ্ছে আজ সন্ধেয় গ্যেটে ইনস্টিটিউট, ম্যাক্সমুলার ভবনে। উদ্বোধন করবেন দেবেশ চট্টোপাধ্যায়।

তথ্যচিত্রে
‘আমরা হয়তো হারিয়ে যাব কিন্তু সিরাজ থেকে যাবেন।’ শুধু এটুকু বলেই ক্ষান্ত থাকেননি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, আরও বলেছেন ‘কোনও ধর্মবিশ্বাসের কথা ওঁর লেখায় কোথাও কোনওদিন উল্লেখ করেননি। খুব সম্ভব উনি নিরীশ্বরবাদী। সিরাজ বলতেন, আমি কোনও প্রথাগত ধর্মের মধ্যে থাকতে চাই না।... এ কথাগুলি শুনতে আমারও খুব ভাল লাগে।’ সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ-কে নিয়ে সাহিত্য অকাদেমি-র সদ্যনির্মিত তথ্যচিত্র ‘আনরিয়েল ম্যান রিয়েল আর্টিস্ট’-এ রয়েছে সুনীলের এই সাক্ষাৎকারটি। তাতে কথা বলেছেন ‘অলীক মানুষ’-এর স্রষ্টা নিজেও দীর্ঘক্ষণ, তাঁর সাহিত্যের সঙ্গে জড়ানো বঙ্গজ জীবন নিয়ে। গোর্কি সদনে এটি দেখানো হবে ২৬ এপ্রিল সন্ধে ৬.৪৫-এ। এক ঘন্টার এই ছবিটির পরিচালক কে জি দাস ফিল্মস ডিভিশন-এর পূর্বাঞ্চলীয় শাখার প্রাক্তন অধিকর্তা।

মঞ্চে ‘গীতা’
নাট্যদল হিসেবে বয়স বেশি নয়। কিন্তু ওঁদের সম্বল, স্বপ্ন দেখার সাহস। সেই সাহসে ভর করেই ওঁরা মঞ্চে এনেছেন ‘গীতা’। মহাভারতে অর্জুনের প্রতি কৃষ্ণের উপদেশ। মহাভারতের নানা আখ্যানকে আশ্রয় করে একাধিক প্রযোজনা হয়েছে, হচ্ছে। ‘গীতা’ কিন্তু এই প্রথম হচ্ছে বলেই কলাপী নাট্যমঞ্চের তরফে জানালেন জ্যোতির্ময় বক্সী। এই প্রযোজনায় সঙ্গীতের বিশেষ গুরুত্ব থাকছে। সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন ময়ূখ-মৈনাক। রবিবার শহরে প্রথম বার অভিনীত হল ‘গীতা’।

বইয়ের টানে
তাপপ্রবাহের কলকাতায় কচি মুখে হাসি ফোটাতে হাজির ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট। সঙ্গে তাদের অভিনব উদ্যোগ, ‘ফেস্টিভ্যাল অব চিল্ড্রেনস কন্টেন্ট’। আজ থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত ফিউচার ফাউন্ডেশন স্কুল-এ থাকবে বইমেলা, সহযোগী পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ড (রোজ ৪-৩০ থেকে ৭)। সঙ্গে বিদ্যালয় স্তরের পড়ুয়াদের জন্য নানা রকম কর্মশালা, আন্তঃবিদ্যালয় প্রতিযোগিতা, লেখক পারো আনন্দ-এর সঙ্গে আড্ডা! বইয়ের দিকে, মুদ্রিত অক্ষরের দিকে ছোটদের টানতেই এই এলাহি আয়োজন। উদ্বোধন করছেন সব্যসাচী চক্রবর্তী। আজ, বিশ্ব বই দিবস-এ, ঠিক দুপুর আড়াইটেয়।

৬৩-তে
কবীর সুমনের নতুন অ্যালবামের নাম ‘৬৩-তে’! ভাবাই যায় না। বাংলা গানে টাটকা হাওয়া এনেছিলেন তিনি, বছর কুড়ি আগে। ‘তোমাকে চাই’ নিয়ে সাংবাদিক সুমনের সেই প্রবল বিদ্রোহের আবির্ভাব নিছক চলতি হাওয়া হয়ে থেকে যায়নি, বাংলা গানে তৈরি করেছে একটা নতুন ধারা। তার পরে সুমন চট্টোপাধ্যায় থেকে কবীর সুমন হয়ে ওঠা গান আর হয়ে ওঠা রাজনীতি এ শহরে প্রবল এক বিতর্কের নাম কবীর সুমন। কিন্তু সেই অনেক পুড়ে যাওয়ার পরে একটু বেঁচে থাকার গানগুলো? নাগরিক কবিয়াল গানের সঙ্গ ছাড়েননি এতটুকু। একের পরে এক নিজের ওয়েবসাইটে আপলোড করে দিয়েছেন সময় থেকে উঠে আসা তাঁর গান। তার কিছু আর একেবারে আনকোরা কয়েকটি নিয়ে সপ্তর্ষি প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর নতুন অ্যালবাম ‘৬৩-তে’। ষাট পেরোলেই কেমন একটা অবসৃত বুড়োটে বুড়োটে ভাব এসে যায় ক্ষুদ্র বাঙালির। সুমন সে পথের পন্থী নন। চল্লিশ পেরিয়ে তাঁর সত্যদৃষ্টিতে চালশে তো পড়েইনি, গলা কিঞ্চিৎ খারাপ হলেও তাঁর নতুন গান আজও হয়ে ওঠে স্মরণীয়, বুদ্ধির আশ্চর্য দীপ্তিতে। সঙ্গের ছবিটি অ্যালবাম থেকে, বিবেক কুণ্ডুর তোলা।

কর্মযোগী
মৌলিক হতে চাইলে মূল থেকে বিচ্যুত হলে চলবে না’ এমন বিশ্বাস ভাষাবিদ ইন্দ্রনাথ চৌধুরির। আদি বাস বাংলাদেশের রাজশাহি-র জয়পুর গ্রামে হলেও, পিতা নরেন্দ্রনাথ ছিলেন দিল্লিপ্রবাসী, সংস্কৃতের অধ্যাপক। ১৯৩৬ সালে কলকাতায় মামার বাড়িতে জন্ম, বেড়ে ওঠা প্রায় সবটাই প্রবাসে। বাড়িতে আসত প্রবাসী, ভারতবর্ষ ইত্যাদি পত্রিকা। পারিবারিক সূত্রে সাহিত্যপ্রীতি সঞ্চারিত হয়েছিল তাঁর মধ্যে। ক্লাস ইলেভেনের পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ হওয়ার পর বয়স কম থাকায় দু’বছর বসে থাকতে হয়েছিল। সে সময় হিন্দি সাহিত্যের অনেকখানি পড়ে ফেলেন। ইংরেজির পাশাপাশি হিন্দিতেও এম এ করেছেন ভালবাসার টানেই। আর এই সব পড়াশোনা গভীর ভাবে কাজে লাগালেন সাহিত্য অ্যাকাডেমির মুখ্য পদে থাকাকালীন। তাঁর মতে, ‘মেনস্ট্রিম ভাষাসাহিত্য বলে কিছু নেই। সব স্ট্রিম-ই মেনস্ট্রিম।’ সাহিত্য অ্যাকাডেমির উদ্যোগে যে এনসাইক্লোপিডিয়া অব ইন্ডিয়ান লিটারেচার প্রকাশিত হয়েছে, তার নতুন সংস্করণের প্রধান সম্পাদক ইন্দ্রনাথ চৌধুরি। এ কাজে নিয়মিতই আসেন কলকাতায়। ‘এ কাজ আমার একার নয়। আমি বিশ্বাস করি সকলকে যুক্ত করে কাজ করায়। ভারতের প্রায় সব ভাষাসাহিত্যকে এই সংকলনে স্থান দেওয়ায় এর আঙিনা বিশাল, কাজও কঠিন।’ ভারতীয় ভাষা পরিষদের মুখ্য পদে থাকাকালীন বাংলার একাধিক অনুষ্ঠান করিয়েছেন, আবার হিন্দি ভাষার প্রসারে বাঙালিদের উদ্যোগও বিস্মৃত হননি। তিনি মনে করেন তাঁর ‘জীবনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ পড়ানো।’ পড়িয়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে, হায়দরাবাদে সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটিতে, দিল্লির সেন্টার ফর কালচারাল রিসোর্স অ্যান্ড ট্রেনিং ইত্যাদি নানা প্রতিষ্ঠানে। সত্তরোর্ধ্বেও সমান সক্রিয় এই চিন্তাবিদের স্ত্রী উষা চৌধুরির সঙ্গে লেখা প্রবন্ধগ্রন্থ হিন্দুইজম নিয়োগী বুকস থেকে প্রকাশের অপেক্ষায়।
   


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.