রাজ্যের কয়েক লক্ষ গর্ভবতী মহিলা ও সদ্যোজাত শিশু প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাচ্ছে কিনা, সেই তথ্যই নির্দিষ্ট সময়ে জোগাড় করতে পারেনি স্বাস্থ্য দফতর।
ব্লক স্তরে এই তথ্য সরাসরি কম্পিউটারে নথিভুক্ত করে রাখার কথা ছিল। স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ ছিল, জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা সেই তথ্য পর্যালোচনা করবেন। যদি কারও চিকিৎসায় ফাঁক পড়ে, তা চিহ্নিত করে সেখানে স্বাস্থ্যকর্মীদের পাঠিয়ে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা হবে। এর জন্য গত বছর অগস্টেই শুরু হয়েছিল ‘মাদার অ্যান্ড চাইল্ড ট্র্যাকিং সিস্টেম।’ কিন্তু আট মাস যেতে-না-যেতেই সেই প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে বলে স্বীকার করছে স্বাস্থ্য দফতর।
স্বাস্থ্যভবন সূত্রেই খবর, বেশ কিছু জেলায় মাত্র ৪ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশ গর্ভবতী মহিলা ও শিশুর নাম কম্পিউটারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। দার্জিলিং জেলায় তো শূন্য শতাংশ কাজ হয়েছে। যদিও সেখানে রাজনৈতিক অস্থিরতা এর জন্য অনেকটা দায়ী। কিন্তু মালদহ, বাঁকুড়া, উত্তর দিনাজপুরের মতো বেশ কিছু জেলায় খারাপ কাজের কারণ হিসাবে স্বাস্থ্যকর্তারাই অভিযোগ করেছেন, জেলায় অক্সিলিয়ারি নার্স মিড ওয়াইফ (এএনএম) ও ডাটা এন্ট্রি অপারেটরেরা কাজে একটুও আগ্রহ দেখাননি। অভিযোগ, ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কর্তা (বিএমওএইচ), জেলা জননী ও শিশু স্বাস্থ্য আধিকারিক, ডিস্ট্রিক্ট স্ট্যাটিস্টিক্যাল ম্যানেজার কিংবা ব্লক পাবলিক হেলথ নার্সরা এ ব্যাপারে নজরদারিতে ফাঁকি দিয়েছেন।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বার্ষিক রিপোর্ট বলছে, পশ্চিমবঙ্গের জন্মহার অনুযায়ী, ৩১ মার্চ পর্যন্ত অন্তত ১৩ লক্ষ গর্ভবতী মা এবং প্রায় সমসংখ্যক শিশুর নাম নথিভুক্ত হওয়ার কথা ছিল। সেই জায়গায় নথিভুক্ত হয়েছে মাত্র সাড়ে ৬ লক্ষ গর্ভবতী ও ২ লক্ষ ৮৮ হাজার শিশুর নাম। অর্থাৎ প্রায় সাড়ে ছয় লক্ষ গর্ভবতী এবং ১১ লক্ষ শিশু তালিকার বাইরে থেকে গিয়েছে।
তাতে কী কী ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে? |
স্বাস্থ্য দফতরই জানাচ্ছে, ওই কয়েক লক্ষ গর্ভবতীর আয়রন ট্যাবলেট বা টিটেনাস ইঞ্জেকশন বাকি পড়ল কিনা জানা যাচ্ছে না। তাঁদের রুটিন চেকআপ ও পুষ্টি ঠিকমতো রয়েছে কিনা সে সম্পর্কে স্বাস্থ্য দফতর অন্ধকারে। শিশু জন্মের পর তার শারীরিক অবস্থা কেমন রয়েছে, মারা গিয়েছে কিনা, বেঁচে থাকলে রুটিন টিকাকরণ ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা, কিছুই খবর পাচ্ছেন না স্বাস্থ্যকর্তারা। কারণ তাদের নামই সরকারি তালিকায় তোলা হয়নি। আগামী বছরের জন্য ঠিক কত জন প্রসূতি ও শিশুর জন্য কেন্দ্রের কাছ থেকে অর্থসাহায্য চাওয়া হবে, সেই হিসাবও করা যাচ্ছে না।
কেন নাম ঠিকমতো তালিকায় তুলছেন না স্বাস্থ্যকর্মী এবং ডাটা এন্ট্রি অপারেটরেরা?
এএনএম-দের এক নেত্রীর কথায়, “রাজ্যে দু’ধরনের এএনএম আছেন। ফার্স্ট এএনএম ও সেকেন্ড এএনএম। দু’জনেরই কাজ এক। কিন্তু, সেকেন্ড এএনএম-দের বেতন কম। তাঁদের যথেষ্ট সম্মান দেওয়া হয় না। এঁদের সংখ্যা প্রায় ৮-৯ হাজার। এঁরা কাজে উৎসাহ হারাচ্ছেন।” আবার ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের এক নেতার বক্তব্য, “আমাদের মাইনে বেড়েছে, কিন্তু হাতে দেওয়া হচ্ছে সেই পুরনো মাইনেই। দ্রুত কাজের উৎসাহ পাব কোথা থেকে?” স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কর্তারা অবশ্য এগুলোকে আদৌ কোনও কারণ বলে মানতে নারাজ। তাঁদের যুক্তি, পুরোটাই কাজ না করে টাকা পাওয়ার ফিকির। গত ২৯ মার্চ রাজ্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতর থেকে প্রত্যেক জেলা স্বাস্থ্য অধিকর্তার কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে‘স্বাস্থ্যকর্মী এবং ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের গা-ছাড়া মনোভাবের জন্য গ্রামাঞ্চলের প্রচুর গর্ভবতী ও শিশুর নাম তালিকাভুক্ত করা যায়নি। নতুন আর্থিক বছরের শুরুতে দ্রুত এই জমে থাকা নাম ‘এন্ট্রি’ না-করলে কড়া ব্যবস্থার জন্য তৈরি থাকতে হবে।’ |