পুরুলিয়ার রেখা কালিন্দী, বীণা কালিন্দীদের পথেই হাঁটল দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাশীপুরের হাবিবা খাতুন।
আগামী সোমবার মুর্শিদাবাদের মইদুল শেখের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়েছিল কাশীপুর থানার পোলেরহাট-২ পঞ্চায়েতের স্বরূপনগরের বাসিন্দা, বছর বারোর হাবিবার। মইদুল বিবাহিত। কিন্তু বিয়ে নয়, হাবিবা চায় পড়াশোনা করতে। তাই বাড়িতে প্রতিবাদ জানিয়েও কাজ না হওয়ায় শনিবার দুপুরে সে একাই থানায় গিয়ে বিয়ে রোখার আর্জি জানায়। ওসি ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় ডেকে পাঠান হাবিবার বাড়ির লোকজন এবং মইদুলকেও। তাঁদের বোঝানোর পরে বন্ধ হয় বিয়ে। খুশি হাবিবা বলে, “এখন বিয়ে নয়। আমি পড়তে চাই। বড় হতে হবে। এ কথাটাই এত দিন মাকে বুঝিয়ে পারছিলাম না। পুলিশকাকুরা সেটাই করলেন।”
|
নিজস্ব চিত্র। |
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) কঙ্করপ্রসাদ বারুই বলেন, “ওই মেয়েটি যাতে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে, তার জন্য কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। মেয়েটি যে ভাবে কম বয়সে বিয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে, তা প্রশংসনীয়।”
বাড়ি থেকে বিয়ের তোড়জোড় হওয়ায় বছর খানেক আগে স্কুলের শিক্ষকদের সাহায্যে তা রুখেছিল পুরুলিয়ার শিশু শ্রমিক স্কুলের ছাত্রী রেখা কালিন্দী। একই ভাবে বন্ধুদের সাহায্যে ওই জেলারই আর এক নাবালিকা বীণা কালিন্দীও নিজের বিয়ে রোখে। রাষ্ট্রপতি ডেকে তাদের উৎসাহ দেন। কিন্তু এর পরেও নাবালিকার বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা যে এ রাজ্যে বন্ধ হয়নি, তা হাবিবার ঘটনাতেই স্পষ্ট।
জয়নগর হাইমাদ্রাসায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে হাবিবা। বাবা জুলফিকার মোল্লা মানসিক ভারসাম্যহীন। মা মর্জিনা বিবি সেলাইয়ের কাজ করে সংসার চালান। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে হাবিবা দ্বিতীয়। মইদুল ওই গ্রামেই রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। গ্রামেই বাড়িভাড়া নিয়ে থাকেন। দিন কয়েক আগে তাঁর সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয় হাবিবার। সে কথা জানতে পেরেই প্রতিবাদ জানায় হাবিবা। পুলিশ জানায়, মইদুলের দাবি, মর্জিনা বিবিই হাবিবাকে বিয়ে করার কথা বলেছিলেন তাঁকে। কিন্তু মর্জিনা বিবি বলেন, “অভাবের সংসারে মেয়েকে আর পড়াতে পারছিলাম না। তাই মইদুল বিয়ের প্রস্তাব দিতেই মেনে নিই।”
এখন পুলিশ পড়ানোর ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেওয়ায় মেয়ের সঙ্গে খুশি মা-ও। বলছেন, “এখন আর বিয়ে দেব না। মেয়ে পড়ুক।” |