উত্তরণ ও অধঃপতন।
রবিবার বরাবাটি স্টেডিয়ামের প্রায় অসম লড়াইয়ে নামার ঠিক চব্বিশ ঘণ্টা আগে দুটো দলকে খুব সহজে বোঝাতে গেলে এই শব্দ দুটো মাথায় আসা স্বাভাবিক।
উত্তরণ অবশ্যই কেকেআর। পরপর দুটো হার দিয়ে শুরু আইপিএল ফাইভ, শনিবার সৌরভদের মারকাটারি জয়ের আগে পর্যন্ত তো তিন নম্বরের আরামকেদারাতেই ছিল নাইটরা। আর তাতে টিম মালিক এতটাই খুশি ছিলেন যে ক্রিকেটারদের জন্য ৪০ হাজার টাকা পেগের স্কচ পঞ্জাব ম্যাচের পর পার্টিতে উপহার দিয়েছেন! কাল কটকে জিতলে শাহরুখ কী করবেন বলা কঠিন, কিন্তু শনিবার বিকেলে বরাবাটির ছবি বলছে, নাইটদের পরিবার এখন সুখী পরিবার। বিকেল চারটেয় চড়া রোদ্দুরে সবাই যখন প্রায় সেদ্ধ, নাইটদের দেখলে কে বলবে তাপমাত্রার পারদটা ৪০ পেরিয়ে গিয়েছে? কালিস-গম্ভীররা প্যাড পরার আগে সবার আগে নেটে কি না নাইটদের বোলিং কোচ ওয়াসিম আক্রম। তা-ও আবার ব্যাট হাতে। এখনও যা চেহারাটা রেখেছেন, ব্যাটে-বলে যা নিয়ন্ত্রণ, ‘ডেথ’-এ হাসতে হাসতে দুটো ওভার করে দিতে পারেন। প্র্যাক্টিস শুরুর আগে সবাই মিলে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে টিম হাডল। অধিনায়কের ‘পেপটক’। কথায় বলে, অধিনায়কের ভাল পারফরম্যান্স মানে টিম আপনিই তেতে যায়। গম্ভীরের ব্যাট এখন কথা বলতে শুরু করেছে। সদ্য দিল্লি ঘুরে আসা নাইট অধিনায়ক এ দিন যে ভাবে একটার পর একটা বল গ্যালারিতে ওড়ালেন, কলকাতায় তাঁর ভক্তদের উৎসাহিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ থাকছে। আধা ন্যাড়া-আধা চুলের ক্যারিবিয়ান সুনীল নারিন এই মুহূর্তে নাইটদের নয়নের মণি। সোনালি-বেগুনির স্পিন বিভাগে তিনিই আপাতত শীর্ষবাছাই। টেস্ট খেলা ছেড়ে আইপিএলকে বাছা নারিনের সঙ্গে ব্রেট লি-র খুব জমেছে। দু’জনকেই দেখা গেল হাসিঠাট্টায় মাততে। |
মনোজ-গম্ভীর আলোচনা। কটকে। |
উত্তরণ ছবি যেমন হয়।
উইকেট নিয়ে বেশি জলঘোলা নেই। কিউরেটর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন ১৭০-১৮০ রানের ম্যাচ হবেই। উপর থেকে দেখে আর পাঁচটা ভারতীয় উইকেটের সঙ্গে কোনও তফাত পাওয়া যাবে না। টস জেতা বা হারা ম্যাচের ফলাফলে খুব প্রভাব ফেলবে বলে কেউই মনে করছেন না। কিন্তু ডেকানকে জিততে হলে এই উইকেটে কালিস-গম্ভীরদের থামাতে হবে। সেটা হবে তো?
সংশয় থাকছে। কারণ অধঃপতন শব্দটা সঙ্গকারার টিমের সঙ্গেই জুড়তে হচ্ছে যে।
ডেকান চার্জার্স এমনিতে টিম খারাপ নয়, কিন্তু ২০০৯-এর আইপিএল চ্যাম্পিয়ন কিনা টুর্নামেন্টের প্রথম চারটে ম্যাচ হেরে বসেছে। কটকে এ বছর আইপিএলের প্রথম ম্যাচের আগে ডেকান প্র্যাক্টিসে নাইটদের একেবারে উল্টো ছবি। একটা স্টাম্প পুঁতে একা একা বল করে যাচ্ছেন ডেল স্টেইন। বিশ্বের এক নম্বর পেসার, অথচ এখনও আইপিএলে প্রভাবহীন। কাজেই প্রতিটি ম্যাচ এখন হয়ে যাচ্ছে তাঁর সম্মানরক্ষার ম্যাচ। সুনাম ধরে রাখার লড়াই। এই ভাবে চললে পরের বার টিম পেতেই সমস্যা হবে স্টেইনের। তবে বিশ্বের এক নম্বর বোলার তো, কাল নাইটদের কাঁটা হয়ে ওঠার সম্ভাবনা নিশ্চয়ই থাকছে। |
ডেকান অধিনায়ক কুমার সঙ্গকারাও সঙ্গকারার মতো খেলছেন না। ‘ভাড়া বাড়ি’তে প্রথম হোম ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে কিছুটা হলেও অস্বচ্ছন্দ তাঁর দল। মুখে অবশ্য সঙ্গাকারা বলছেন, “কেকেআর শক্তিশালী টিম। কিন্তু চারটে ম্যাচ হেরেছি বলেই সব শেষ হয়ে যায়নি। বরং বলব, হেরেছি বলেই টিমটার মধ্যে সংঘবদ্ধতা বেড়েছে। কে বলতে পারে, কটক থেকেই আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু হবে না?” কিন্তু ডেকা অধিনায়ক যা-ই বলুন, নিজের নিজের শহরের সমর্থনের ঢেউয়ে যেখানে ভাসছে অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজিরা, ডেকান দলটা সেখানে কেমন যেন ছন্নছাড়া। তিনটে শহর মিলিয়ে হোম ম্যাচ হওয়ায় ঘরের মাঠে খেলার বাড়তি সুযোগ বলে কিছু নেই সঙ্গকারাদের জন্য। কটক স্টেশনের বাইরে ডেকান চার্জার্সের একটা মাঝারি মাপের হোর্ডিং আর বরাবাটির ভেতরে টিম লোগো সাদা-কালো ষাঁড়ের বিশাল একটা বেলুন সমর্থন বলতে ওইটুকুই। সঙ্গকারা, শিখর ধওয়ান বা স্টেইন নন কটকের জনতা বরং কেকেআরের তারকাদের দেখতে আগ্রহী। রবিবার ৪৩ হাজারের স্টেডিয়াম ভরলে কেকেআরের জন্যই ভরবে।
মহানদীর পাড়ে আইপিএল ফাইভের প্রথম ম্যাচ রঙিন হয়ে উঠতে পারে টুকরো টুকরো যুদ্ধেও। তা বরাবাটিকে এ দিন যতই ছিরিছাঁদহীন দেখাক না কেন। গম্ভীর বনাম স্টেইন থাকছে। থাকছে ব্রেট লি বনাম সঙ্গকারা। অঘটনের কবলে না পড়লে রবিবার হাসতে হাসতে মাঠ ছাড়ার কথা গৌতম গম্ভীরদের।
খটকা শুধু একটাই। ভাগ্যের বক্স অফিসে কেকেআরের যা অতীত রেকর্ড! পচা শামুকে না পা কাটে!
|