লোকসভা নির্বাচনের হাওয়া তুলতে এখন থেকেই সনিয়া ও রাহুল গাঁধীর বিরুদ্ধে আক্রমণের সুর চড়াতে বিজেপিকে পরামর্শ দিচ্ছে আরএসএস।
সঙ্ঘ নেতৃত্ব মনে করছেন, আগামী ভোটে মনমোহন সিংহ কংগ্রেসের প্রচারের প্রধান মুখ না-ও থাকতে পারেন। মনমোহনকে বেকায়দায় ফেলার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমকে আক্রমণের কৌশল ফলপ্রসূ হয়নি ঠিকই, কিন্তু আগামী নির্বাচনে সনিয়া ও রাহুল যে কংগ্রেসের প্রচারের কাণ্ডারী হবেন, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। দলের নিচুতলার কর্মীরাও চাইছেন, কংগ্রেসের ‘প্রথম পরিবার’-এর বিরুদ্ধে আক্রমণ তীব্রতর করতে। এই পরিস্থিতিতে সঙ্ঘ মনে করছে, এখন থেকেই ধীরে ধীরে সনিয়া-রাহুলকে আক্রমণ করা শুরু হোক। সঙ্ঘ সূত্রের মতে, দিল্লি পুরভোটের ফলাফলে স্পষ্ট, দুর্নীতি ও মূল্যবৃদ্ধি রুখতে শীলা দীক্ষিত এবং মনমোহন সরকারের ব্যর্থতার জন্যই মানুষ বিজেপিকে ভোট দিয়েছে। তবে এর জন্য শুধু মনমোহনকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর কৌশল নিয়ে লাভ নেই। বরং আক্রমণের অভিমুখ দশ জনপথের দিকে নিয়ে যাওয়া উচিত। শীলার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও তাঁকে আড়াল করে রেখেছেন সনিয়াই। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে আনার দায় কেন্দ্রের হলেও প্রধানমন্ত্রী নিজে ‘সিদ্ধান্তহীনতা’য় ভুগছেন। সঙ্ঘ তাই মনে করছে, সরকারের নানা পদক্ষেপে সনিয়া গাঁধী যেখানে নিজের ‘প্রভাব খাটান’, সেখানে আম-আদমির যন্ত্রণা নিয়ে তিনি নীরব কেন এই প্রশ্ন তোলা উচিত।
কিন্তু সরাসরি সনিয়াকে আক্রমণের ব্যাপারে বিজেপি নেতৃত্ব বরাবরই সতর্ক। গত বছর বফর্সের ‘ভূত’ যখন ফের গাঁধী পরিবারকে তাড়া করেছিল, সেই সময় সনিয়াকে আক্রমণ করা যথাযথ হবে কি না, তা নিয়ে গুয়াহাটির কর্মসমিতির বৈঠকে দু’দিন ধরে বিস্তর আলোচনা হয়। শেষ পর্যন্ত সংযত থেকেই সনিয়াকে আক্রমণ করেন লালকৃষ্ণ আডবাণীরা। গাঁধী পরিবারের বিরুদ্ধে যখন হরিয়ানায় অনৈতিক ভাবে রাজীব গাঁধী ট্রাস্টের জমি পাওয়ার অভিযোগ ওঠে, সে সময়ে সনিয়ার আকস্মিক অসুস্থতার কারণে বিজেপি বিষয়টি ঠান্ডা ঘরে পাঠিয়ে দেয়। এখনও তা নিয়ে আর মুখর হয়নি তারা। এমনকী সনিয়ার জামাই রবার্ট বঢরার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ সংক্রান্ত নথি তাদের নেতাদের কাছে গচ্ছিত থাকলেও তা নিয়ে খুব সরব হয়নি কেন্দ্রের প্রধান বিরোধী দল। আবার বিদেশি ব্যাঙ্কে কালো টাকা থাকার অভিযোগ সনিয়া খণ্ডন করার পরে তাঁকে চিঠি লিখে আক্ষেপ জানিয়েছিলেন আডবাণীই।
সনিয়াকে সরাসরি আক্রমণ না করার পিছনে বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের যুক্তিও রয়েছে। তাঁরা মনে করেন, মনমোহনের সঙ্গে সনিয়ার ‘দূরত্ব’ রয়েছে। ফলে মনমোহনকে নিশানা করলে কংগ্রেসও খুব বেশি আক্রমণাত্মক হবে না। কিন্তু সনিয়াকে নিশানা করলে গোটা কংগ্রেস এককাট্টা হয়ে পাল্টা আক্রমণে নামবে। কিন্তু সঙ্ঘ নেতৃত্ব মনে করছেন, এই অছিলায় বিজেপির প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সবথেকে প্রভাবশালী পরিবারকে ছাড় দেওয়া অনর্থক। উত্তরপ্রদেশের ভোটে বিজেপির কোনও মুখ না থাকলেও কংগ্রেসের প্রচারের মুখ ছিলেন রাহুল। ভবিষ্যতে তিনিই বিভিন্ন রাজ্যে প্রচারের ভার নেবেন। ফলে বিজেপিরও উচিত, মনমোহন সরকারকে দুর্বল করার পাশাপাশি গাঁধী পরিবারকেও নিশানা করা।
এ বছরের শেষেই গুজরাতে ভোট। নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ নেতা অমিত শাহের বক্তব্য, “অপেক্ষা করছি, রাহুল কবে গুজরাত যাবেন। উত্তরপ্রদেশে যে ‘রুদ্রমূর্তি’ নিয়ে তিনি প্রচার করেছেন, তার ফল সকলের সামনে। যে যে রাজ্যে তিনি প্রচারে গিয়েছেন, সেখানে ক্ষমতা দখল করতে পারেননি তিনি। আর গত নির্বাচনে সনিয়া গাঁধী গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীকে ‘মওত কা সওদাগর’ বলার পরিণতি কী হয়েছে, তা-ও সকলের জানা।” সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ জনতা পার্টি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামীকে সম্প্রতি এনডিএ-তে সামিল করানো হয়েছে। চিদম্বরমের বিরুদ্ধে তিনিই আদালতে লাগাতার মামলা লড়ে যাচ্ছেন। সনিয়া-রাহুলের বিরুদ্ধে তিনি ইতিমধ্যেই সংগঠিত আক্রমণ শুরু করে দিয়েছেন। রাহুল কেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ‘যোগ্য’ নন, সময়মতো তা খোলসা করারও হুমকি দিয়ে রেখেছেন। সঙ্ঘ চায়, বিজেপি-ও এ বারে রাজনৈতিক আক্রমণ শুরু করুক। |