ওড়িশার আদিবাসী বিধায়ক ঝিনা হিকাকার মুক্তি নিয়ে ধোঁয়াশার মধ্যেই আবার আঘাত হানল মাওবাদীরা। এ বার ছত্তীসগঢ়ের সুকমা জেলার জেলাশাসক অ্যালেক্স পল মেননকে দিনেদুপুরে অপহরণ করল তারা। ৩২ বছর বয়সী
|
জেলাশাসক
অ্যালেক্স পল মেনন। |
অ্যালেক্স তখন গ্রামবাসীদের নিয়ে ‘গ্রাম সুরাজ’ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন। সেই সময় আচমকা হানা দিয়ে তাঁর দুই দেহরক্ষীকে খতম করে তাঁকে অপহরণ করে নিয়ে যায় মাওবাদীরা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সুকমার জেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে কেরলাপালের মাঝিপাড়া গ্রামে এ দিন ‘গ্রাম সুরাজ’ কর্মসূচির সভা ছিল। গ্রামবাসীদের মধ্যে নকশালদের থেকে বিচ্ছিন্ন করতে, তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ গড়ে সুখ-দুঃখের কথা জানতে, পাশে দাঁড়াতেই এই ‘গ্রাম সুরাজ’ কর্মসূচি। আজ বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ অ্যালেক্স যখন মাঝিপাড়ার গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখনই অতর্কিতে হানা দেয় ২০ জন সশস্ত্র মাওবাদীর একটি দল। তাদের এই আচমকা আক্রমণের মুখে কোনও বাধাই তৈরি করতে পারেননি অ্যালেক্সের দুই দেহরক্ষী। তাঁদের খতম করে অ্যালেক্সকে নিয়ে নিকটবর্তী জঙ্গলে পালিয়ে যায় মাওবাদীরা। পরে পুলিশ সেখানে তল্লাশি চালালেও কোনও ফল হয়নি।
গত রাতে ছত্তীসগঢ়ের এক বিজেপি বিধায়ক ও আর এক জেলাশাসকরে কনভয় উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে মাওবাদীরা। তার পরে আজ অ্যালেক্সের অপহরণ। এর পরিপ্রেক্ষিতে এ দিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম কথা বলেন ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহের সঙ্গে। মাওবাদী মোকাবিলায় তাঁকে কেন্দ্রের সব রকম সাহায্য দেওয়ার কথাও জানান চিদম্বরম। জেলাশাসকের অপহরণের পরে প্রশাসনের জরুরি বৈঠকও করেন রমন সিংহ। |
রাতে অ্যালেক্সের স্ত্রী আশা মেনন মাওবাদীদের প্রতি আবেদন জানিয়ে বলেন, “আমার স্বামী অসুস্থ। তাঁর সঙ্গে ওষুধও নেই। তাই আমি মাওবাদীদের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, মানবিকতার খাতিরে তাঁকে যেন মুক্তি দেওয়া হয়।” তামিলনাড়ুর বাসিন্দা অ্যালেক্স ২০০৬ ব্যাচের আইএএস। সেখান থেকে তাঁর বাবা-মা এবং শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়েরাও তাঁর মুক্তির জন্য আবেদন জানান। অ্যালেক্সকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য মাওবাদীদের কাছে আবেদন জানান স্বামী অগ্নিবেশও। প্রয়োজনে এ ক্ষেত্রে তিনি মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করবেন বলেও প্রস্তাব দিয়েছেন।
ছত্তীসগঢ়ের মাওবাদী-অধ্যুষিত দন্তেওয়াড়া জেলা ভেঙে সুকমা জেলাটি সম্প্রতি তৈরি হয়েছে। জেলাশাসক হিসেবে এখানেই প্রথম কাজ শুরু করেন অ্যালেক্স। তাঁর খোঁজে ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলের নিকটবর্তী জঙ্গলে অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। সুকমা জেলার পুলিশ সুপার
অভিষেক শান্ডিল্য বলেন, “শুধু জেলাশাসকই নন, এ তল্লাটে গোটা প্রশাসনই জঙ্গিদের নিশানায়। জঙ্গিরা কোন দিক দিয়ে জেলাশাসককে নিয়ে যেতে পারে, তা আঁচ করেই তাঁকে উদ্ধার-অভিযানের ছক কষা হচ্ছে।” সুকমার ওই অঞ্চলটি থেকে ওড়িশা এবং অন্ধ্রপ্রদেশের সীমানা দু’টোই কাছাকাছি। তবে অপহৃত জেলাশাসকের মুক্তির ব্যাপারে শর্ত দিয়ে এখনও পর্যন্ত মাওবাদীদের কাছ থেকে কোনও ফোন আসেনি বলে স্থানীয় প্রশাসনের তরফে জানা গিয়েছে।
গত কাল গভীর রাতে ছত্তীসগঢ়ের এক বিজেপি বিধায়ক ও এক জেলাশাসকের কনভয়ের উপরেও হামলা চালায় মাওবাদীরা। বিজাপুর জেলায় ‘গ্রাম সুরাজ’ কর্মসূচির এক সভা সেরে তাঁরা ফিরছিলেন। পেগডাপল্লি এলাকা দিয়ে তাঁদের কনভয়টি যাওয়ার সময় শক্তিশালী ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ ঘটায় মাওবাদীরা। অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছেন বিজেপি বিধায়ক মহেশ গাগডা ও জেলাশাসক রজত কুমার। তবে ঘটনাস্থলেই মারা গিয়েছেন তিন সাধারণ নাগরিক। গুরুতর জখম হয়েছেন এক জন। প্রসঙ্গত, গ্রাম সুরাজ কর্মসূচির উপরে মাওবাদীদের রোষ এই প্রথম। মনে করা হচ্ছে, মাওবাদীদের থেকে গ্রামের মানুষকে বিচ্ছিন্ন করতে চাওয়া হচ্ছে বলেই এই কর্মসূচির সঙ্গে যুক্তরা মাওবাদীদের রোষে পড়ছেন।
এ দিকে, ২৫ এপ্রিলের আগে অপহৃত বিধায়ক ঝিনা হিকাকার মুক্তির সম্ভাবনা প্রায় নেই। মাওবাদীরা আজ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ওই দিন গণ-আদালত বসিয়ে হিকাকার বিচার হবে। ২৯ জনকে জেল থেকে মুক্তি দেওয়ার শর্ত রেখেছিল মাওবাদীরা। সরকার সম্প্রতি জানায় ১৩ জন মাওবাদীকে মুক্তি দেওয়া যেতে পারে। তাতে সম্মত হয়নি মাওবাদীরা। তবে ১৩ জনের মধ্যে ১২ জনের জামিনের ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই করে দিয়েছে ওড়িশা সরকার। |