রাতে ঘরে ঢুকে তৃণমূলের এক নেতা ও তাঁর স্ত্রীকে মারধর ও বোমাবাজির অভিযোগ উঠল দলেরই অন্য গোষ্ঠীর আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। ইরফান শেখ নামে বোলপুরের পাঁচশোয়া এলাকার ওই নেতা স্থানীয় হাইস্কুলের ভোটে তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছিলেন, জিতে সম্পাদকও হয়েছেন। কিন্তু বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের দাবি, “ইরফান সিপিএমের লোক। এটা ওদের দলেরই গণ্ডগোল।”
শুক্রবার রাতে বোলপুরের বাহিরী-পাঁচশোয়া পঞ্চায়েত এলাকার সুলতানপুরে ইরফান শেখের বাড়িতে হামলা হয়। মারধরে তাঁর স্ত্রী ফতেমা বিবি আহত হন। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন, সেখান থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। তবে ঘটনার পর থেকে ইরফান শেখের খোঁজ মিলছে না। পুলিশ সূত্রের খবর, বেশ কয়েকটি সংঘর্ষের মামলায় তাঁকে খোঁজা হচ্ছে। সম্ভবত ধরার পড়ার ভয়েই তিনি বেপাত্তা হয়ে গিয়েছেন। ফতেমা বিবি ১৬ জনের নামে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাঁরা সকলেই তৃণমূলের লোক বলে এলাকায় পরিচিত। বীরভূমের পুলিশ সুপার হৃষিকেশ মিনা বলেন, “আমরা তদন্ত শুরু করেছি।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ লাঠি, টাঙ্গি, বোমা নিয়ে পাঁচশোয়া রবীন্দ্র বিদ্যাপীঠের পরিচালন সমিতির সম্পাদক ইরফান শেখের বাড়িতে চড়াও হয় ১৫-১৬ জন দুষ্কৃতী। তিনি তখন রাতের খাওয়া সারছিলেন। ঘরে ঢুকেই দুষ্কৃতীরা তাঁকে পেটাতে থাকে। তাঁর স্ত্রী বাধা দিতে গেলে তাঁকেও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। বেরিয়ে যাওয়ার সময়ে তারা বাড়িতে বোমা ছোড়ে, চালায় আগুন লেগে যায়। আশপাশের কয়েকটি বাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফতেমা বিবির অভিযোগ, “পাশের সিমুলিয়া গ্রাম থেকে শেখ কাসেম, রাশেদ শেখ, হাসিম শেখের নেতৃত্বে আমাদের উপরে হামলা চালানো হয়। তারা প্রত্যেকেই তৃণমূল করেন।”
গত কয়েক মাস ধরে তৃণমূলের প্রকাশ্য গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কখনও মিছিল-পাল্টা মিছিল, কখনও সংঘর্ষের চেহারা নিয়েছে। সম্প্রতি বীরভূমের সাংসদ শতাব্দী রায় এ নিয়ে কর্মিসভায় আক্ষেপও করেন। তৃণমূল সূত্রের খবর, জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল গোষ্ঠীর সঙ্গে বারবার ঝামেলায় জড়াচ্ছে জেলা যুব সাধারণ সম্পাদক কাজল শেখের (কেতুগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক শেখ শাহনওয়াজের ভাই) গোষ্ঠী। ইরফান শেখ কাজলেরই অনুগামী বলে পরিচিত। তাঁরই সমর্থনে তিনি স্কুলভোটে দাঁড়িয়েছিলেন, বিপরীতে ছিলেন অনুব্রত গোষ্ঠীর প্রার্থীরা। জেলা সভাপতির অনুগামীদের হারিয়েই ইরফান সম্পাদক হন।
অনুব্রতবাবু অবশ্য দাবি করেন, “তৃণমূলে কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। ইরফান শেখ সিপিএমের সঙ্গে যুক্ত। ১০০ দিনের কাজের ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে ওদের নিজেদের গণ্ডগোলেই এই ঘটনা।” অথচ নানুরের তৃণমূল বিধায়ক গদাধর হাজরার বক্তব্য, “ইরফান শেখ আমাদের দলের সক্রিয় কর্মী। আমাদের হয়েই উনি স্কুলভোটে দাঁড়িয়েছিলেন।” তবে হামলায় কারা যুক্ত তা নিয়ে তিনি মন্তব্য করতে চাননি। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সমীর ভট্টাচার্যও বলেন, “ইরফান শেখ আমাদের দলের কেউ নন।” তাঁর দাবি, “স্কুল নির্বাচনে অনুব্রত-গোষ্ঠীর লোকেদের হারিয়ে জেতাই তাঁর কাল হয়েছে। সম্ভবত সেই রাগেই এই হামলা।” |