চুরিতে বাধা দেওয়াতেই শান্তিনিকেতনে খুন হন অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষিকা রেণু সরকার (৭৮)বোলপুর আদালতে সম্প্রতি জমা দেওয়া চার্জশিটে এই দাবি করেছে পুলিশ। ইতিমধ্যেই ওই মামলায় তিন জন ধরা পড়েছে। তিন জনই হত্যাকাণ্ডে যুক্ত বলেও দাবি করা হয়েছে চার্জশিটে।
বীরভূমের পুলিশ সুপার হৃষিকেশ মিনা শনিবার বলেন, “রেণুদেবীর ঘরে পাওয়া হাতের ছাপ ধৃত মঙ্গল সাহানি ও পিন্টু দাসের বলে ফরেন্সিক রিপোর্টে জানা গিয়েছে। ওই বাড়িতে চুরি করতে গিয়ে বাধা পেয়ে তারা বৃদ্ধার মাথায় রডের আঘাত করে। তাতেই বৃদ্ধার মৃত্যু হয় বলে জেরায় ওরা পুলিশের কাছে স্বীকারও করেছে।” তাঁর দাবি,
|
রেণু সরকার। ফাইল চিত্র। |
রেণুদেবীর বাড়ির কেয়ারটেকার, ধৃত উজ্জ্বল তপাদারও এই খুনে জড়িত। রেণুদেবী খুন হওয়ার আগে-পরে উজ্জ্বল ও মঙ্গল মোবাইলে নিজেদের মধ্যে কথা বলেছিল বলে ‘কল-লিস্ট’ যাচাই করে জেনেছে পুলিশ। পুলিশ সুপারের কথায়, “ঘটনার পরে উজ্জ্বল এ কথা পুলিশের কাছে চেপে গিয়েছিল। ওর ভূমিকা রহস্যজনক ছিল।” বুধবার পুলিশ আদালতে ওই চার্জশিট জমা দিয়েছে।নিহতের মেয়ে অদিতি সরকার বলেন, “মায়ের খুনের ঘটনায় উজ্জ্বল যুক্ত রয়েছে জেনে আমরা মর্মাহত। ওকে মা খুব ভরসা করতেন। মা খুন হওয়ার কয়েক মাস আগে শান্তিনিকেতনের বাড়িতে বাবা ও মায়ের খাদ্যে বিষক্রিয়া হয়েছিল। এখন মনে হচ্ছে, তখনই ওদের মারার চক্রান্ত হয়েছিল। আগে সতর্ক হলে, হয়তো মাকে হারাতাম না।”
শান্তিনিকেতনের বাগানপাড়ায় ১৩ জানুয়ারি রাতে মহাদেবী বিড়লা গার্লস স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষিকা রেণুদেবী খুন হন। কলকাতায় ভবানীপুরের টাউনসেন্ড রোডে তাঁর বাড়ি। পরদিন পুলিশ উজ্জ্বলকে গ্রেফতার করে। প্রথমে পুলিশ দাবি করেছিল, জেরায় উজ্জ্বল তাদের কাছে রেণুদেবীকে খুন করার কথা স্বীকার করেছে। ১৮ জানুয়ারি তারাপীঠ থেকে ওই খুনে জড়িত অভিযোগে এলাকার পরিচিত দুষ্কৃতী মঙ্গল সাহানিকে ধরা হয়। কয়েকদিন পরে পুলিশ মঙ্গলের সঙ্গী পিন্টু দাসকেও ধরে। এর পরে পুলিশ দাবি করে, মঙ্গল ও পিন্টু ওই বাড়িতে চুরি করতে ঢুকেছিল। ঘুম ভেঙে যাওয়ায় চিৎকার করে ওঠেন রেণুদেবী। তখন মঙ্গল তাঁর মুখে রডের ঘা মারে। বৃদ্ধা লুটিয়ে পড়েন। রেণুদেবীর মোবাইল ফোন আর ব্যাগ হাতড়ে আড়াইশো টাকা বের করে আততায়ীরা পালায়।
পরে পুলিশ মঙ্গলকে সঙ্গে নিয়ে রেণুদেবীর বাড়ির কিছুটা দূর থেকে ‘খুনে ব্যবহার করা’ রডটি উদ্ধার করে। রেণুদেবীর ঘরে সে দিন কী ঘটেছিল, মঙ্গল পুলিশকে তা অভিনয় করে দেখায়। কলকাতার ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা শান্তিনিকেতনে এসে রেণুদেবীর ঘর থেকে রক্তমাখা বালিশ, বিছানা, চাদরের ছবি ও নমুনা সংগ্রহ করেন। পুলিশ সুপার বলেন, “ফরেন্সিক রিপোর্ট সম্পর্কে আরও স্পষ্ট মতামত নেওয়ার জন্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।”
তবে রেণুদেবীর খুন নিয়ে এখনও কয়েকটি ব্যাপারে ‘ধোঁয়াশা’ রয়েছে।
প্রথমত, দুষ্কৃতীরা চুরি করতে গেলেও বৃদ্ধার হাতের সোনার নোয়া ও দুল নিয়ে যায়নি। শুধু কয়েকশো টাকা নিয়ে গিয়েছিল। তা হলে পুলিশ কী করে দাবি করছে দুষ্কৃতীরা শুধু চুরি করতেই সেখানে গিয়েছিল?
দ্বিতীয়ত, কেয়ারটেকারকে গ্রেফতার করার পরে পুলিশ জানিয়েছিল, সে ওই বাড়িতে লজ তৈরি করার প্রস্তাব বৃদ্ধাকে দিয়েছিল। বৃদ্ধা রাজি না হওয়ায় তাঁকে ‘বালিশ চাপা’ দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়। পরে পুলিশ দাবি করল, চুরিতে বাধা পেয়ে মঙ্গলরা তাঁকে মেরেছে। পুলিশ বক্তব্য পাল্টাল কেন?
এ সব প্রশ্নের জবাব না দিয়ে পুলিশ সুপার দাবি করেন, “কেয়ারটেকার প্রথমে আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা না করায় জটিলতা বেড়েছিল। আমরা কোনও বিভ্রান্তি ছড়াইনি।” |