নববর্ষের সকালেও উঠল না ‘ব্রিটিশ’ ফতোয়া!
সাংবাদিকদের ইস্টবেঙ্গল মাঠে ঢোকার উপর নিষেধাজ্ঞা জারির বিষয়ে অনড়ই থাকলেন ট্রেভর জেমস মর্গ্যান।
ঐতিহ্য মেনে শনিবার সকালে বিভিন্ন ক্লাবের বারপুজো ঘিরে যখন উৎসবের পরিবেশ, তখন মর্গ্যানের জারি করা ফতোয়া ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠল ইস্টবেঙ্গল তাঁবু। অনুশীলনের শুরুতে মাঠে ঢুকে পড়া সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের কোচের নির্দেশে তাঁবুর বাইরে বের করে দেওয়া হয়। ক্লাবের মূল গেটের বাইরে দীর্ঘ তর্কাতর্কি, ঝামেলার পর কয়েক জন কর্তার হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত সাংবাদিকদের মাঠে ঢুকতে দেওয়া হলেও দ্রুত অনুশীলন থামিয়ে তাঁবুতে ফিরে যান ইস্টবেঙ্গল কোচ। বারপুজোর ধারেকাছেও যাননি। তাঁবুতে বসে পরে মর্গ্যান বলেন “আমি সাংবাদিকদের মাঠে ঢুকতে দেব না। ছবিও তুলতে দেব না। অনুশীলনের সময় নানা রকম ঘটনা ঘটতেই পারে। চাই না সেগুলো বাইরে বেরোক।” |
সানাইয়ের সুর, মন্ত্রোচ্চারণ, মিষ্টি বিতরণের মাঝে এরকম ঘটনা ঘটায় রীতিমতো বিব্রত ক্লাব কর্তাদের একাংশ। ক্লাবের অন্যতম শীর্ষ কর্তা দেবব্রত সরকার বললেন, “কোচের সঙ্গে একটা ঘটনা নিয়ে সাংবাদিকদের সমস্যা তৈরি হয়েছে। চেষ্টা করছি সেটা যাতে দ্রুত মিটে যায়। কোচের সঙ্গে কথা বলব আমরা।” মর্গ্যান অবশ্য এ দিনও বলেন, “চার দিন আগে ক্লাব কর্তাদের ই-মেল করে সাংবাদিকদের মাঠে ঢুকতে না দেওয়ার কথা জানিয়ে দিতে বলেছিলাম। ওরা কেন জানায়নি, জানি না। কালও (রবিবার) কিন্তু কাউকে ঢুকতে দেব না।” উল্লেখ্য সোমবার আই লিগে ইস্টবেঙ্গলের ম্যাচ রয়েছে চিরাগ কেরলের সঙ্গে। ফলে রবিবার সকালে খবর সংগ্রহ করতে সাংবাদিকরা যাবেনই।
মর্গ্যানের এই ফতোয়ায় ময়দান জুড়ে তীব্র আলোড়ন। বিস্মিত এবং হতঅবাক ইস্টবেঙ্গল-সহ ময়দানে বড় ক্লাবে দীর্ঘ দিন কোচিং করা প্রাক্তন কোচেরাও। তাঁরা অবাক বারপুজোর মতো শুভ দিনেও মর্গ্যান এ রকম তিক্ততার আবহাওয়া তৈরি করে রাখায়। ময়দানের সর্বকালের অন্যতম সফল কোচ প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ঘটনা শুনে বললেন, “তাই নাকি? বাজে ব্যাপার। বারপুজোর দিন তো মিলনমেলা হয়ে যায় ক্লাব তাঁবু। আমাকে তো কত বার কত ভাবে ছিঁড়ে খেয়েছে সংবাদমাধ্যম। আমি কখনও গেট বন্ধ করতে বলিনি। ফুটবলাররা মারামারি করবে আর সাংবাদিকরা খবর লিখবে না, হয় নাকি? এটা তো ওদের কাজ। আমি হলে ফুটবলারদের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নিতাম যাতে এ রকম আর না করে।” পি কে অনেক রেখে ঢেকে বললেও অমল দত্ত আরও চাঁচাছোলা। বিতর্কিত প্রাক্তন কোচের মন্তব্য “হাস্যকর ব্যাপার। যত আটকাবে তত বেশি খবর বেরোবে। ধুস, এ ভাবে সাংবাদিকদের আটকানো যায় নাকি? নিজের ফুটবলারদের ঝামেলা আটকাতে পারবে না। আবার লিখলে দরজা বন্ধ করবে। আরে এ তো হিটলারি আচরণ।” সঙ্গে সংযোজন, “কোচ তো ক্লাবের শেষ কথা নয়। কেন কর্তারা হস্তক্ষেপ করছেন না?” |
যাঁদের মারামারির খবর ছাপা ও লেখার জন্য মর্গ্যানের এই ফতোয়া, সেই টোলগে ওজবে এবং গুরবিন্দর সিংহ এ দিন অনুশীলন করেন অন্যদের সঙ্গেই। ইস্টবেঙ্গল বারপুজোয় হল যথেষ্ট হইহই করে। প্রেসিডেন্ট-সচিব-সহ কার্যকর কমিটির সদস্যরা তো ছিলেনই, ছিলেন কয়েকশো সদস্য-সমর্থক। বহু মহিলা সদস্যও এসেছিলেন। এ বারের অস্থায়ী অধিনায়ক সঞ্জু প্রধানের সঙ্গে সামনের মরসুমের অধিনায়ক মেহতাব হোসেন পাশাপাশি বসে ছিলেন বারপুজোর সময়। ওডাফা-ব্যারেটোরা ছিলেন মারগাওয়ে। ফলে মোহনবাগান মাঠের বারপুজোয় মণীশ মাথানি ছাড়া নামী ফুটবলাররা কেউই ছিলেন না। কিন্তু এসেছিলেন প্রেসিডেন্ট-সচিব-সহ বহু সদস্য সমর্থক। ইস্টবেঙ্গল মাঠে ঝামেলার খবর পৌঁছে যাওয়ায় মোহনবাগান তাঁবুতে ‘আন্তরিকতার ছোঁয়া’ যেন ছিল একটু বেশিই। ক্লাব তাঁবুতে বসিয়ে সবাইকে ডেকে ডেকে লুচি, ছোলার ডাল, আলুর দম, পান্তুয়া খাওয়ানো হয়। মজা করে মোহনবাগান সচিব অঞ্জন মিত্র, অর্থসচিব দেবাশিস দত্তদের বলতে শোনা যায়, “আমাদের মাঠে কিন্তু কোনও ফতোয়া নেই।”
|