পয়লা বৈশাখ মানে তাঁর কাছে বাড়ি-বাড়ি দাওয়াত। বিকেলে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে বেরিয়ে দেদার আড্ডা।
পয়লা বৈশাখ মানে তাঁর কাছে পান্তা ভাত। আলুর তরকারি। ইলিশ মাছ। বাংলাদেশে যা চিরাচরিত রীতি। নববর্ষে প্লেট পিছু দাম পড়ে দু’হাজার, কিন্তু বন্ধুদের নিয়ে ঢাকায় পছন্দের রেস্তোরাঁয় ঢুকে পড়তে দু’বার ভাবেন না তিনি।
কিন্তু সাকিব আল হাসানের কাছে এ বারের নববর্ষ একটু অন্য রকম। কলকাতায় তাঁর ঠিকানা যে পাঁচতারা হোটেল, সেখানকার মেনুতে ইলিশ-আলুর তরকারি থাকতে পারে। কিন্তু পান্তা ভাত? পাঁচতারা হোটেলে সে সব পাগলের প্রলাপ। দাওয়াতের পাটও নেই এ বার। কলকাতায় এক আত্মীয় আছেন। কিন্তু তিনিও শহরের বাইরে। ইডেনে বর্ষশেষের রাতে দুই বাংলাকে উৎসবের প্লাবনে ভাসিয়েও তাই নাইটদের নতুন নায়কের মন খারাপ। নববর্ষের দিনটা একা একাই কাটল সাকিবের। হোটেলে ঘরবন্দি হয়ে। সকাল থেকেই এসেছে সাক্ষাৎকারের অনুরোধ এবং সবাইকেই ‘না’ বলে দিয়েছেন সাকিব। টিমের সঙ্গে নয়, লাঞ্চ সেরেছেন রুম সার্ভিস ডেকে। প্র্যাক্টিস ছিল না বলে মাঠে যাওয়ার বালাই ছিল না। বিকেলে ছিল এক বাণিজ্যিক অনুষ্ঠান। তা-ও বাতিল। উলটে ঘরের এলসিডি টিভিতে চলেছে পুরনো ফুটবল ম্যাচ। ক্রিকেটের মতো ওপার বাংলার বাঙালি যে ফুটবলেরও ভক্ত। “জানেন, এই দিনটাতে বাংলাদেশ পুরো পাগল হয়ে যায়,” শুক্রবার গভীর রাতে হোটেলে ফিরতে ফিরতে এক কেকেআর কর্তাকে বলেছিলেন সাকিব। “আমাদের দেশে রেওয়াজই হচ্ছে নববর্ষের দিনে আর কিছু না হোক, পান্তা ভাত আর ইলিশ থাকতেই হবে। এ বার আর সে সবের পাট নেই। এমনি দিনে এই মেনুর দাম একশো-দুশো টাকা পড়ে। কিন্তু পয়লা বৈশাখে বেড়ে দাঁড়ায় হাজারদুয়েক।” শুক্রবার ইডেন থেকে বেরোতে না বেরোতেই এসেছে বাড়ির ফোন। মোবাইলে উপচে পড়েছে অসংখ্য শুভেচ্ছা বার্তা। সব কিছু দেখেশুনে নাকি কেমন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছিলেন বাংলাদেশি অলরাউন্ডার। বলে ফেলেছেন, “ইডেন আমার প্রিয় মাঠ। কলকাতাও দ্বিতীয় ঘর বলা যায়। সেখানে ম্যাচ জিতিয়েছি বলে ভাল লাগছে। কিন্তু এ রকম অবস্থা হবে বুঝিনি।”
বোঝার কথাও নয়। বরাবরই তিনি লাজুক, ধীরস্থির মানুষ। এই যে ম্যাচ জেতানোর পর নাইট ডাগআউটে তাঁকে নিয়ে এত হুল্লোড়, তা নিয়েও উদাসীন তিনি। ‘কী আর এমন করেছি’ গোছের ভাব নিয়ে কানে হেডফোন গুঁজে দিয়েছেন। ভালই জানেন, ইডেনে ম্যাচ জেতানোর পরে নাইটদের অন্দরমহলেই কানাঘুষো কোন যুক্তিতে প্রথম দুটো ম্যাচে আইসিসির বিচারে বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডারকে বসিয়ে প্রথম এগারো বাছছিল নাইটরা? |
এ সব খুচরো মন খারাপ কাটিয়ে উঠে সাকিব ও তাঁর টিমের সামনে এ বার ম্যাচ জেতার হ্যাটট্রিক করার লক্ষ্য। রবিবারের প্রতিপক্ষ অ্যাডাম গিলক্রিস্টের কিংস ইলেভেন পঞ্জাব। যারা সদ্য মোহালিতে ম্যাচ জিতে উঠেছে। শন মার্শ-মাসকারেনহাস ফিরছেন ফর্মে। কথা হচ্ছে, মোহালির উইকেট আর ইডেনের উইকেটে আকাশপাতাল তাফাত। ইডেনের পিচ নিয়ে যে খুব প্রসন্ন নন, হাবেভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন গম্ভীর। এখনও সরকারি ভাবে সিএবি-র কাছে নালিশ করেনি কেকেআর, কিন্তু এ ভাবে চললে অদূর ভবিষ্যতে করতেই পারে। বিকেলে এক অনুষ্ঠানে এসে বোলিং পরামর্শদাতা ওয়াসিম আক্রম অবশ্য পিচ বিতর্কে ঢুকলেন না। বরং বললেন, “টিমটা এককাট্টা। দুর্দান্ত নেতৃত্ব দিচ্ছে গম্ভীর। আমি আগেই বলেছিলাম, দুটো ম্যাচ দিয়ে আমাদের বিচার করবেন না। ক্ষমতা অনুযায়ী খেললে টিমটা অনেক দূর যাবে।”
যাওয়ার মশলা তো আছে। কিন্তু তার জন্য ঘরের মাঠে দু’নম্বর জয়টা সেরে ফেলা দরকার। দুশ্চিন্তাও অবশ্য থাকছে। ফর্মে থাকা বালাজির চোট। তাঁর জায়গায় রবিবার খেলতে পারেন সামি আমেদ বা জয়দেব উনাদকট। লক্ষ্মীরতন শুক্ল এই ম্যাচেও নেই। চোট সারেনি। আর রবিবার যাঁর ইডেনে থাকার কথা, সেই পঞ্জাব মালকিন প্রীতি জিন্টা নিশ্চয়ই খবরগুলো পেলে খুশিই হবেন। ‘দিল সে’র নায়িকা ও তাঁর টিম ইডেনে কিং খানের টিমকে যে ‘দিল সে’ বরণ করছে না, গ্যারান্টি। |