ইউপিএ সরকারের রাজনৈতিক বাধ্যবাধ্যকতার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের কাছ থেকে নিজের রাজ্যের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি আদায় করে নিলেন অখিলেশ যাদব। রাজ্যের উন্নয়নে আরও সাহায্য ও বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অর্থ ঠিক সময়ে পাওয়ার আর্জি নিয়ে আজ প্রধানমন্ত্রীর কাছে দরবার করেন উত্তরপ্রদেশের নতুন মুখ্যমন্ত্রী। ঘণ্টাখানেকের ওই বৈঠকের পরে অখিলেশ যাদব দাবি করেন, “প্রধানমন্ত্রী উত্তরপ্রদেশ সরকারকে সব ধরনের সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন।”
মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আজ প্রথম বার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন অখিলেশ। মনে করা হয়েছিল, অন্য মুখ্যমন্ত্রীদের ধাঁচে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ চাইবেন তিনিও। কিন্তু সেই জল্পনায় জল ঢেলে অখিলেশ জানান, “আমি প্যাকেজ চাইতে আসেনি। রাজ্য যাতে কেন্দ্রের বরাদ্দ ঠিক সময়ে পায়, তার জন্য তদ্বির করতে এসেছিলাম।” সমাজবাদী পার্টি সূত্রের খবর, মায়াবতী জমানার শেষ পর্বে গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন-সহ একাধিক কেন্দ্রীয় প্রকল্পে দুর্নীতি ধরা পড়ায় অর্থ দেওয়ার ব্যাপারে বাড়তি সতর্ক হয়েছিল কেন্দ্র। সপা নেতৃত্বের অভিযোগ, সরকার বদলের পরেও সেই মনোভাবের খুব একটা বদল ঘটেনি। সেই জন্যই অখিলেশের আজকের বৈঠক। ১০০ দিনের কাজ, সড়ক নির্মাণ-সহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বরাদ্দ সময়ে পাওয়ার আর্জি জানান অখিলেশ। তা ছাড়া, চলতি বছরেই ইলাহাবাদে কুম্ভ মেলা। তার জন্য গঙ্গা সংস্কার ও নদী সংলগ্ন এলাকার পরিকাঠামো উন্নয়নে কেন্দ্রের কাছে অতিরিক্ত সাহায্য চেয়েছেন অখিলেশ। এ ছাড়া রাজ্যে কয়লার ঘাটতি নিয়েও দু’জনের কথা হয়। |
বিশেষজ্ঞদের মতে, অখিলেশকে দেওয়া মনমোহনের প্রতিশ্রুতির অনেকটাই আসলে সম্ভাব্য রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে। আগামী জুলাই মাসে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। সংখ্যাতত্ত্বের ভিত্তিতে এই মুহূর্তে সপা-র যা শক্তি, তাতে তৃণমূল কংগ্রেসের মতো মুলায়ম-অখিলেশকেও চটানো সম্ভব নয় কংগ্রেসের। কংগ্রেস নেতৃত্ব ভালই জানেন, রাষ্ট্রপতি পদে নিজেদের প্রার্থীকে জেতাতে হলে সপা’র সমর্থন একান্ত প্রয়োজন। এই পরিস্থিতিতে সপা নেতৃত্বের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেই চলতে চাইছেন তাঁরা। যদিও কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, “বিষয়টিকে এ ভাবে দেখা উচিত নয়। নতুন সরকার ক্ষমতায় এসেছে। তাই ওই রাজ্যের উন্নয়নে কেন্দ্র সাহায্য করতে বদ্ধপরিকর।”
অখিলেশ আজ মনমোহনকে জানিয়েছেন, কৃষি ও কৃষি সংক্রান্ত ক্ষেত্রগুলির উন্নয়নই তাঁর সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য, এবং তার জন্য রাজ্যে বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ প্রয়োজন। বর্তমানে গোটা দেশেই কয়লার জোগানের সমস্যা চলছে। আগামী দিনে যাতে উত্তরপ্রদেশ সেই সমস্যার শিকার না হয়, তা দেখার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে বিশেষ অনুরোধ করেন তিনি। এ ছাড়া রাজ্যের বুন্দেলখণ্ড ও পূর্বাঞ্চল এলাকার জন্য যোজনা কমিশন যে বরাদ্দ বেঁধে দিয়েছে, তা-ও যথেষ্ট নয় বলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন অখিলেশ। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রেও কেন্দ্রের সাহায্য চেয়েছেন তিনি। উত্তরপ্রদেশের পূর্ব ভাগের সাতটি জেলার মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই জাপানি এনসেফেলাইটিসের শিকার। ওই রোগ প্রতিরোধে দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সাহায্য চেয়েছেন অখিলেশ। সপা নেতৃত্বের দাবি, প্রধানমন্ত্রী সব ক’টি সমস্যার সমাধানে যথাসম্ভব সাহায্যেরই আশ্বাস দিয়েছেন। |