দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রী সম্মেলনের ঠিক দু’দিন আগে ফের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে পত্রাঘাত করলেন নরেন্দ্র মোদী। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাতের প্রসঙ্গ তুলে সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) সংশোধনী আইনটির খসড়ার বিরোধিতা করে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী সম্মেলনে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাতের প্রশ্নে সরকারকে সম্মিলিত ভাবে কোণঠাসা করাই যে বিরোধীদের কৌশল, প্রধানমন্ত্রীকে লেখা এই চিঠিতে তা ফের স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি।
গোধরা-পরবর্তী দাঙ্গার কলঙ্ক মুছে সদ্য দু’দিন আগেই প্রধানমন্ত্রীকে একটি চিঠি লিখেছিলেন মোদী। সম্পত্তি কেনাবেচায় বাজেটে যে কর চাপানো হয়েছে, তা রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ বলে ওই চিঠিতে উল্লেখ করেছিলেন তিনি। এর আগে জাতীয় সন্ত্রাস দমন কেন্দ্র (এনসিটিসি), আরপিএফের হাতে পুলিশের ক্ষমতা তুলে দেওয়ার মতো বিষয় নিয়েও সরব হয়েছিলেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী। মমতা-সহ বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর চাপে সরকার এনসিটিসি নিয়ে আলোচনার জন্য পৃথক বৈঠকও ডেকেছে। এ বারে বৈঠকের ঠিক দু’দিন আগে তিনি এমন একটি প্রসঙ্গ তুলেছেন, যা নিয়ে শুধু বাম-বিজেপির মতো বিরোধীরাই নয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো ইউপিএ শরিকদেরও আপত্তি রয়েছে।
মোদীর বক্তব্য, এই সংশোধনী আইনে বলা হচ্ছে, সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে এ বারে গোটা রাজ্যে কাউকে গ্রেফতার ও তদন্ত করার অধিকার দেওয়া হবে। এত দিন যেটি সীমান্ত এলাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। মোদী লিখেছেন, “অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার নামে সরকার এক দিকে রাজ্যগুলির কাছে আরও বৃহত্তর সমন্বয় প্রত্যাশা করে, অন্য দিকে রাজ্য পুলিশের মনোবল ভেঙ্গে দিয়ে রাজ্যের অধিকার খর্ব করতে ধারাবাহিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এর আগেও অনেকগুলি ঘটনার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারের এই প্রয়াস লক্ষ করা গিয়েছে। এটি আর একটি ‘স্টেট উইদইন স্টেট’ গড়ার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। কেন্দ্রের এই প্রয়াসে আমার ঘোর আপত্তি রয়েছে।” |
সংসদের বাজেট অধিবেশনেই বিলটি এনেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু বাম-বিজেপির আপত্তিতে সেটি পিছিয়ে দেওয়া হয়। ইউপিএ শরিক তৃণমূলও দাবি করে, মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করে তবেই বিলটি আনা হোক। রাজ্যসভায় বিলটি আনার সময় সমালোচনার মুখে পড়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম জানিয়েছিলেন, সীমান্ত ছাড়াও অনেক রাজ্যে এখন মাওবাদী দমন অভিযানে বিএসএফ-কে নিয়োগ করা হচ্ছে। রাজ্যের অনুমতি ছাড়া এই বাহিনী কোথাও নিয়োগ করা হয় না। ফলে রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপের প্রশ্নই নেই। কিন্তু বিজেপি নেতা অরুণ জেটলির কথায়, “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই যুক্তি দিলেও বিলের খসড়ায় কোথাও বলা নেই, এ ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার চাইলেই সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে এই অধিকার দেওয়া হবে।” সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য সীতারাম ইয়েচুরিও সরকারের এই পদক্ষেপে আপত্তি তুলে বলেন, “আগে সীমান্ত থেকে ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিএসএফকে অভিযানের ক্ষমতা দেওয়া ছিল। এখন রাজ্য পুলিশের মতামত ছাড়াই গোটা রাজ্যে এবং সেই সূত্র ধরে গোটা দেশে এই ক্ষমতা তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে।”
রাজ্যসভায় বিরোধী ও শরিকদের আপত্তি সত্ত্বেও সোমবারের বৈঠকের জন্য মুখ্যমন্ত্রীদের যে আলোচ্যসূচি সরবরাহ করা হয়েছে, তাতে কোনও পরিবর্তন ছাড়াই সরকার মূল বিলের খসড়াটি পাঠিয়ে দিয়েছে। মোদী এখানেই আপত্তি জানিয়েছেন। তাঁর মতে, “স্টেট রিজার্ভ পুলিশের মতো আধা-সামরিক বাহিনী রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তার জন্য মোতায়েন থাকে। কিন্তু তাদের হাতেও গ্রেফতার ও তদন্তের অধিকার দেওয়া হয়নি। তা হলে কীসের জন্য সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে এই অধিকার দেওয়া হচ্ছে?” বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য, দুর্নীতি-মূল্যবৃদ্ধি-সহ একাধিক বিষয়ে এমনিতেই দুর্বল হয়ে পড়েছে মনমোহন-সরকার। শরিকদের সঙ্গেও কংগ্রেসের সম্পর্কও মধুর নয়। এই পরিস্থিতিতে যে বিষয়গুলি নিয়ে দলমত-নির্বিশেষে প্রায় সকলেরই আপত্তি রয়েছে, তাতে একজোট হয়ে সরকারকে কোণঠাসা করাই হবে ঠিক কাজ। এই সুযোগে কংগ্রেস-বিরোধিতার রাশটিও নিজেদের হাতে তুলে নিতে চায় কেন্দ্রের প্রধান বিরোধী দল। |