তিন রাজ্যে বিপর্যয়ের জের
ঢাল অ্যান্টনি কমিটি, রদবদলে উদ্যোগী সনিয়া-রাহুল
সাম্প্রতিক বিধানসভা ভোটে বিপর্যয় ও সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণ খতিয়ে দেখতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনির নেতৃত্বে সনিয়া গাঁধী কমিটি গড়েছেন ঠিকই, কিন্তু তাকে ঘিরে উৎসাহ নেই অধিকাংশ কংগ্রেস নেতার। উল্টে যে কোনও বিপর্যয়ের পর কমিটি গড়ে দেওয়ার ‘ঐতিহ্য’ নিয়েই এখন সমালোচনা চলছে দলের অন্দরমহলে।
কংগ্রেস কেন্দ্রীয় নেতাদের একাংশের মতে, কমিটি গড়ে দেওয়াটা আসলে লোক দেখানো। যার আসল উদ্দেশ্য হল, ভোটে খারাপ ফলের পরে দলের অন্দরের ঝগড়াঝাঁটি ও পারস্পরিক চাপানউতোর চার দেওয়ালের মধ্যে রাখা। কমিটি গড়ে দিলে নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ্যে না দেখিয়ে কমিটিতেই যা বলার বলবেন।
দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের অন্য একটি অংশ আবার বলছে, পরবর্তী লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে কংগ্রেস সংগঠনে ব্যাপক রদবদল করতে চাইছেন সনিয়া-রাহুল। কমিটির কাঁধে বন্দুক রেখেই সেই কাজ করা হবে।
সদ্য সমাপ্ত পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটে উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব ও গোয়ায় ফল খারাপ হয়েছে কংগ্রেসের। মুখরক্ষা হয়েছে উত্তরাখণ্ড ও মণিপুরে। কিন্তু হিন্দিবলয়ের অন্যতম প্রধান দুই রাজ্যে বিপর্যয় লোকসভা ভোটের আগে তাদের চিন্তা বাড়িয়েছে। সেই কারণেই অ্যান্টনির নেতৃত্বে শীলা দীক্ষিত ও সুশীল কুমার শিণ্ডেকে সদস্য করে কমিটি গড়েছেন সনিয়া। সেই সঙ্গে হাইকম্যান্ডের তরফে এই বার্তাও দেওয়া হয়েছে যে, এই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতেই সংগঠনে পরিবর্তন করা হবে।
কিন্তু হাইকম্যান্ড যে ইঙ্গিতই দিক না কেন, কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতা-মন্ত্রীদের কার্যত কারও মধ্যেই কমিটি সম্পর্কে কোনও হেলদোল নেই। উল্টে ঘরোয়া আলোচনায় এ ব্যাপারে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে তাঁরা প্রশ্ন তুলছেন, অতীতে অ্যান্টনির কোন রিপোর্টের সুপারিশ রূপায়ণ করা হয়েছে। কংগ্রেস সদর দফতরের কোনও এক কোণায় পড়ে থাকা সে সব রিপোর্টের কপালে রাশি রাশি ধুলোই জুটেছে শুধু।
দলের আর এক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, ১৯৯৯ সালে লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের বিপর্যয়ের কারণ খতিয়ে দেখতে এই অ্যান্টনির নেতৃত্বেই ১১ সদস্যের কমিটি গড়ে দিয়েছিলেন সনিয়া। সেই কমিটি যে সাংগঠনিক দুর্বলতা ও সমন্বয়ের অভাবের কথা বলেছিল, কংগ্রেসের সেই ব্যাধি আজও অব্যাহত। ২০০৮ সালে কর্নাটক বিধানসভা
ভোটে কংগ্রেসের ভরাডুবির পর অ্যান্টনির নেতৃত্বেই ফের একটি কমিটি তৈরি হয়। যার রিপোর্টে অ্যান্টনি বলেন, একেবারে শেষ বেলায় এসে প্রার্থী মনোনয়নের ব্যবস্থা বন্ধ করতে হবে। প্রার্থী মনোনয়ন করতে হবে অন্তত ছ’মাস আগে। কিন্তু সেই সুপারিশই বা মানা হয়েছে কোথায়। রাহুল গাঁধী নিজের উৎসাহে উত্তরপ্রদেশে আগেভাগে প্রার্থী বাছাই করলেও, অন্য যে চার রাজ্যে নির্বাচন হয়েছে, সেখানে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে একেবারে শেষ প্রহরে।
কংগ্রেস সংগঠনকে চাঙ্গা করার পথ খুঁজতে এগুলিই একমাত্র কমিটি নয়। ১৯৯৮ সালে পি এ সাংমার নেতৃত্বে কমিটি গড়া হয়েছিল। আবার ২০০৩ সালে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, রাজস্থানে পরাজয়ের কারণ ও ভবিষ্যৎ পথ নির্দেশের জন্য প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কমিটি গড়া হয়েছিল। এ ছাড়াও মনমোহন সিংহ কমিটি, করুণাকরণ কমিটির নাম কংগ্রেস রাজনীতিতে পরিচিত। কিন্তু কংগ্রেস নেতারাই ক্ষোভের সঙ্গে জানাচ্ছেন, সেই সব রিপোর্ট নিয়ে দলের ওয়ার্কিং কমিটিতে এক দু’দিন আলোচনা ছাড়া আর কিছুই হয়নি।
তবে কংগ্রেস শীর্ষ সূত্রে এ-ও বলা হচ্ছে, দলের সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে অনেক রাঘব বোয়ালকে এ বার সরিয়ে দিতে পারেন সনিয়া-রাহুল। তুলনায় কমবয়স্কদের সেই স্থানে তাঁরা আনতে চাইছেন। কিন্তু পরিবর্তনের এই দায় নিজেদের উপর নিতে চাইছেন না সনিয়া। উদাহরণ দিয়ে কংগ্রেসের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, উত্তরপ্রদেশের ভরাডুবির পর এ বার অবধারিত ভাবেই দিগ্বিজয় সিংহের ডানা ছাঁটা হবে। শুধু উত্তরপ্রদেশে নয়, মধ্যপ্রদেশেও তাঁকে চাপে রাখার সম্ভাবনা রয়েছে। সেখানে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াকে গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক পদ দেওয়া হতে পারে। কিন্তু সেটা যে তিনি করছেন, তা সনিয়া দেখাতে চাইবেন না। বরং দেখানো হবে কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতেই তা করা হল।
উত্তরপ্রদেশে রীতা বহুগুণাকে সরিয়ে জিতিন প্রসাদ বা আর পি এন সিংহের মতো কম বয়সী নেতাকে প্রদেশ সভাপতি করার সম্ভাবনা নিয়েও জল্পনা চলছে কংগ্রেস মহলে।
সূত্রের খবর, এই সব রদবদলের জন্য ইদানীং নিয়ম করে সংগঠনের দায়িত্বে থাকা নেতাদের এক এক করে বৈঠকে ডাকছেন সনিয়া। তাঁদের কৈফিয়ত তলব করছেন। আবার কংগ্রেস নেতাদের নিয়ে নিয়মিত বৈঠক করছেন রাহুল ও আহমেদ পটেল। কংগ্রেসের এক কেন্দ্রীয় নেতা আজ বলেন, দশ জনপথের এই তৎপরতার পর অ্যান্টনি কমিটির আর কিইবা অর্থ থাকতে পারে।
ফলে অ্যান্টনি কমিটি নয়, দশ জনপথের দিকেই আপাতত উদ্বেগ নিয়ে তাকিয়ে কংগ্রেসের তাবড় নেতারা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.