অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ এবং সংবেদনশীল একটি বিষয়ের মীমাংসার জন্য ছুটির দিনেও এজলাসে হাজির হলেন হাইকোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত। এমন ঘটনা একেবারে নজিরবিহীন না হলেও, খুব কমই ঘটেছে। আবেদনকারীদের বক্তব্য শোনার পরে বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত জানিয়ে দেন, কলকাতা বিমানবন্দর এলাকায় আগামী ১৫ দিন বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশন পরিচালিত প্রিপেড ট্যাক্সি বুথ যেমন চলছে তেমনই চলবে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের জারি করা নির্দেশটি তিনি স্থগিত করে দেন।
২০০৩ সালের প্রিপেড ট্যাক্সি বুথ চালানোর জন্য বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের একটি চুক্তি হয়। সেই চুক্তি অনুযায়ী বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশন বিমানবন্দর এলাকায় প্রিপেড ট্যাক্সি বুথ পরিচালনা করবে। এর জন্য ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনকে প্রতি মাসে ৪০ হাজার টাকা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে দিতে হবে। এই ভাবেই এত দিন এই ট্যাক্সি বুথ চলছিল।
গত ২৭ মার্চ রাজ্য সরকার একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানায়, এখন থেকে বিধাননগর কমিশনারেট ওই ট্যাক্সি বুথ পরিচালনা করবে। অ্যাসোসিয়েশন এই বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করে।
ওই মামলার প্রথম শুনানির দিন বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত রাজ্য সরকার, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ও অন্যান্য পক্ষকে মামলার আবেদনের প্রতিলিপি পাঠানোর নির্দেশ দেন। ঠিক হয়, আগামী মঙ্গলবার এই মামলাটির ফের শুনানি হবে। কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী আবেদনকারীরা রাজ্য সরকার ও বিভিন্ন পক্ষকে মামলার প্রতিলিপি পাঠিয়ে দেয়।
কিন্তু নববর্ষের সকালেই বিষয়টি একটি জটিল বাঁক নেয়। ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের কর্তারা জানতে পারেন, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ একটি নির্দেশ জারি করেছেন। যাতে বলা হয়েছে, ১ এপ্রিল থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত অ্যাসোসিয়েশন এই প্রিপেড বুথ চালাতে পারবে। কর্তারা ওই নির্দেশের একটি প্রতিলিপিও সংগ্রহ করেন। তাঁদের আশঙ্কা, মঙ্গলবার হাইকোর্টে মামলার আগেই তাঁদের উৎখাত করে দেওয়া হবে।
এই ঘটনা জানার পর ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় প্রধান বিচারপতির বাসভবনে যান। সেই সময় প্রধান বিচারপতি জি এন পটেল বাড়িতে ছিলেন না। প্রধান বিচারপতির ওএসডি অজয় দাস প্রধান বিচারপতির সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করেন। সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য শুনে প্রধান বিচারপতি বলেন, ওই মামলার বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ মনে করলে আদালত বসাতে পারেন। এর পর ওএসডি বিচারপতি দত্তের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলে বিচারপতি দত্ত জানিয়ে দেন, এ দিনই তিনি মামলাটি শুনবেন।
ওএসডি সুব্রতবাবুকে বেলা ১২টায় আদালতে হাজির হতে বলেন। এর মধ্যে তিনি অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আদালত বসানোর ব্যবস্থা করেন। বেলা ১টা ৩৫ মিনিটে দীপঙ্কর দত্তের এজলাসে শুনানি শুরু হয়। সুব্রত মুখোপাধ্যায় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের জারি করা নির্দেশ বিচারপতিকে জমা দিয়ে বলেন, “নতুন নির্দেশ অনুযায়ী এ দিন রাত ১২টায় আমাদের সময়সীমা শেষ হয়ে যাচ্ছে। সকাল থেকেই পুলিশ আমাদের উচ্ছেদ করতে তৈরি হচ্ছে। এক বার উচ্ছেদ হয়ে গেলে বিচারের আর কোনও মূল্য থাকে না। তাই ছুটির দিনেও আদালতের শরণাপন্ন হতে হয়েছে।”
বিচারপতি তাঁদের বক্তব্য শুনে ‘পাবলিক প্রেমিসেস (ইল্লিগ্যালি অকুপায়েড) অ্যাক্ট’ অনুযায়ী উচ্ছেদ করার ক্ষেত্রেও যে বিধি রয়েছে, সেই কথা উল্লেখ করে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের নির্দেশের উপরে ১৫ দিনের স্থগিতাদেশ দেন। |